তোমার জন্ম,আমার জন্মের ষোল বছর আগে।
তোমার জন্মের ইতিহাস-
তোমার শৈশবের আদিঅন্ত-
তোমার কৈশোরের উচ্ছ্বলতা আমি দেখিনি।
শুনেছি,
তোমার তারুণ্যে আমার আগমন হলেও
বোঝার বয়স আমার তখনও হয়নি।
যখন আমি বুঝতে শিখেছি
তখন তোমার দুরন্ত র্দুবার যৌবন।
ঠিক সেই থেকে প্রতিনিয়ত
আমি তোমার বিরোধী!
হে আমার প্রিয় স্বাধীনতা!
অথচ তুমি আসবে বলে
সকল স্বপ্ন সাধ জলাঞ্জলি দিয়ে
নিজেকে উৎর্সগ করছেলি
আমার অগ্রজ ত্রিশ লক্ষ বাংলাদেশি।
তোমার জন্ম যাতে আনন্দঘন নিষ্কন্টক হয়
তার জন্যে নারীত্বের সবচেয়ে বড় সম্পদ
হারিয়েছিল দুই লক্ষ বোন আর মা।
তাদের লাশ আর সম্ভ্রমের বিনিময়ে
তুমি এসেছ, হেসেছ বড় হয়েছ!
কথা ছিল তুমি এলে
বাংলাদেশের পরতে পরতে দূর হবে লাঞ্ছনা,
নিপীড়িত জনতার মুখে ফুটবে হাসি
থাকবেনা মহামারী, দুর্ভিক্ষ, ত্রাস আর হত্যা।
তোমার যৌবনের প্রায় শেষ,
এখনও ফুটপাতে রাত্রিযাপন করে লাখ মানুষ।
অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটায় অগণিত প্রাণ
নিত্য খালি হয় অসংখ্য মায়ের কোল,
ক্ষুধার তাড়নায় শরীর বিক্রি করে লাখ বোন!
তুমি কথা রাখনি স্বাধীনতা, তুমি মিথ্যেবাদী!
স্বপ্ন ছিল, তুমি এলে থাকবে না রাজনীতির হানাহানি-
দুর্নীতি আর সন্ত্রাস জীবনযাত্রার অনিশ্চয়তা।
আর এখন-
রাজনীতির কাদা ছোড়াছুড়িতে দেশ কালিমালিপ্ত
দুর্নীতি আর সন্ত্রাসে বিপর্যস্ত সবকিছু।
ঘর হতে বের হবার সময় শঙ্কা থাকে নিরাপদে ফেরার।
তুমি ব্যর্থ স্বাধীনতা, তুমি কাপুরুষ!
তোমার অনুপ্রেরণায়
সমস্ত বাংলাদেশি হবে এক।
ছিন্নমূলেরা পাবে ঠাই, বেকাররা কর্মসংস্থান
মুক্তযোদ্ধারা পাবে প্রাপ্য মর্যাদা-
অথচ তোমার নাম ভাঙিয়ে
দেশকে আজ বিভক্ত করে রেখেছে ফ্যাসিবাদীরা।
ছিন্নমূলেরা আরও বিচ্ছিন্ন হয়েছে,
বেকাররা বাধ্য হয়েছে অপরাধের জালে জড়াতে।
পৈতৃক স্বাধীনতার দাবিদাররা
নির্ণয় করে দিচ্ছে মুক্তযোদ্ধাদের আসল-নকল!
আর তোমার জন্য যারা লড়েছিল তারা এখন
কামলা দেয়, রিকসা চালায়, মজুরি খাটে
তোমার লজ্জা করনো স্বাধীনতা?
এতই কি ইতর, নির্লজ্জ তুমি?
তোমার নামে মঞ্চ কাপায় দেশবিক্রির দালাল সুশীলেরা!
দেশপ্রেমিকেরা থাকে নিগৃহীত
তুমি কিছুই করতে পারনা স্বাধীনতা
তুমি পঙ্গু শক্তিহীন!
তোমায় সুসংহতের কথা বলে
স্বার্থলোভী শকুনেরা
ট্রানজিটের জয়গান করে,
তুমি তোমার আসন্ন মৃত্যুর ভয়ে একটু কেদেও ওঠনা,
এতই অপদার্থ ভীতু তুমি!
তোমার ঘাড়ে মাথা রেখে
পরজীবী বুদ্ধজীবীরা লেখে ইতিহাস।
বদলে দেয় স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র!
অতীতের দিনলিপি।
তুমি পারনা প্রতিবাদ করতে, অস্বীকার করতে
এতই মুক, বধির তুমি স্বাধীনতা!
তাই আমি-আমরা আর তোমার পক্ষে নই
আমরা এখন তোমার বিরোধী!
আমরা তোমায় ভেঙে তোমার সিংহাসনে
নতুন এক রাজা, স্বাধীনতা আনব।
যে স্বাধীনতা মিথ্যাবাদী, ভীরু-কাপুরুষ নয়।
যে স্বাধীনতা লজ্জা পায়, দায়বোধ আছে
আছে শক্তি আর প্রতিবাদের ভাষা।
আমরা তার খোঁজ করছি।
তুমি আমাদের শুভকামনা জানিও স্বাধীনতা।
ঢাকা, ২০ মার্চ ২০১০