(৭ জানুয়ারি ২০১১। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে কাটাতারের বেড়ায় আটকে পড়া কিশোরী ফেলানী (১৫) কে গুলি করে ভারতীয় বর্বর বিএসএফ। চার ঘণ্টা কাটাতারে ঝুলে থেকে ধীরে ধীরে মৃত্যু হয় ফেলানীর। পরদিন তার বিয়ে হবার আয়োজন স্থির ছিল.....সেই ফেলানী স্মরণে।)
আমাদের ইতিহাস অনেক, অনেক দীর্ঘ-
অনেক সাফল্যগাথা আর ত্যাগে পূর্ণ।
ইতিহাসের বীরত্বগাথা আর সাফল্য কীর্তন শুনে শুনে
আমাদের প্রজন্ম বড় হয়েছে।
আজকের ইউরোপের অধিকাংশ যখন
জংলী আর জঙ্গলে পূর্ণ-
তখন আমাদের সভ্যতা ছিল।
আজকের আমেরিকায় যখন আলো জ্বলেনি
তখন আমাদের সভ্যতা অনেক সমৃদ্ধ।
আমাদের অর্জন অনেক
যদিও বর্জনও কম নয়।
সেই যে বেনিয়ার দল ডাচ, পর্তুগীজ, ব্রিটিশ, ফরাসি-
আমাদের সম্পদ বেঁচে যারা
নিজেদের অট্টালিকা গড়েছে।
আমরা তাদের বিতাড়িত করেছি
আমাদের স্বাধীনতা রক্ষার্থে।
কালপ্রিট ব্রিটিশদের নখরের নিচে
২০০ বছর থেকেও, আমরাই জিতেছি।
আমাদের তিতুমীর, শরীয়তউল্লাহ, মজনু শাহ
সিরাজউদ্দৌলা, ক্ষুদিরাম এসেছিল।
পেয়েছিলাম নজরুল, জসীম উদদীনসহ কতজন।
পাকিস্তানি হায়েনার থাবা ২৪ বছর উদ্যত থাকলেও
আমাদের ভাসানী, মুজিব, জিয়া ছিল
ছিল অগণিত, দেশপ্রেমিক, মুক্তিযোদ্ধা।
এত, এত অর্জন আমাদের।
সেইসব প্রেরণা, চেতনা এবং দেশপ্রেম দিয়েও
আমরা তোমাকে ধরে রাখতে পারিনি!
পারিনি আনতে, তোমার হাতে মেহেদী দেবার সুযোগ-
তোমার ঝুলন্ত শরীরে মৃত্যু এসেছে ধীরে ধীরে,
তোমার চিৎকার থেমে গেছে, কান্না মুছে গেছে অপেক্ষায়!
কোন বীর বাঙালি ভ্রুক্ষেপ করেনি একবারও।
এখন আমাদের হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতা
অসভ্যতার খোলসে লুকিয়েছে!
বীর বাঙালির বীরত্ব নিঃশেষ হয়ে গেছে!
কেবল বেড়েছে রাষ্ট্রীয় পরকীয়া!
ইতিহাসের সাফল্য, অর্জন আমাদের চোখে আঙুল দেয়নি-
যতটুকু দিয়েছে, সে তোমার ত্যাগ।
যা ইতিহাসের ত্যাগ হিসেবে স্বীকৃতি পাবার যোগ্য।
হয়ত তোমার ত্যাগ নব্য হায়েনার থাবা থেকে-
বন্ধুরূপী জানোয়ারের গুহা থেকে
পরিত্রাণ পেতে আমাদের প্রেরণা দেবে,
তবু তোমার জন্যে আমরা কিছুই করতে পারিনি।
তোমার মৃত্যুর পরও নয়!
তুমি, অনুশোচনাদগ্ধ কোটি তরুণ
বাংলাদেশি ভাইকে ক্ষমা করো বোন।
তোমার অপমৃত্যু আমাদের বিবেককে শাণিত করেছে,
আর আমাদের হারাবার কিছুই নেই।
রাষ্ট্রীয় পরকীয়া, অবৈধ সম্পর্ক ভেঙে
আমরা একদিন এমন বাংলাদেশ গড়ব-
যেন সীমান্তের জানোয়ারদের হাতে
তোমার মত কোন বোনকে আর হারাতে না হয়।
.......
০৫.০২.২০১১, ঢাকা।