জন্ম দিলে স্বপ্ন দিলে জীবন দিলে তুমি
ঐ দূর পথের আঁধার নিভে আলো হল ভুমি।
সেদিন আমি ছোট্ট ছিলাম কান্না সারা রাত্রি,
ঘুম পাড়ানির গল্প বলে করলে সুখের যাত্রী।
হিম শীতল সেই নিশিকালে রেখেছিলে কোলে,
কষ্ট গুলু মুষ্টি করে বুকে তালা দিলে।
মধুমাখা ভালবেসে তোমার চোখে রেখে,
মিষ্টি মুখে খোকা ডেকে গড়লে স্বপন দেখে।
না খাইয়ে আমায় তুমি, খাইয়ে দিলে মিথ্যে বলে,
খেয়ে নিতাম আমি তখন খেলা আর কথার ছলে।
বাবা আমার রিক্সা চালক, পরিশ্রমীও বটে,
গুটি কয়েক পয়সা যে পায়, সারাদিন ভর খেটে।
হঠাৎ একদিন অসময়ে ফিরল বাবা বাড়ি,
কে জানিতো এক অচেনা অসুখে, স্বপ্ন নিবে কাড়ি।
যেদিন থেকে বাবার সুখ, দেইনি তারে দেখা,
সেদিন থেকেই বাঁক নিল হায় মায়ের কপাল রেঁখা।
অর্থ কষ্টে অভাব অনটন আর দুঃখ দুর্দশা,
বাড়িয়ে দিলো ব্যাথা মায়ের, ভাঙল সুখের আশা।
দিগ্বিদিক ছন্ন হারায় মা যে নিরুপায়,
যেখানে পেরেছে জড়ায়ে ধরেছে, মহাজনের দুটি পায়।
নিষ্ঠুর যে এই পৃথিবী জানতো না মা আগে,
চোখের জলে সাগর বানিয়ে ছুটতো স্টিমার বেগে।
এত কষ্টের মধ্যে আবার জন্মিল সুখ পাখি,
মায়ের কোলে দুনিয়া জোড়া মায়াবী বোন আঁখি।
কিভাবে কাটবে জীবন এখন দুঃখে মায়ে কাদ,
চোখের জ্বলেই সদা ভাসতো কাটতো দিবা রাত।
একদিন এক আত্নীয় এসে ধরল মাকে ক্ষেঁপে,
টাকা নাকি পাওনা কিছু নেবে পাল্লায় মেপে।
মা বললো আর ক'টা দিন ধৈর্য ধরো মাগো,
কথা দিলাম তোমার টাকার কড়ায় হিসেব দেবো।
কে শুনে কার কষ্ট কথা মা যে অসহায়,
শেষ পর্যন্ত শোধলো মায়ের বিয়ের গহনায়।
এদিকে বাবার অসুখ আরো বেড়ে গেলো সীমা ছেড়ে,
মায়ের আরজ হে বিধাতা কষ্টহীন করো মোরে।
মা ছিল মোর গরীব ঘরের, বুনিয়াদি নানা ভাই,
ক্রোঁশ দেড়েক পথ হেটে হেটে, পেলো যে কিছুটা ঠাঁই।
এক বিড়ে পান কিনলো , আর দশ টাকার সুপারী,
বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিক্রি করবে , ছাড়ল জীবন তরী।
পরশ মাখা সেই আলতো পায়ে লাগলো মায়ের কাদা,
ভোর হতে না হতেই উঠতো মায়ে, ছুটতো বাড়ি সদা।
পেটের ক্ষুধা পেটে রেখেই, থাকতো হাসি মুখ,
বুঝতে দিতো না কখনোই মায়ে, পাই যদি বুকে দুঃখ।
এমন করে দিনগুলো মায়ের কাটতো বড় কষ্টে,
দারিদ্রতা জোর করে হায় ধরলো আষ্টেপৃষ্টে।
অবুঝ ছিলাম বুঝিনি তাই মাগো তোমার ব্যাথা,
মায়ের কষ্টে কাঁদিত সদা গাছের কচি পাতা।
মানুষের বাড়িতে কাজ করতো কখনো ধান ঝেড়ে,
অল্প অল্প ধান চাল দিয়ে বিদায় করতো তেড়ে।
এই টাকাতে পথ চলা দায় ঔষুধ তো পরের কথা,
পান্তা ভাতও জুটতো না মুখে বাড়তো পেটের ব্যাথা।
যখন যা পাইতো মায়ে খাইয়ে দিতো মোরে,
বলতাম যখন, খাও না মা, বলতো মায়ে পরে।
সেই কথা যে মিথ্যা ছিল জানতাম না আমি কখনো,
দুঃখীনি সেই মায়ের জন্য মনটা কাঁদে এখনো।
তোমার কাছে প্রার্থনা মোর হে খোদা দয়াময়।
আমার মায়ের দুঃখ কষ্ট নাহি যেনো রয়।
কাব্যগ্রন্থ(অপেক্ষার শেষ ট্রেন)