বরিশালের শ্রীরামকাঠী অদূরে এক কাঁঠালতলা গাঁয় -
উদ্দেশ্যহীন হঠাৎ ভ্রমণে তিনে গিয়েছিলাম সেথায়;
ছটু চন্দন আর নিরা-নির্ঝর সঙ্গ দিয়েছিল মোরে,
পৌঁছাই সেথা দিবস অন্তে সন্ধ্যা ঠেকেছে ঘোরে ।
আস্রিত এক কলেজ পড়ুয়া পড়ায় কাচারি ঘরে ,
বলে দিল সে দেখা হতে পারে সায়াহ্নের কিছু পরে;
অতঃপরে সেই সুক্ষণ আসিল গেলাম সাধুর দ্বারে,
রেগে মেগে রুক্ষ উদ্ভট সুরে এই সন্ধ্যাটায় কে রে ?
নির্ঝর বলে বহুদূর থেকে এসেছি আপনার দর্শনে,
এস তবে কি ব্যাপার ? হেন সন্ধ্যার লগনে;
প্রনিপাত করি একে একে সবে মিষ্টতা তবু নাই ,
কি আর করি মুড়ি-মোয়া খেয়ে সময়টা কাটাই ।
পরিচয় চলে একে একে পরে অনুমতি পেতে চাই-
কিছু প্রশ্ন মনে চেপে চেপে রুদ্ধশ্বাসে মরে যাই যাই ,
বল তবে আর দেরি কেন কর শুনি তোমার জিজ্ঞাসা-
কত সালে আপনি সন্ন্যাস নিলেন মনে কি ছিল আশা ?
সাতষট্টিতে করি স্নাতক আমি একাত্তরে নামি যুদ্ধে-
চুয়াত্তরে নেই সন্ন্যাস আর আশা শুনে ওঠে ক্রুদ্ধে;
জানতে চাই সেটা স্বেচ্ছায় নাকি ক্ষণ আবেগের তরে ?
সাধনায় নামি বহু ভেবে শেষে সুবিবেচনার পরে ।
সকাম নাকি নিষ্কাম কোন সাধনায় রত ?
বুঝলাম না কি বল তুমি আজব প্রশ্ন যত;
ফলাকাঙ্খায় নাকি ফলহীনে এইতো জানতে চাই-
অত বুঝি না জীবন আমার ঈশ্বরে সমর্পিত ভাই ।
ইচ্ছে আছে কি মোক্ষলাভের এত সাধনার শেষে ?
মানে কি এসব প্রশ্নের হে ভ্রাতা আমার আলয়ে এসে-
মোক্ষলাভ মানে ঈশ্বর প্রাপ্তি মুক্তির যার লোভ
হতে পারে লোভ নয় তবে ঈশ্বরে যার নেই ক্ষোভ ।
হোল কি আপনার মোক্ষলাভ সাধনার স্রোতে ভেসে ?
কেন বলব ? কে তুমি বৎস ? রেগে ওঠে অবশেষে;
ঘরে ফিরে গিয়ে মন দাও তুমি অধ্যয়নের কাজে ,
অনেক কিছু শেখা আছে বাকি না পর কথাও লাজে ।
নির্ঝরে বলে গান চলে তো ? বিয়ে করেছ তো ভাই ?
গান চলে তবে একাডেমীতে নয়, বিয়ে করা হয় নাই;
এত ভাল কাজ আজ কেন বাকি দেরি কেন শুভ কাজে ?
আশীর্বাদ দিন হয়ে যাবে সব সকাল সন্ধ্যা সাজে ।
কহিলাম আমি তেল মারি না বাবা-মায়ের আশিস মুখ্য,
অজ্ঞানী তুমি অবান্তর কথা এটাই অযোগীর দুঃখ ;
রেগে মেগে বলে বাবা-মা দেয় শুধু জৈবিক আশীর্বাদ ,
যোগীর আশিসে দিয়ে যেতে পারে অমৃতত্বের স্বাদ ।
রাগ ওঠে আমার তক্ষুনি তুঙ্গে বললাম অন্য ঢঙ্গে,
অনেক জ্ঞানী মহান যোগী একটা পুস্তক নিন সঙ্গে;
মা-বাবা নিয়ে অধ্যয়ন করুন অনেক বাকি শিখতে-
বলল এখন একাত্তরে হয়ত আছে কমতি জ্ঞানেতে ।