হাজার বছর ধরে স্বপ্নের রঙতুলিতে আঁকা
প্রিয় মুখখানি এখন আমার পাশে শুয়ে
ছোট হাত দুটো শূন্যে ছুড়ে আমাকে খোজার চেষ্টা করছে ।
বসন্তের ঘোড়াটা ব্যস্ততম দিন গুলোকে পার করে
অশ্বত্থের ছায়ায় ঝিমচ্ছে ।
গ্রীষ্ম গেল , বর্ষা গেল, বছর ঘুরে আবার
গাছে নতুন ফুল ফুটল
আমার প্রিয় মুখখানি গুটিগুটি পায়ে চলতে শিখল ।
তারপর কোন এক হেমন্তের সন্ধ্যায়
আমাকে মা ডাকল
বুকের মাঝখানে জড়িয়ে ধরলাম
নিষ্পাপ মুখটাকে ।
তারপর আরো কিছু শীত কাটল
আমার প্রিয় মুখখানি এখন “ অ-আ , ক-খ ” বলতে পারে
লিখতে পারে মাতৃভাষায় কয়েকটা লাইন
একদিন দুপুরে ধুলো মাখা একখানি পেপার
কোথা থেকে তুলে এনে বলল – “ মা এটা কি ? ”
আমি একগাল হেসে বললাম – ওটা স্ট্যাচু অব লিবার্টি ।
বন্ধুত্বের গভীরতা বাড়াতে ফ্রান্স ওটা আমেরিকাকে দিয়েছিল
সে কি বুঝল কে জানি , কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল –
“ ও ওভাবে দাঁড়িয়ে কেন ?”
আমি বললাম – তোমার আব্বু বাড়ি ফিরলে তুমি যেমন অভ্যর্থনা করো
সেভাবে ও দাঁড়িয়ে থেকে নাভিকদের অভ্যর্থনা জানায় ।
তারপর একদিন যীশু খ্রিস্টের ছবি নিয়ে হাজির
“ মা এ কেন এভাবে দাঁড়িয়ে ?”
আমি বললাম উনি সবাইকে শান্তি দিতে চেয়েছিলেন
তাই কিছু দুষ্টু লোক ওনাকে ওভাবে ক্রুশবিদ্ধ করে ।
তারপর বেশ কিছু দিন কেটে গেল
একদিন সন্ধ্যে বেলা আমার হাতে বই দেখে বলল
“মা এই দাদুটা কে ?”
আমি বললাম – কি নাম লেখা আছে পড়তো দেখি
-কাল মার্কস
-এই দাদুটা একটা ভালো জায়গায় পৃথিবীকে নিয়ে যাবে বলেছিল
তুমি যাবে ভালো জায়গায় বেড়াতে ?
আমার প্রিয় মুখখানি একটা উজ্জ্বল হাসি নিয়ে
বিছানার মধ্যে লাফাতে থাকে
তারপর হটাৎ দৈনিক পেপারটা হাতে নিয়ে পড়তে চেষ্টা করে
সেমি কলনের মধ্যে মতা অক্ষরে লেখা শব্দটা বুঝতে না পেরে
প্রশ্ন করে – “মা ধর্ষণ কি ?”
আমি চমকে তাকাই আট বছরের দিকে
আমার শিরদাঁড়া দিয়ে ঠাণ্ডা রক্তের স্রোত
তখন বয়ে চলেছে দ্রুত গতিতে
কাঠের পুতুলের মতো আমি বসে থাকি
আর “আট বছর” জানতে চায় – ‘মা , ওমা ধর্ষণ কি ?”