আয় খারিজী আয় তামিমি
আয় রে মুজলাম খুনি !
গোমরাহি নয়, চাই ইনসাফি!
জোর 'লা হুকমা' ধ্বনি!
প্রান ভোমরা রসাতলে
এ যুধের বেসাতি
ওরে! দ্যাখনা সং ঐ জং জামালে
সাজে যুব যুবতি!
ধড় গেলো দূর চন্দ্রগ্রহে
সে বোধের বরাতি
ওরে! সাদা মেঘের ধুম্রজালে
দেশ হইল পোয়াতি !
নবুওয়্যতের ঐ সিলসিলা
আজ পাপের জামিনদার
ওরে! কন্যা জায়া খুস দিল সবি
এ খুনের ভাগিদার!
নওমুসলিমা ঘোড়্ সাওয়ারি
তার দরাজ বুলান্দার
ওরে! নাহরাওয়ানের ওহাব কইরে
কই রে আজ জুবায়ার!
নয় খারিজি কই আজ তোরা
মোর দেশ ধরম মরে
ওরে! আয় মেখে দি বিষ নীল কড়া
তোর তূণ তলোয়ারে!
খুনে আস আজ আলী হযরত
নিশাবসান ভোরে!
ওরে! ইসলাম যে দীন- মৃত্যু শয্যায়
হীন ফতয়ার গোরে!
আয় খারিজী আয় তামিমি
আয় রে মুজলাম খুনি !
গোমরাহি নয়, চাই ইনসাফি!
জোর 'লা হুকমা' ধ্বনি!
ধরম এ দেশ সবই আমারি
তোল মাতম ফের গগন বিদারী
বুক জ্বলা আজ আগুন নিহারী
খুনে আস ঠগ জাত-কাণ্ডারী!
--১২/০৪/২০১৩ ইং
কবিতাটি নিয়ে কিছু কথাঃ
খারিজীরা ইসলামের প্রাথমিক যুগে খেলাফতি
সিলসিলার ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করে। শিয়ারা
আলীকে প্রথম ইমাম মানে এবং আবু বকর, উমর ও
উসমান কে অস্বীকার করে। আমরা সুন্নীরা খেলাফতি
সিলসিলাকে সম্মান করি। খারিজীরা আলীর সাথে
বিরোধ মতপার্থক্যের পরিনতিতে সব খেলাফতকেই
অস্বীকার করে। তাদের একটি স্লোগান হল কোরানের
আয়াতঃ 'লা হুকমা ইল্লাল্লাহ' অর্থাৎ
'আল্লাহ ছাড়া কোন হুকুমকারী নাই'।
এই আয়াতের ব্যাখায় তারা বলেঃ খলিফারা আল্লাহর
প্রতিনিধি নয়। সৎ ন্যায়বান ও বিবেকবান যে কেউই
খেলাফত দাবী করতে পারে! আমি অবাক হই, সেই
যুগে কত দুঃসাহসী হলে, কত সোচ্চার হলে,
প্রথা-জাতি-গোষ্ঠীর ক্ষুদ্রতা থেকে বের হয়ে তারা
এমন কথা বলার সাহস দেখিয়েছিল!
খেলাফতের সিলসিলার ব্যাপারে খারিজীদের মত
হলোঃ যে কেউই মুসলমানদের নেতা, কাওমের
নেতা হতে পারে, এবং খারিজী এবং কাওমের নেতা
বেইমান হলে বিদ্রোহ জায়েজ!
খারিজিরা ইসলামের প্রথম ফিতনা যুদ্ধ, সিফ্ফীনের
যুদ্ধে প্রথমে আলী (রাঃ) এর পক্ষে ছিল। কিন্তু
মুয়াবিয়া এর সাথে আলী মধ্যস্থতা করতে রাজি
হওয়ায় ওরা বিদ্রোহ করে। আলী ওদের কিছুকে
বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিজের মতে নিয়ে আসতে পারলেও
সবাইকে পারেন নাই। পরবর্তীতে বাগদাদের অদূরে
নাহরাওয়ানের যুদ্ধে আলী খারিজিদের সাথে শেষ যুদ্ধ
করেন এবং প্রায় সবাইকে কতল করে, কেবল ৯ জন
ছাড়া। ওই নয় খারিজি যাদের নেতা ছিলঃ আব্দুল্লাহ
ইবনে ওহাব পড়ে বসরা এলাকায় গিয়ে অনেককে
তাদের দলে ভেড়ায়।
পরবর্তীতে ওরা আরও উগ্রপন্থি রূপ ধারণ করে এবং
আলী, মুয়াবিয়া আর আমর ইবন আল আস এই তিন
নেতাকে খুন করতে মনস্থ করে। তাদের মতে,
ইসলামকে বিভক্তির জন্য এই তিন জন এবং এদের
ক্ষমতার মোহ অনেকাংশ দায়ী। ইবন মুজলাম উপর
আলী কে, আলহুজ্জাই আল তামিমির উপর
সিরিয়ার গভর্নর মুয়াবিয়াকে এবং আমর ইবন বকর
আল তামিমির উপর মিশর জয়ী আমর ইবন
আল-আসকে খুন করার দ্বায়িত্ব দেয়া হয়। এই
তিনের মধ্যে মুজলামি কেবল আলীকে খুন করতে
সমর্থ হয়। ইসলামের শেষ খলিফা আলী কোন প্রহরী
কিম্বা দেহরক্ষী নিয়ে থাকতেন না। অনেক
ইতিহাসবেত্তা বলেন, মুয়াবিয়া ও আমার ইবনে
আল-আস খারিজীদের এই গোপন হত্যার ব্যাপারটা
জানতেন এবং উপরের তিনজনই আসলে আলীকে
খুন করার জন্য ঠিক করা হয়।
৪০ হিজরীর ১৯শে রমজান কুফা মসজিদে ফজরের
নামাজ পড়া অবস্থায় মুজলাম তাকে বিষাক্ত তলোয়ার
দিয়ে আঘাত করে। দুই দিন পর ইসলামের জ্ঞানের
দরজা ইমাম আলী (রাঃ) মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুর
আগে আলী তার হত্যাকারী মুজলামকে মাফ করে
দেন। আলীকের আঘাত করার পর মুজলামকে আটক
করা হয়, সবাই খুন করতে চাইলে, আলী বলেন,
আমি বেঁচে গেলে মুজলামকে তোমরা খুন কর না,
কিন্তু মরে গেলে ওকে ঠিক সমপরিমাণ আঘাত দিও,
একটুও বেশী না বা একটুও কম না! আলী (রাঃ) তার
নিজের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেনঃ
"আমার ব্যাপারে দুই ধরনের লোকের অবশ্যই
ধ্বংস অনিবার্য, এক, যারা আমাকে অন্ধের মত
ভালবাসে এবং তার সে ভালবাসা তাকে সত্য
থেকে দূরে নিয়ে যায়, দুই, যার আমাকে না বুঝে
ঘৃনা করে এবং তাদের সে ঘৃনা তাদেরকে সত্য
থেকে দূরে নিয়ে যায়, পরিশেষে তারা আমাকে
আমার অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চায়। "
আজকে দেশে যে দুর্দিন চলছে, তা ইসলামের সেই
প্রারাম্ভিক ফিতনার দিনগুলোর মতই। একমতের
আন্ধা বিশ্বাসী আরেক মতের বিরুদ্ধবাদীদের বিরুদ্ধে
ঘৃনার বিষবাস্প ছড়াছে। জনজীবন অতিষ্ঠ! এতে
দেশের কোন উপকারই হবে না। পরমতসহনশীলতা
নেই, পরনিন্দা সহজিয়া যেন।
আজ যুক্তির চাইতে ভক্তি বড়, প্রজ্ঞার চাইতে আজ্ঞা
বড়! এর দ্রুত অবসান হওয়া দরকার!
খারিজিরদের মত কারও কাছে তাই কবির ফরিয়াদ
এ থেকে মুক্তি দেবার জন্য! 'খারিজী বন্দনা'
কবিতাটি লুপ্ত খারিজি মতবাদ/আন্দোলনকে প্রেইজ
করে লেখা রূপকার্থ কবিতা।
মূল পোস্ট পাবেন এই লিঙ্কেঃ
https://www.facebook.com/photo.php?fbid=10200587600506379&set=a.1137475350979.20893.1050232977&type=1