আমি ঝঞ্ঝার বুক চেরা বজ্রনাদ,
জ্বালাই আলো অগ্নিস্ফুলিঙ্গে।
স্বপ্নের সোপান ডিঙিয়ে চলি,
সংগ্রাম আমার রক্ত তরঙ্গে।
আমি নির্ভীক প্রত্যয়ের আগুন,
সত্য পথের দীপ্ত অভিযাত্রী।
অন্যায়ের শৃঙ্খল ভাঙা হাতুড়ি,
সত্যের পথে ছড়াই জ্যোতি।
আমি বাঘের হিংস্র থাবা,
ছিনিয়ে নেই নিজ অধিকার;
আমি গনগনে জ্বলন্ত সূর্য,
পুড়ে করি সব ছারখার।
আমি সিংহের ক্রুদ্ধ গর্জন,
সত্যের পক্ষে ইস্পাত কঠিন!
আমি শোষকের স্বপ্নভঙ্গ,
দুখিনী মায়ের হাসি অমলিন।
আমি যুদ্ধের দামামা বাজাই,
অন্যায়ের বিরুদ্ধে করি আহ্বান।
আমি স্বাধীনতার দুর্জয় নিশান,
সময়ের বুকে লিখি বীরগাথা গান।
রণক্ষেত্রে সৈনিকের বর্ম আমি,
শত মৃত্যুঘাতেও আমি অটল;
আমি শিশুর নিষ্পাপ দৃষ্টি,
গভীর মমতায় বিহ্বল।
আমি প্রেমের প্রথম চুম্বন,
হৃদয় গভীরে জাগাই তরঙ্গ;
আমি বিরহের অশ্রু ফোঁটা,
হৃদয়ে ঠুকে দেই অগ্নি স্ফুলিঙ্গ।
আমি শিক্ষকের ধৈর্য শক্তি,
মানুষ গড়া শিল্পীর দিশা;
আমি জ্ঞানের শ্বাশত দীপশিখা,
খাপ খোলা অসির ভাষা।
আমি কবির কলমের মসি,
সাদা পাতায় গড়ি নতুন স্বপ্ন;
আমি শিল্পীর তুলির আঁচড়,
রঙে রঙে রাঙাই নতুন লগ্ন।
আমি কৃষকের লাঙ্গলের ফলা,
পাথর কর্ষে ফলাই ফসল ;
আমি ক্ষেতের সোনালি হাসি,
রবি শশির আলোকে ঝলমল।
সবুজে সবুজে শ্যামলিমায়,
আমি প্রশান্তির সুখের নীড়;
আমি উত্তাল নদীর প্রবাহ,
সাগর মন্থনে আমি অস্থির।
আমি শিশুতোষ হাসির কোলাহল,
নবজাতকের প্রথম ক্রন্দন;
আমি মায়ের আঁচলের গন্ধ,
প্রতিটি ধুলিকণায় আমার বন্ধন।
আমি চাঁদের রূপালী আলো,
রাতের নিঃস্তব্ধতায় গাই গান;
আমি মরুর তেজী ঘোড়া,
দুরন্ত বাংলা মায়ের সন্তান।
আমি মাটির গভীরে লুকানো শিকড়,
সবুজ পাতায় দেই প্রাণের দোলা;
আমি বৃষ্টির ফোঁটায় মাটির গন্ধ,
প্রকৃতির বুকে আমি অনন্ত লীলা।
আমি মহাকাশের ঝলমলে ছায়াপথ,
বাতাসে বয়ে আনি নতুন আশা;
তূণীর নিশানা ভেদি তীর,
নিজ আস্থায় রাখি ভরসা।
আমি মাঝির হাতের বৈঠা,
স্রোতের প্রতিকূলে এগিয়ে যাই;
আমি সাহসী নাবিকের পাল,
আন্দোলিত তরঙ্গে স্বপ্ন সাজাই।
আমি পাহাড়ের অটল শিখর,
সমুদ্রের গর্জন দিগন্তজোড়া।
আমি ঝর্ণার অশ্রু-স্বেদ,
অবিরাম বহমান কাব্যের ধারা।
আমি কপোত-কপোতীর বাকুমবাক,
আমি প্রেমের রঙিন উচ্ছ্বাস;
আমি সদ্যোজাত নিস্পাপ শিশু,
প্রতিকূল পরিবেশেও হইনা হতাশ।
বাইজির পায়ের নুপুর আমি,
নৃত্যের ঝুমুর ঝুমুর তালে;
আমি ফণায় দুলি হিসহিস,
নীল বিষ ছুঁড়ে দেই ছোবলে।
বুভুক্ষুর নারি ছেড়া আর্তনাদ,
কৃষাণ মুজুরের ঝরা ঘাম;
দিনের আলোয় বজ্রপাত আমি,
ভয়ে শাসক জপে ইষ্ট নাম।
আমি জমে ওঠা ঘন মেঘ,
বজ্রকণ্ঠে তুলি শ্লোগান;
শুভ্র থেকে হয়ে যাই কালো,
ফাঁসির মঞ্চে গাই প্রাণের গান।
আমি ঈশান কোনের মেঘের গর্জন,
বিদ্যুতের ঝলকানি রাতের আঁধারে।
আমি বিপ্লবী অগ্নি শিখা,
নতুন সূর্য জ্বালাই ধ্বংসের পরে।
আমি চিরন্তন নদীর স্রোত,
সমুদ্রের লুকানো গহীনে;
আমি প্রাচীর ভাঙা যোদ্ধা,
অটল নির্ভীক স্বীয় মননে।
আমি সীমান্ত পথের যাত্রী,
সর্বত্র ছড়াই কল্যাণ বাণী।
আমি দুর্জয় বাঁধার দেয়াল,
সকল অপশক্তিকে রুখতে জানি।
আমি শ্রাবণের মেঘজল ধারা,
রুদ্ধশ্বাসে আনি জীবনকে;
আমি আশার দীপ্ত জ্যোতি,
আঁধারে প্রদীপ জ্বালাই পলকে।
রূপকথার সেই ফিনিক্স আমি,
মৃত্যুর আগেই উড়ে যাই;
আমার চোখে রাখলে চোখ,
সবকিছু পুড়ে করি ছাই।
আমি সময় চাকার ঘূর্ণন,
অতীত থেকে ভবিষ্যতে যাই বয়ে;
আমি স্মৃতির পাতায় লুকানো গল্প,
স্মরণ করাই ইতিহাসবেত্তা হয়ে।
আমি মহাকাশের দীপ্তময় নক্ষত্র,
অন্ধকারে জ্বালাই আলোর মশাল;
যুগে যুগে মানবতার অনন্ত আশা,
আমিই নতুন দিনের উদিত সকাল।
আমি কবিতার ধ্রুপদী ছন্দ,
প্রেম, দ্রোহ, মানবতার বাণী;
আমার শব্দে বাঁচবে আগামী,
যতদিন রবে প্রাণের জাগরণী।
আমি কবি, কবিতায় জীবন্ত ছন্দ,
শব্দের ছন্দে গড়ি ভালোবাসা;
পাঠক কূলে বাঁচব চিরকাল,
এ আমার চির শ্বাশত আশা।