সাথী, আমি বহুকাল তোমাদের জন্য
চাঁদ,তারা , বসন্তের স্বপ্ন বুনেছি
রূপ আর প্রেমের গান গেয়েছি
আকাঙ্ক্ষার মহল সাজিয়ে দিয়েছি
আমি তোমাদের গায়ক , তোমাদের জন্য
যখনই এসেছি নতুন গান এনেছি ।
আজ আমার জীর্ণ-ছিন্ন বসনে
যাত্রাপথের ধুলো ছাড়া কিছুই নেই
আমার বাদ্যের বুকে গানের তাল বন্ধ হয়ে আসছে,
তান আজ চীৎকারে চাপা পড়েছে,
গানের সুর হিক্কায় পরিণত হয়েছে-
আমি তোমাদের গায়ক, গান নই
আর গানই যে আমার রচনা
বন্ধু, তোমরা তা ভস্ম করে দিয়েছো ।
আর আমি আপন ভগ্নবাদ্য হাতে
শীতল লাশের ভীড়ে তাকিয়ে রয়েছি
আমার চারপাশে মৃত্যুর বিভীষিকা তাণ্ডব করছে,
মানুষের পশুত্ব জেগে উঠেছে,
বর্বরতার নৃশংস উপাস্য
তার অপবিত্র মুখ খুলে
রক্ত খেয়ে খেয়ে গর্জে উঠছে ।
শিশুরা মায়ের কোলে সিঁধিয়ে রয়েছে
সতী আজ নগ্ন , অস্থির
সর্বত্র আর্তনাদে ভরা ।
আর আমি এই ধ্বংসের তুফানে
আগুন আর রক্তের প্রচণ্ডতায়
নতমস্তক আর পরাজিত নিবাসের ধুলোভরা রাস্তায়
আপন গানের ঝোলা নিয়ে
দ্বারে দ্বারে ফিরছি ।
আমায় শান্তি আর শিষ্টাচারের ভিক্ষা দাও
আমার গানের লয় , আমার সুর , আমার সুপ্ত ভাবনা
আমার আহত ঠোঁটে ফিরিয়ে দাও।
বন্ধু, আমি বহুকাল তোমাদের জন্য
বিপ্লব আর বিদ্রোহের গান গেয়েছি,
অচেনা রাজত্বের জুলুমের ছায়ায়
আত্মত্যাগের সুপ্ত ভাবনা ভরেছি
আর ঐ প্রভাতের প্রতীক্ষায় থেকেছি
যখন এই দেশের কতো আত্মা মুক্তি পাবে।
আজ পরাধীনতার শিকল ছিঁড়ে গেছে।
এই দেশের মাটি ও জল , ছাদ ও দ্বার
অচেনা গোষ্ঠীর অধিকার ফলানো দুর্ভাগ্যের
ছায়া থেকে মুক্ত।
ক্ষেত আজ সোনা ফলাতে ব্যস্ত
পর্বতমালার বুকে প্রচণ্ডতা
ইঁটপাথর জেগে উঠেছে ;
ওদের জাগা চোখে স্বপ্ন
ওদের স্বপ্নকে সৃষ্টির রূপ দাও।
দেশের প্রান্তর, ঘাটি , ক্ষেত
মহিলা আর বাচ্চারা
হাত বাড়িয়ে ভিক্ষার প্রতীক্ষায় –
ওদের শান্তি আর শিষ্টাচারের ভিক্ষা দাও,
মায়েদের ঠোঁটের হাসি
বাচ্চাদের খুশী ফিরিয়ে দাও,
দেশের আত্মাকে জীবণ ফিরিয়ে দাও
আমায় আমার সৃষ্টি , আমার লয় ফিরিয়ে দাও
আমার সুর ফিরিয়ে দাও, আমার গান ফিরিয়ে দাও।
আজ সারা বাতাবরণ ভিখারি
আর আমি এই ভিখারি বাতাবরণে
আমার গানের ঝোলা নিয়ে
দ্বারে দ্বারে ফিরছি।
আমায় আমার হারানো বাদ্য দাও
আমি তোমাদের গায়ক, তোমাদের জন্য
যখনই আসবো, নতুন গান আনবো ।।