ছোটবেলার নিজ গঠন মনে নেই,
তবে মায়ের কক্ষে ফ্রেমে বাঁধা
ছবিটি চোখে ভাসে।
খেলনা হাতে হাসি মুখের ছোট্ট এক শিশু।
মাকে আঁচল দিয়ে স্নেহ ভরে
বহুবার সে ছবি মুছতে দেখেছি।
মাঝে মাঝে ছবি থেকে মুখ তুলে
আমাকে দেখে মুচকি হাসতেন;
কখনো জড়িয়ে ধরে কখনো হাত দুটি নিয়ে
আদর করতেন।
হয়তো হাতের রুপান্তর তার চোখে ভাসতো।
ছবিটি আর আগের জায়গায় নেই,
আছে হয়তো কোথাও
কিন্তু কেউ মুছে না সেভাবে,
কেউ আর তাকিয়ে থাকেনা।
মা বেঁচে নেই, থাকলে হয়তো
আজও হাত দুটি ধরতো।
বড্ড ইচ্ছে করছে হাতের শেষ রুপটি দেখার।
সমস্ত শক্তি দিয়েও চোখের সামনে
আনতে পারছিনা হাতগুলোকে।
শেষ দেখা কুকড়ানো চামড়ার
শীর্ণ গঠনটি মনে পড়ছে।
ফ্রেমে বাঁধা ছবিটির সাথে
শেষবার মিলিয়ে দেখার ইচ্ছেটা
হয়তো আর পুরণ হবেনা।
আপনজন বলতে পাশে থাকা সেবিকা,
তাকেও ইচ্ছের কথা বলতে পারছিনা।
অন্তরে সৃষ্ট কথাটি হারিয়ে যাচ্ছে
শব্দে পরিণত হওয়ার আগেই।
বিধাতা কথা বলার অধিকারটিও নিয়ে গেছেন;
মা থাকলে হয়তো চোখে তাকিয়েই বুঝতে পারতো।
আজ বাবার কথা খুব মনে পড়ছে।
আমার সামান্য অসুখেই বাবা বাইরে যেতেন না,
একটু পরপর কপালে হাত দিতেন, আদর করতেন
মন ভালো রাখতে গল্প শুনাতেন।
কপালটা আজ আবারও চাইছে সে পরশ।
অশ্রুতে বাবার ছবিটিও ঝাপসা হয়ে আসছে;
হাত দিয়ে চোখটিও মুছতে পারছিনা।
চোখ মেলে থাকার অধিকারটুকুও
হয়তো চলে যাবে।
গড়িয়ে পড়া অশ্রু ফোঁটাটির উষ্ম ছোঁয়া পেলাম,
সেবিকার টিস্যুতে মুছে গেল সে জল।
কেউ বুঝলনা এ জলের আঁকুতি;
বাবা থাকলে হয়তো সে ভাষা পড়তে পারতো।
বুজে থাকা চোখে দেখতে পাচ্ছি
দীর্ঘ জীবনের প্রিয় সঙ্গিনীকে।
মুহুর্তেই ভেসে উঠছে লাল বেনারসি থেকে
সাদা কাপড়ে মুড়ানো মুখটি।
আমাকে একা করে চলে গেছে সে ও।
আজ থাকলে হয়তো পরম ভালোবাসায়
সান্তনার বানী শুনাতো।
তার দেহাবশেষটি হয়তো
ডেকে চলেছে আমায়,
সে আহবান ফেলতে পারিনা আমি।
যেতে হবে তার কাছে;
খুব শীঘ্রই দেখা হবে হয়তো।
১১ নভেম্বর ২০১৯, শ্যামলী, ঢাকা।