"বহুকাল দুঃখ সেবি      নিরিখিল লক্ষ্মীদেবী
        উদিলা জগৎ মাঝে অতুল সুন্দর।
সেই সমুদ্রের তীরে       শীর্ণদেহে জীর্ণচিরে
        খ্যাপা খুঁজে ফিরে পরশ পাথর।।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত কবিতা "পরশ পাথর"। তাই দুইটি পঙক্তিতে অনেক কিছুই বলে যায়।
   কিন্তু আমার আলোচনার বিষয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও নয় আর তার লেখা "পরশ পাথর " কবিতাটিও নয়। তবে যে কবিতাটি সম্পর্কে আলোচনা করতে যাচ্ছি এই কবিতার সাথে ভাব গত অনেকটা মিল আছে। আমার আলোচনার বিষয় বাংলা কবিতা আসরের শ্রদ্ধেয় কবি সুমিত্র দত্ত রায় মহাশয়ের "পরশ পাথর" কবিতাটি।
       আমরা কবিতাই একটি ৭২ বৎসরের রোগ জীর্ণ খ্যাপী বুড়িকে পায় যিনি জীবন জটিলতা, সংসারের ভাগাভাগি,নানারূপ দীন দৈন্যদশা সম্মুখীন হয়েছেন। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। এখন সাংসারিক টানাপোড়েনে অপুষ্টিজনিত জীর্ণদশার চিকিৎসা পর্যন্ত করতে অসামর্থ। সন্তানেরা দায় ঝেড়ে জবাব দেয়। কবির ভাষায়-"সন্তান সংসার দেখে, না মা কে দেখে"। তাই বুড়ি সারা জীবনের অর্জিত ধূলো আবর্জনার আস্তাকুঁড় ঘেঁটে চলেছেন যদি মেলে উপযুক্ত দায়িত্ববান পরিবার পরিচালকের ন্য্য় পরশ পাথর।
          
             আপাতদৃষ্টিতে এক বুড়ির দৈন্যদশার কাহিনী হলেও অন্তর্নিহিত বিশাল অর্থ বহন করে এই কবিতাটি।
         অসংখ্য শহীদদের জীবনের বলিদানে অর্জিত ভরত বুড়ির স্বাধীনতার ৭২ বৎসরের পূর্তিতে এমনই এক পরশ পাথর খুঁজছেন শ্রদ্ধেয় কবি সুমিত্র দত্ত রায় মহাশয়। কারণ ৭২ বৎসর ধরে যিনিই বা যারাই দেশ পরিচালনার ভার নিয়েছেন তাঁরা কেউই দেশের উন্নয়নে কিছুই করেন নি। উপরন্তু দেশের অর্থ সামগ্রীকে নিজে আত্মসাৎ করতে লেগে পড়েছেন। ৭২ বছরের স্বাধীনতায় দেশে যদি কিছু  মাত্রাতিরিক্ত  বেড়েছে তা হল গরীবী, বেকার, ভিখারি।পরোক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মন্ত্রী, তাদের সাঙ্গপাঙ্গ ও তাদের তোষামোদ কারিরা শূণ্য থেকে অসীমে পরিনত হয়েছেন। তাই কবি বলেন "সন্তান সংসার দেখে না মা কে দেখে"।
    কবির আক্ষেপ ৭২ বছরের স্বাধীন দেশে পরশ পাথরের ন্যায় একটিও মহানুভব দরদী পরিচালক পেল না যে দেশকে উন্নতির দিকে নিয়ে যাবে। বর্তমানে দেশের ডামাডোল পরিস্থিতির ভার সামলাতে খুব প্রয়োজন একটা দরদী রত্ন  "পরশ পাথর"।
     আর আমার খ্যাপা অন্তরও অহরহ খুঁজে চলে পরশ পাথরের ন্যায় কবিতা। আর যখন পায় সবার সাথে ভাগাভাগি না করে শান্তি পায় না।
    অসাধারণ একটি মানবিক ভাবনার রূপক কবিতা উপহার দেওয়ার জন্য শ্রদ্ধেয় কবি সুমিত্র দত্ত রায় মহাশয়কে অশেষ অভিনন্দন ও অনন্ত শুভকামনা জানালাম।