হাসি আর কান্না দুটোই আমাদের স্বাভাবিক জীবন প্রক্রিয়ার একটি অংশ। কোনো ভালো সংবাদে আমরা যেমন খুশি হয়ে হাসি আবার তেমনিভাবে কোনো খারাপ সংবাদ বা দুঃখের পরিবেশে আমাদের মন ভারাক্রান্ত হয়, তখন আমরা কাঁদি। কিন্তু অনেকেই আছেন নিজের খুশিটা ঠিক যেভাবে উপভোগ করার কথা অর্থাৎ খুশির সময় যেই উচ্ছ্বাস নিয়ে হাসার কথা তা করেন না, চেপে চেপে হাসেন। আপনি জোরে হাসলে অন্যে কি মনে করবে এটা ভাবতে গেলে তো আপনি আপনার সুন্দর মুহুর্তটিই উপভোগ করতে পারবেন না, তাই হাসার সময় এতো কিছু চিন্তা না করে প্রাণ খুলে হাসতে হবে। ঠিক একই কথা কান্নার বেলায়ও। কোনো আবেগঘন মুহুর্ত উপস্থিত হলে আপনার কান্না আসতেই পারে, কান্না আপনার সংবেদনশীল মনের পরিচায়ক। বরং কান্না না আসাটাই অস্বাভাবিক। কিন্তু আপনার সামনে অনেক মানুষ আছে বিধায় আপনি যদি লজ্জিত বোধ করেন আর কান্না চেপে রাখেন তাহলে পরবর্তীতে এটা আপনার মানসিক চাপ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই কান্না চেপে রাখবেন না। সবার সামনে কাঁদতে না চাইলে অন্য কোথাও চলে যান সাময়িক সময়ের জন্য, তারপর মন খুলে কেঁদে নিয়ে মন হালকা করুন।
আসরের প্রিয় কবি রণজিৎ মাইতি মহাশয় সেই কথাই বলতে চাইলেন তার "বিশ্বস্ত জায়গা দরকার" কবিতাটির মাধ্যমে।কবির কথায়-
"কাঁদার জন্যে একটু বিশ্বস্ত জায়গা দরকার
আসুন নিরালায় কেঁদে কেঁদে ভার ঝেড়ে ফেলি"
কবি ইতিহাসের উপর নজর দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন প্রেম দিয়ে পৃথিরীর যে কোনো অসাধ্য সাধন করা যায়।যে কাজ জোর পূর্বক হয় না সৌহার্দ্য ভালবাসাই হাসিল করা যায়।তাই কবি বলেন-
"অভিযোজনের ইতিহাস শিখিয়ে দিয়েছে
কিভাবে মুচকি হাসি দিয়ে জয় করে নিতে হয় সুন্দর পৃথিবী"
হাসি-কান্না তো জীবনের একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।সে তো অন্তর থেকে নিশ্রিত অনুভূতি ।তার জন্য তো সময়ের অপেক্ষা করতে হয় না।হৃদয়ের ভিতরে শত দুঃখ চাপা থাকলেও আমরাকে প্রয়োজনে হাসতেও হয়।সে কথা কবি যখন ব্যক্ত করেন-
"হয়তো তখনও বুকে জগদ্দল পাথর চাপা,অথচ অধরে ধরা মৃদু হাসি
হাসির স্থান কাল পাত্র লাগে না"
তবে হাসি যেমন একটা মনব মনের অনুভূতি তা নিজের থেকে তো আর উৎপন্ন করা যায় না ।হাসি দা কান্না সৃষ্টিরও মাধ্যম প্রয়োজন ।কারো দ্বারা তো হাসি কান্না সৃষ্টি হবে।তবে বর্তমান যুগে আমরা নিজের স্বার্থেই মসগুল কেউ কারো জন্যে আর ভাবে না।তাই কবির আক্ষেপ-
"কতোটা কাছের হলে---
একটা মানুষ আর এক মানুষের বুকে বৃষ্টি ঝরায় ?"
আমরা সবাই জানি যে হাসি আমাদের টেনশন কমায়, শরীর ভালো রাখে বিশেষ করে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে হাসি । বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, হাসির রয়েছে নানারকম শারীরিক ও মানসিক উপকারিতা। হাসি শরীরে রক্তের প্রবাহ ও অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়িয়ে রক্তের চাপ কমায় ফলে হৃদরোগের আশংকা অনেকটা হ্রাস পায়। আপনি কি জানেন কান্নাও একই কাজ করে! মনোবিজ্ঞানীরা সাম্প্রতিক গবেষণার মাধ্যমে জানিয়েছেন যে, মানসিক চাপ কমাতে, কর্মদক্ষতা বাড়াতে ও শারীরিক ভাবে ফিট থাকতে হাসির পাশাপাশি কান্নাকাটিরও সমান ভূমিকা রয়েছ। আরো মজার তথ্য জানিয়েছেন গবেষকরা, আমাদের মস্তিষ্কের একই জায়গা থেকে কান্না ও হাসির অনুভূতি আসে। হাসি যেভাবে রক্তচাপ কমিয়ে শরীরকে সুস্থ্ রাখে, কান্নাও তাই করে।
মানসিক চাপ কমাতে হাসুন ও কাঁদুন। আপনি যদি প্রচন্ড দুঃখের সময় বা মন খারাপ হলে কান্না চাপিয়ে রাখেন তাহলে তা আপনার মানসিক ভারসাম্যকে বিপর্যস্থ করে এমনকি শরীরের উপরও খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। আর হাসির কথা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আপনার আনন্দকে দ্বিগুণ করে দিয়ে সকল মানসিক স্ট্রেস বা উদ্বেগ নিমিষে কমিয়ে দিতে প্রাণখোলা হাসির জুড়ি নেই। দুশ্চিন্তামুক্ত ভালো মন যে কোনো রোগের মহাষৌধ। আর মনকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখতে হলে বেশি করে হাসুন। প্রাণ মন উজাড় করে হাসুন, উচ্চস্বরে হাসুন। দেখবেন আপনার মন কেমন পল্কার মতো হালকা লাগছে।হাসির সাথে শরীরের স্বাস্থ্যগত অবস্থার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আপনারা খেয়াল করে দেখবেন যে, হাসির সময় পেশীর টান অনেকটা আলগা হয়ে যায়। তাই দম ফাটানো হাসি পেশীর ব্যথা নিমেষে দূর করে দিতে পারে। হাসির নিরাময় ক্ষমতার বিস্মিত সত্যটি উপলব্ধি করে এখন অনেক চিকিৎসকরাই ওষুধের পরিবর্তে হাসতে উৎসাহিত করেন। এরকমই একটি পদ্ধতির কথা আমরা প্রায় সকলেই জানি তা হচ্ছে লাফটার থেরাপি। এই থেরাপিতে রোগীকে উচ্চস্বরে চিৎকার করে হাসতে হয়। যদি প্রয়োজন মনে হয়ে খানিটা নিরালায় গিয়ে হাসি কিম্বা কান্নার বহিঃপ্রকাশ করতে পারেন।সেই কারণে কবি কবিতার নামকরণও করেছেন "বিশ্বস্ত জায়গা দরকার"
কবিতাটি আমার বেশ ভাল লাগায় সবার সঙ্গে শেয়ার করলাম।যদি কারো ভাল লাগে পরিশ্রম সফল মনে হবে।সুন্দর শারীরীক ও মানসিক উপকারিতার অসাধারণ একটি কবিতা উপহার দেওয়ার জন্য প্রিয় কবি রণজিৎ মাইতি মহাশয়কে অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভকামনা জানালাম।