গাঁয়ে আমার জন্মরে ভাই
গাঁকেই ভালবাসিরে তাই
গাঁ'ই আমার মাতা এবং পিতা।
গাঁয়ের সুখে আমি সুখী
গাঁয়ের দু:খে আমি দুখী
গাঁকে জানায় আমার সকল ব্যথা।।
গাঁয়ের দুটি ছোট্টো পুকুর
স্নান করে সবে সকাল দুপুর
বধূরাও সেথায় কাপড় কাচে।
পুকুর পাড়ে তালের গাছ
মাছরাঙাটি লাগায় নাচ
ফিঙ্গে পাখি গাছের ডালে নাচে।।
আঁকাবাঁকা এক পথ আসে
শহরের রাস্তায় গিয়ে মিশে
সে পথ গেছে পুরুলিয়া রাঁচি।
বাসগুলি যায় হাঁক দিয়ে
গোটাকয়েক যাত্রী নিয়ে
বাস এলেই বলে পালিয়ে গেলে বাঁচি।।
গাঁয়ের যত রাখাল ছেলে
গরু নিয়ে যায় জঙ্গলে
তারা বাঁশি বাজাই বিরহের সুরে।
বাউল গায় একতারা হাতে
গাঁয়ের কাঁচা মেঠো পথে
চৈত্র মাসের ক্লান্ত দু প্রহরে।।
গাঁয়ে আছে দুটি দেবালয়
মাঝে মাঝে কীর্তন হয়
মাঝে মাঝে হয় রামায়ণ কথা।
নিঝুম দুপুরে বারান্দাপরে
মহাভারত পড়ে সুর করে
ক্লান্ত বদনে থাকে কিছু শ্রোতা।।
ক্ষেতের মাঠে সোনার ধান
শস্য ফলায়ে চাষীর প্রাণ
সবাই মিলেমিশে থাকে আনন্দে।
সুখ দু:খের কথা বলে
গাঁয়ে কারো মৃত্যু হলে
সারা গ্রাম ভেষে যায় নিরানন্দে।।
প্রতি বৎসর বৈশাখ মাসে
ছৌ নাচের আখড়া বসে
গাঁয়ের মানুষ আনন্দে উত্তাল।
মুখোশ পরে নৃত্য চলে
ধামসা মাদল তালে তালে
মহুয়া রসে হয় সব মাতাল।।
বর্ষাকালে ধানের ক্ষেতে
চাষীরা সব চাষে মাতে
তুলতে হবে বৎসরের ফসল।
হেমন্তে আসে বাঁধনা পরব
শস্য তুলে চাষীর গরব
রিঝে রঙে নরনারী সকল।।
তার পরে মকর মেলা
ভুলে সকল ব্যথা জ্বালা
জড়ো হয় সব মেলা প্রান্তরে।
একে অপরে দেখা দেখি
ভাবে পিরিতে মাখামাখি
খুশীর জোয়ার ভাসে অন্তরে।।
গাঁয়ে আছে স্নিগ্ধ হাওয়া
গাঁয়ে আছে গাছের ছায়া
গাঁয়ে আছে পাখির কূজন।
গাঁয়ে আছে স্নেহের মায়া
গাঁয়ে আছে করুণা দয়া
গাঁয়ে সবাই আত্মীয় স্বজন।।