যখন আমি ছোট্ট ছিলাম
ছিলাম অনেক ভালো,
ছিলাম সবার খুব আদরের
ছিলাম চোখের আলো।
দেখতো যিনি করতো আদর
নিতো কোলে তুলে,
তাঁর কোলেতে দুলতাম আমি
দোলনা যেমন দুলে।
আদর করে দুই গালেতে
দিতো অনেক চুমু,
ছোট্ট নাকে টিপে দিয়ে
বলতো ওরে "উমু"।
কত জনের বুকে মাথা
রেখে ঘুমিয়ে যেতাম,
সজাগ হলে নিজকে আমি
নিজ বিছানায় পেতাম।
সবার কাছেই ছিলাম তখন
খুব আদরের শিশু,
একটু ব্যথায় ভোঁ ভোঁ কেঁদে
করে দিতাম হিসু!
নানাবাড়ী থাকতাম তখন
নানা-নানুর সাথে,
নানী তখন গল্প বলে
খাইয়ে দিতেন হাতে।
কত জনে কত গল্প
বলতো রসে রসে,
অদ্ভুতুরে গল্প সেসব
শুনতাম বসে বসে।
একেক জনের গল্প ছিলো
একেক বিষয় নিয়ে,
সেসব গল্প শুনতাম আমি
খুব মনোযোগ দিয়ে।
ভূতের গল্প শুনতে তখন
চাইতাম বেশী আমি,
ছোট্ট মামার গল্প গুলো
ছিলো ভীষণ দামী।
শূন্যে ছুঁড়ে দিতেন মামা
বলতো ভাগ্নে ওলে,
খিল খিলিয়ে হাসতে হাসতে
আসতাম ফিরে কোলে।
ঘুরতে যেতাম তখন অনেক
বাবার কাঁধে চড়ে,
ঘুমিয়ে যেতাম তাঁর কোলেতে
আসতাম ফিরে ঘরে। !
দুয়া পড়ে ফুঁ দিতেন গায়
জন্মদাতা পিতা,
ঝুলতো গলায় আল্লার নামে
কালো কাইতন ফিতা।
মায়ের যতো ব্যস্ততা সব
ছিলো আমায় ঘিরে,
আদর দিয়ে যত্ন দিয়ে
গড়তে থাকেন ধীরে।
এই কপালে টিপ পড়াতেন
কালো কাজল মেখে,
বদ নজরে পড়ার ভয়ে
রাখতেন আমায় দেখে।
আমায় নিয়ে তবু কতো
চলতো কাড়া'কাড়ি,
পারলে যেন তখনই নেয়
এত্তো তাড়া'তাড়ি!
মায়ের কাছে পাড়ার আন্টি
বলতো বাসায় গিয়ে,
আপনার ছেলে দিয়েন আমায়
দিবো মেয়ে বিয়ে।
পাশের বাড়ীর মিষ্টি আপু
বলতো মুচকি হেসে,
তুই কি আমার জামাই হবি
রাখবো ভালো বেসে!
শিশু কালেই দাদা মরহুম
পাই নি তাঁহার আদর,
দাদার আদর দিতেন দাদী
মায়ার পরম চাদর।
দাদুর বাড়ী যেতাম তখন
ছিলো টিভির নেশা,
বুঝতাম কি আর তখন রে ভাই
পড়ালেখাই পেশা।
চাচ্চু দিলেন সাইকেল কিনে
খৎনা যখন হলো,
সারাবেলা সাইকেল নিয়ে
কে পায় আমায় বলো।
ধীরে ধীরে হারিয়ে গেলো
সেই সে ছোট্ট বেলা,
মনের ভেতর আজও সেসব
করে রঙিন খেলা।
আস্তে আস্তে শিশু থেকে
হয়ে গেছি বড়ো,
তাই তো আজি সবাই বলে
সংসারের হাল ধরো।
সেই স্মৃতি আজ পড়লে মনে
ভাল্লাগে না ওরে,
চলে গেলো সেই শিশুকাল
আমায় ফেলে ঘোরে।
ইচ্ছে করে যাই ফিরে যাই
সেই সে ছোট্ট কালে,
হারিয়ে যাওয়া সেই শৈশব আর
আসবে কি রে হালে!
মন পাঁজরে থাকুক জমা
ছোট্ট কালের স্মৃতি,
মাঝেমাঝেই ভাবি সেসব
জাগায় হৃদে প্রীতি।
___♦___
স্বরবৃত্ত ছন্দ ৪+৪+৪+২
রচনাঃ- ৫ / ৪ / ২০২১ ইং
সোমবার,
মেরুল বাড্ডা, ঢাকা।