আমি কবি বা কবিতার বোদ্ধা নই। কবিতা সমন্ধে তেমন ভাল কিছু জ্ঞানও আমার নেই। তারপরেও সময় ও সুযোগ পেলেই কবিতার কাছে আসি, কবিতা পড়ি। কবিতাকে কিছুটা হলেও ভালবাসি। সে বরাতে যা বুঝি তাতে মনে হয়, সত্য সুন্দর আনন্দ বেদনার নিপুণ ও ছান্দিক অভিব্যক্তিই কবিতা। আর এমন একটি সুক্ষ সুবিন্যস্ত এবং স্পর্শকাতর বিষয়ে হাত দেয়া বা তা নিয়ে ভাবা আমি মুর্খের কাজ নয়। এত কিছুর পরও কিসের এক তাগিদ যেন বিবেককে প্রায়ই তাড়া করে ফিরে। তাই এমনটি করা। কবিতার শ্রেণী বিন্যাস আমি জানি না বা মানিও না। মন-মনন-সময় ও বিবেকের সাথে মিলে গেলে সব কবিতাই সমসাময়িক বা আধুনিক। হতে পারে তার ভাষা ও ভাব বিন্যাস এবং উপস্থাপনার ভিন্ন ধরণ। কিন্তু সর্বকালের পাঠকের হৃদয় একটাই।
হ্যাঁ! যে কথা বলতেছিলাম, কবিতা। কবিতা সর্বকালে হৃদয়ে প্রবেশের এক সহজ দার। তথাপি এক ভদ্রলোক বলেছিলেন যে, তিনি কোন একজন জ্ঞানী ব্যক্তিকে বর্তমানের (আধুনিক)কবিতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে উত্তরে তিনি বলেছেন, আমি আধুনিক অনেক কবিতার প্রায় শব্দের অর্থই বুঝি এবং আলাদা আলাদা ভাবে প্রায় লাইনেরও। কিন্তু সবগুলো লাইন একত্রে মিলাবে আর যে কিছুই বুঝি না। মনে হয় বাসুকীর গোল পাকানো কোন দুর্বোদ্ধ গোলে আঁটকে গেছি। এই আর কি! এ যদি হয় জ্ঞানী জনের কথা, তাহলে আমার আর কথা বলার জায়গা কই? তবে যেটুকু বলতে চাই তা হল যে, দুই দশক আগেও আমাদের দেশে সিনেমা একটি ভাল বিনোদনের মাধ্যম ছিল। যেমনটি এখনো কবিতা। আর সে মাধ্যটির পোশাক পরিচ্ছদ ছাট খাট করে এবং তার সাথে অশ্লীল ভাষা ও চিত্র জুড়ে দিয়ে সেটিকে বিলুপ্তির দ্বার প্রান্তে নিয়ে গেছেন স্বয়ং সিনেমা ব্যবসায়ীরাই। যেমন বর্তমানে অনেক কবিই তাঁর জ্ঞানলব্ধ ব্যক্তিগত গোপন জ্ঞানকথা কবিতায় জুড়ে দিয়ে নিজের পান্ডিত্যের স্বাক্ষর রাখতে গিয়ে বরং কবিতাকেই করেছে তুলেছেন পাঠক অচ্ছুৎ। আরো একটি বিষয় যেটা ইদানিং আমরা প্রায় সবাই করছি। সেটা হল কবিতার সাথে বিনাপ্রয়োজনে নানা ছবি নানা লতাপাতার ব্যবহার। সে ছবিগুলো খুবই সুন্দর এবং মনোমুগ্ধকর। সেটি অনেকাংশে কবিতাকে উজ্জলও করে তোলছে। তবে সেটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে বর্তমান বিউটি পার্লার ও তার সামগ্রীগুলোর মত। আর এর ভেতরেই কবিতার জন্য রয়ে গেছে একটি সুদূর প্রসারী ক্ষতির সম্ভাবনা। যেটি না বুঝে হলেও আমাকে বেশি নাড়া দিচ্ছে। আর সেটিকে ভুলে যাওয়া মোটেও উচিৎ হবে কি না তা জ্ঞানী গুনিদের উপরই ছেড়ে দিলাম।
একটু লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবেন সেই পুরাতন সিনেমা আর সাহিত্যের সেরা মাধ্যম সেই পুরনো কবিতা বা কাব্যগ্রন্থগুলো কত খাটি। যার সাথে তেমন অলীক বা মেকির সংমিশ্রনই নেই। সেগুলো যেন জীব্ন থেকে নেয়া। তাই সেগুলো এখনো স্বপ্রাণ সমাদৃত হচ্ছে। এমন কি অনেক ক্ষেত্রে আমাদেরকে টপকিয়ে মরণোত্তর পুরস্কারও পাচ্ছেন। যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে মরণোত্তর পুরস্কার আর মণোত্তর বাসর ঘরকে বিশ্বাস করি না। ও দু’টোই এক ধরণের উপহাস। যাকে জীবদ্দশায় ক্ষুধার অন্ন, মাথার গোঁজার সামান্য ঠাঁই করে দিতে পারি নাই, তাঁর বেদনা কাতর প্রস্থানের পর তাঁর কবরে মাল্য দান আর তাঁকে মরণোত্তর পুরস্কার। এসব দুর্ভাগা জাতির পক্ষ থেকে নিছক প্রতারণা বই আর কিছুই না। ছোট মুখে অনেক বড় কথা বলে ফেললাম। ভুল হলে ক্ষমা করবেন। আজ এ পর্যন্তই। সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবন্, কবিতাকে অশ্লীল ও অতিরিক্ত জঞ্জাল মুক্ত রাখবেন। এ কামনা করে বিদায়। আল্লাহ হাফিজ। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।