দীর্ঘ নিশ্চল চেতনা যখন তোমার মনের অন্তর্নিবিষ্ট বোধকে জাগায়
তখন তোমার স্থবিরতার ঘোরে আমি আক্রান্ত হই জটিল সাইকোসিসে।
তোমার যাতনা তো আমার অ্যাড্রেনালিনের মাত্রা চরমে নিয়ে,
একটা ঘন,একটা প্রগাঢ় বায়বীয় ডেনড্রাইটের জন্ম দেয় মনে।
হাওয়ার রাত কিংবা নক্ষত্রের রাতের বেবিলনের রাণীর ঘাড়ের সৌন্দর্যে,
আমি ইস্রাফিলের শিঙ্গা আর জিবরাইলের ডানার সন্ধি দেখতে পাই-
তোমার নিঃশব্দ কবিতায়।


মানুষ যখন বিস্তর প্রশ্নের ইতিহাস আর অজানা উত্তরের দর্শন পড়ে ক্লান্ত হয়,
তখন সহজ সূত্র মিলে যাওয়া বিজ্ঞানকেই ঈশ্বর ভেবে প্রশান্তি পায়।
অথচ বিজ্ঞান আমাকে ন্যূনকল্পে একরাত ঘুম কিংবা ভালোবাসা দিতে পারে নি।
পাখির গানে যে প্রেমে পারমার্থিক চেতনায় মাত্রাযুক্ত বর্ণের সম্মিলন ঘটে,
জোনাকির যে ক্ষীণ আলো মধ্যরাতে প্রেমিকার মুখের মতো মায়ার জালালিয়াত দেখায়,
মায়ের হারিয়ে যাওয়া আঁচল যে বিপত্তিহীন স্নেহের জন্ম দেয়,
যে প্রবোধ বাবার চশমার ফ্রেমের আড়ালে দেখা যায়,
তা তো তোমার লেখা শব্দহীন কবিতায় পেয়েছি আমি-
এই রাতে, হারিয়ে যাওয়া পৌষের মৃদু জীবিত পৃথিবীর এক কোণে।
বিজ্ঞানে নয়, সজ্ঞানে ধারণ করা তোমার অস্তিত্বে।

অবিরাম উন্মাদনায় খেই হারিয়ে ফেলে যখন নিয়ন আলো আমার চোখে তীব্র মনে হয়,
তোমার প্রাচীণ গানের সুর আমার আরাধ্য হয়, আমি ঢেউ তুলি না থাকা নূহের নৌকায়।

স্মৃতির বিভ্রমে কিংবা বোধের সীমাহীন আড়ষ্টতায় পৃথিবীর যাবতীয় চেতনা শিল্পের মতো, সাহিত্যের মতো আমি তোমার চাহনিতে দেখতে পাই।
ফিলিস্তিনের শিশু থেকে ইহুদি নারীর গান সবই যেন তোমার ঠোঁটের অলঙ্ঘনীয় অলঙ্কার।

বিপন্ন সভ্যতার শেষ পায়রার উড়ে যাওয়া বার্তায় যখন-
'রাজনৈতিক' তোমার অর্থনৈতিক কৈফিয়ত জোরালো হয়,
বাজারের কাছে নিজেকে বাজারি,
আর ধর্মের কাছে অধার্মিক মনে হয়-
তখনও আমি তোমার চোখেই আমার নিবৃত্তি আর ভারসাম্য খুঁজে পাই৷
প্রেমিকার হাতের রূপক তড়িতের নির্মোহ স্পর্শ শেষে,
আমি তোমাকে আমার মাঝেই দেখি।
তুমিও এই কবিতা পড়ে ব্রহ্মপুত্রের তলদেশে দেড়শো বছর আগে ডুবে যাওয়া নববিবাহিত বরের বেশে আবিষ্কার করবে আমাকে।
তোমার ঘোর আরও গাঢ় হবে, রাত গভীর হবে, কবিতা হবে নিঃশব্দ।
যেমন নিঃশব্দ কবিতাতেই তুমি আমাকে ধারণ করেছ অন্তঃস্থ কাসিদায়।
এরপর তুমি-আমিতে আর এক শুক্রও তফাত থাকে না।