তখন আমি অনেক ছোট
বছর চারেক হবে বয়স,
বাড়িতে তখন অনুষ্ঠান ছিল
আমার কাকার বিয়ে।
বিয়েতে অনেক মানুষ আসল,
বিয়ে বাড়ি যেমন হয় আর কি।
সবাই অনেক মজা করছে,
নতুন কাপড়ে সাজছে সবাই।
আমিতো ছোট মানুষ
আমার আবার সাজ কিসের।
মা যেভাবে সাজিয়ে দেয়
আমিও ঠিক সেভাবেই সাজি।
কিন্তু ছোট থাকতে কি আর ইচ্ছে করে_
বড়দের মতো সাজতে চাইলাম।
মায়ের মুখে গল্প শুনেছিলাম,
আমার অন্নপ্রাশনের গল্প।
আঠারোটা নাকি আংটি পেয়েছিলাম।
হঠাৎ করে বায়না ধরলাম,
বিয়েতে আমি আংটি পরব,
পরবোই পরব।
জেদটা একটু বেশিই ছিল,
মা আমাকে অনেক বুঝালো,
কিন্তু কোথা থেকে কি
আমি আংটি পরবোই পরব।
কিন্তু মা'ই বা আর কি করবে,
অন্নপ্রাশনের আংটি কি আর থাকে_
হয়ত গলার চেইন হয়ে যায়,
কিংবা অন্য কারও অন্নপ্রাশনে চলে যায়।
কিন্তু আমিতো নাছোড়বান্দা,
ওসব বুঝার বয়সও তো হয়নি তখন।
বিয়েতে এক পিসি এসেছিল
আমার বাবার মাসতুতো বোন।
আমার এমন জেদ দেখে পিসি
আমার বাবাকে ডেকে বললো_
তোমার এই ছেলে কোনোদিন
"মানুষ" হবে না দাদা।
বাবা আমায় অনেক ভালোবাসে,
তবুও আর কি করবে,
মুখ বুজে সহ্য করলো।
কিন্তু পারলনা মা,
তখন মা আমায় কোলে নিয়ে
আঁচল দিয়ে চোখ মুছিয়ে বলেছিল,
বাবু, তুমি যেদিন "মানুষ" হবে
সেদিন আমি তোমায় একটা আংটি কিনে দিব।
তুমি সেটা সবসময় পরে থাকবে।
বড় হওয়ার সাথে সাথে
সবকিছু ভুলেই গিয়েছিলাম।
কিন্তু মা অল্প অল্প করে টাকা জমালো,
বিশ্বাস ছিল যে তার ছেলে
একদিন না একদিন "মানুষ" হবে।
আজ আমি বিএসসি ফাইনাল ইয়ার।
থার্ড ইয়ার ফাইনাল দিয়ে শেষ করে
বাড়িতে গেলাম ছুটি কাটাতে।
হঠাৎ একদিন মা'মনি ডেকে বললো,
কাল একটু ময়মনসিংহ যা বাবু,
একটা আংটি কিনে নিয়ে আয় তোর জন্য।
আমিতো মহা খুশি,
কিছু পেতে কার না ভালো লাগে!
পাপ্পা আর দিদিকে নিয়ে
পরদিন ময়মনসিংহ গেলাম।
সোনার একটা আংটি কিনলাম,
বাড়িতে এসে মা'মনিকে দিলাম,
মা'মনি আমায় আংটিটা পরিয়ে দিল।
আমি মা'মনিকে প্রণাম করলাম,
মা'মনি আমার কপালে চুমু খেলো
আর মনে করিয়ে দিলো সেই পুরনো কথা।
সত্যিই তখন পানি এসেছিল চোখে,
কিন্তু বুঝতে দেইনি কাউকে।
তখন কাঁদলে হয়তো মা আবার
আঁচল দিয়ে চোখ মুছে দিতো,
কিন্তু এখন তো আর ছোট নাই
অনেকটাই বড় হলাম,
পুরো পৃথিবী যাই বলুক
মায়ের কাছে "মানুষ" হলাম।