কোকিলা বানু নাম তার,
এক ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার।
সে করে গৃহস্থালি কাজ আর
স্বামী তার চালায় রিকশা,
দরিদ্র তবু এই সুখের সংসার দেখে
গ্রামের অনেকের হতো ঈর্ষা।
তিন বেলা কখনও খাবার জুটে না পেটপুরে
তবুও কোনো ঝগড়া নেই কোকিলার সংসারে।

কোকিলার স্বামী বললো একদিন
"ওরে কোকিলা, আমার মনে বড় আশা,
পায়ে ঠেলে আর কতদিন চালাবো
কিনতে চাই একটা ব্যাটারি চালিত রিকশা"।
কোকিলা বলে, "এত টাকা পাবে কোথায় বলো,
তোমার বুঝি আক্কেল নেই মোটে
আর যদি একথা মুখে বলো"।
স্বামী বলে তার, "ব্যবস্থা একটা হবে,
শহরের মহাজন বলেছে কিছু টাকা ধার দেবে
একবার কোনভাবে রিকশাটা কিনে ফেললে
বছর শেষেই শোধ হবে ধার সুদে-আসলে"

কিছুদিন পর ঘরে এলো নতুন ব্যাটারি চালিত রিকশা
কোকিলা, ছেলে-মেয়ে সবাই খুশি, আর
গ্রামের মানুষের বাড়ছে আরও ঈর্ষা।
বিধাতার কি লীলা তা জানি না,
গরিবের ঘরে বুঝি সুখ সয় না।
হঠাৎ একদিন খবর এলো কোকিলার স্বামী হাসপাতালে
ট্রাকের ধাক্কায় রিকশাসহ পড়ে গিয়েছিল খালে।
ডাক্তার বলে রোগীর অবস্থা ভালো না মোটে
ট্রাকের ধাক্কা বেজায় লেগেছে, মাথা গিয়েছে ফেটে।
শেষ রক্ষা হলো না আর কোকিলার
সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে স্বামী তার।
রেখে যাওয়া তার দশ বছরের ছেলে
শপথ নিলো খুন করবে ট্রাকের ড্রাইভারকে পেলে।

যেই কথা সেই কাজ সে করলো
ট্রাকের ড্রাইভারের মাথা ফাটিয়ে ঘরে ফিরলো
খানিক বাদেই পুলিশ এসে তাকে ধরলো।
হায়রে অভাগী কোকিলা,
স্বামীর রেখে যাওয়া লাখ টাকা ধার
হাজতে পুলিশের মারে বাচ্চা ছেলের চিৎকার
ঈর্ষা আর কুনজরে ছারখার কোকিলার সংসার।

কি জানি কি হলো হঠাৎ শুনি,
কোকিলা সারাদিন রাস্তায় হেঁটে বেড়ায়
আর পিছে থাকে তার ছোট্ট মেয়েখানি।
বিধাতার এমন নিষ্ঠুর কষাঘাত
পাগল হয়ে গিয়েছে কোকিলা, সইতে না পেরে আঘাত।
ছোট্ট মেয়েটারে নিয়ে গেছে সেই মহাজন রিকশার,
এভাবেই একদিন শেষ হয়ে যায়
হাসিখুশি মাখা কোকিলার সুখের সংসার।