চিঠিটা লাশের পকেটেই ছিল।
আনঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের সদস্যের নাকি
এসব আবেগ গায়ে মাখতে নেই।
আমিও মাখিনি,
শুধু গল্পটা না বলে পারলাম না।
ফুলমতি,
আমি জানি তুই বড় অভিমান করে আছিস,
কি করবো বল?
আর মাত্র ক'টা দিন সবুর কর
এসেই বউ করে ঘরে আনবো তোকে।
এখানে ডাক্তার গুলো বড্ড বেয়াড়া,
কিছুতেই ছাড়তে চায় না।
সেই প্রথম দিনই বলেছিলাম
"আমারে বাড়ি যেতে দেন , সব ঠিক হয়ে যাবে"।
শুনলো না আমার কথা।
প্রতিদিন বলছি, আজও বলেছি
কেউ শোনে না ,
কেউ বোঝে না আমার কথা।
ফুলি রে,
এটা খুব খারাপ জায়গা,
সবাই দুরে দুরে থাকে,
কেউ কাছে আসতে চায় না।
একলা দিনরাত পড়ে থাকি
জন বিচ্ছিন্ন ভয়াবহ এই ঘরটাতে।
তোর মনে আছে ?
সেবার যখন বড্ড জ্বরে বেহাল দশা আমার ,
মা সারারাত মাথায় জল পট্টি দিল
আর তুই গোপনে খাওয়াতি আমলকী কখনও চানাচুর, বাদাম
আরও কত কী;
আজ খুব মনে পড়ছে এসব।
ঢাকায় কী আসতাম আর ?
শালারা বলল না আসলে চাকরি যাবে।
উপায় কী আর?
সমিতির কিস্তি তো শোধ দিতে হবে।
কষ্ট নিস না,
আর মাত্র ক'টা দিন
এসেই ঘরে নেব তোকে।
সব কিনে রেখেছি,
তোর প্রিয় বেনারসী, কানের দুল, নাকের নোলক,
আরও কত কী;
শুধু জুতা টা বাকি।
ছাড়া পেলেই সব নিয়ে চলে আসছি।
ফুলি রে,
তোর বড্ড নৌকা চড়ার সখ আমার সাথে
এবার এসে নৌকা করে ঘুরবো সারাদিন,
শাপলা তুলবো, দক্ষিণের খালে সাঁতার কাটবো, আর-
সারাদিন মাছ ধরবো ছিপ ফেলে।
তুই আঁচলের পুটলিতে বেঁধে আনবি
আমলকি কখনও চানাচুর, বাদাম
আরও কত কী;
এখনও অভিমান করে না,
আর মাত্র ক'টা দিনই তো
আমি আসছি,
বৌ করে ঘরে তুলতে তোকে।
ফুলি গো,
আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে,
আর পারছি না
তোর কথা , মায়ের কথা,
গাঁ এর পায়ে চলা পথের কথা, নদীর কথা,
দীঘির পাড়ের বড় আম গাছটার কথা
বড্ড মনে হচ্ছে ।
আমি ফিরে আসবো
ক'দিনেই ফিরে আসবো
প্রিয় নদীর কাছে, নায়ের কাছে,
আমার গাঁয়ের কাছে, মায়ের কাছে,
তোর কাছে,
এসেই বউ করে ঘরে আনবো তোকে. . .
আর লেখা নেই।
আর হয়তো ক্ষমতা ছিল না লেখার।
প্রিয়জন হীন দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া স্বপ্ন ভাঙা গল্পটা
মাটিতে লুকিয়ে আসলাম এইমাত্র ।
এমন হাজারো গল্প
মাটি চাপা দিচ্ছি প্রতিদিন, প্রতি নিয়ত,
করোনার নিষ্ঠুর থাবায়
সরকারি গোরস্থানের কঠিন মটির নিচে।
চোখ দুটো টলটল করছে আমার
আমি জানি-
আনঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের সদস্যের নাকি
এসব আবেগ গায়ে মাখতে নেই।
আমিও মাখিনি,
শুধু গল্পটা না বলে পারলাম না।
......................
০৪/০৬/২০২০, রাত ১২.৩০