হেমন্তের কবিতা
মোজাম্মেল সুমন

কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাস মিলে হেমন্তকালের স্বচ্ছ ঝিলিমিলি প্রহরের বলক,
শরতের কাশফুলগুলো মাটিতে নুইয়ে পড়ার পরপরই হেমন্তের রুপের ঝলক।
হেমন্তের সকালে আবছা কুয়াশার জালে আটকা পড়ে মাঠঘাট কিংবা দূর্বাঘাস,
থেকেথেকে হেমন্তের হিমহিম বায়ু জানান দিয়ে দেয় যেনো শীতের পূর্বাভাস।

ঝিঙেফুলের মাচায় ঘোমটানো বেগুনি রং, পাশে পেঁয়াজের সাদাডগা নড়ে,
মিষ্টি লাউগাছের ঢোলা ঢোলা কমলার রঙের ফুলে প্রজাপতি খেলা করে।
লাউ মাচায় লকলকে সবুজ ডগায় লালফড়িং আর দোয়েলপাখি নাচে,
খেঁজুরগাছে শালিক আর লাল ঝুঁটির বুলবুলিটা বসে সজনে ডালের কাছে।

সকালের বর্ণচ্ছটায় বৃক্ষের পাতার ফাঁকে শিশুর গালের মতো লালচে রোদ হাসে,
প্রকৃতি আমাদেরকে হাতছানি দিয়ে ডাকে আর দুধমেঘেরা সুনীল আকাশে ভাসে।
প্রতিটি ধানগাছের স্তন থেকে যেনো হীরার মতো টলমল শিশিরবিন্দু ঝরে পড়ে,
সূর্য সোনালি রোদের রুমাল দিয়ে ঈষদুচ্চ প্রতিটি  ধানগাছের ঠোঁটে মৃদুচুম্বন করে।

ধানগাছের নাড়াগুলো কাদাজলে আত্মবিশ্বাসে দাঁড়িয়ে রয় সোঁদা মাটির ছন্দে,
ঘাসফড়িং খুশিতে তিড়িংবিড়িং নাচে ফসলের মাঠে সদ্য পাকা ধানের গন্ধে।
কাস্তে হাতে নিয়ে কৃষকরা মাঠে মাঠে আমন ধান কাটায় ব্যস্ত ভীষণ হয়ে পড়ে,
কৃষকের মুখে হাসি, ধানভানা কৃষাণীর শরীরী ঘ্রাণ আর নবান্ন প্রতি ঘরে।

গ্রামের মহিলারা মনের আনন্দে সারারাত জেগে তৈরি করে সুস্বাদু পিঠা,
সকালবেলা নতুন চালের ফিরনি পায়েশ অথবা ক্ষীর খেতে দারুণ মিঠা।
পিঠায় ঝুনা নারিকেলের শাঁস তৃপ্তিকর, দুপুরের জন্য কামরাঙা কিংবা চালতা,
মেয়েকে বাপের বাড়িতে নাইওর আনা হয় আর কিশোরীর পায়ে আলতা।

পরিবারের সবার নতুন পোষাক আর হাসিখুশির আনন্দ একটুও না কমে,
মায়াবী জ্যোৎস্নার ফুল ঝরে, গ্রামে জড়সড়ভাবে পালাগানের আসর জমে।
হেমন্তের ফুল শিউলী, কামিনী, গন্ধরাজ, মল্লিকা, হিমঝুরি, আহা সৌরভের!
সবার প্রাণে জাগে উৎসবের মেজাজ, তাইতো হেমন্ত বাঙালির গৌরবের।