আমি সূচিশিল্পীর মতো দুই শতককে জোড়া দিয়ে
তৈরি করেছি স্মৃতিময় সময়ের রুমাল।
সেকালের নকশীকাঁথার চেয়ে কম ফোঁড় নেই এখানে।
না দেখলে ঠিক বুঝানো কষ্টকর, কতশত কথার ডকুমেন্ট্রি ওটা।
আমার রুমালটা মাঝে মধ্যে বের করে রোদে মেলি,
ভ্যাপসা ভাবটা কেটে আবার মচমচে হয়
আমি সেলাইগুলোতে হাত বুলাই।
এইতো এখানে, নব্বই দশকের প্রথম বছর
কত স্মৃতিময়। এখানেই ফুটেছিল হলুদ করবি
বাঁশপাতা পোস্টারের নিচে গগনবিদারী মানুষের শ্লোগান
এইযে এই বাঁকে, বাংলাদেশে জলোচ্ছ্বাসের মতো
এসেছিল গণতন্ত্র।
লক্ষ্য করুন এখানে, এই জমিনে-
গফুর ব্যাপারির শেষ সম্বল ছিল একটা দুধেল গাই।
সে দুধ তাদের খাওয়ার সামর্থ্য ছিল না, বরং দুধটুকু
বেচেই চলতো তাদের সংসার।
হঠাৎ ধরা পড়ল বৌয়ের অসুখ, অ্যানিমিয়া।
উপায়ন্ত না থাকায় সে গরুই বেচতে হলো।
হাটে গরু বেচে ফেরার পথে সে দিন তুমুল বৃষ্টি।
গফুরের তালি দেয়া ছেড়া ছাতায় বধ মানেনি শ্রাবণের অবাধ্য জল।
বৃষ্টি থেকে মাথাটা একটু আড়াল করতে এই বকুলতলায় সে একটু থামে।
দেখুন এখানে, এইযে এখানেই-
তার সব টাকা কেড়ে নেয় ওঁত পেতে থাকা হাইজাকাররা।
চোখে সমুদ্র ধরে ছেড়া শার্টে ভেজা বুকে সে নীরবে ফিরে
এসেছিল ঘরে। তিন দিন পর মারা যায় তার বৌ।
কোন সংবাদপত্র তা ছাপেনি। আমি যত্ন করে তা রুমালে তুলে রেখেছি।
এখানে তাকান। সুতার এ কাজটি বেশ মজাদার ।
মনে আছে, গত শতকের শেষ দিকে বিশ্বে আতংক ছড়াল ওয়াইটুকে?
সবাই বলল, পরমাণু বোমার উপর মানুষ হারাবে নিয়ন্ত্রণ।
সে দিনের মার্কিন প্রেসিডেন্টের কপালের ভাঁজ
আমি সযত্নে তুলে রেখেছি এ রুমালে।
সুখের খবর কোন বিপত্তি ছাড়াই নতুন শতকের প্রথম প্রহরে
মানুষ আবারও পৃথিবীকে শাসনের ক্ষমতা ফিরে পায়।
তারা সব উদ্বেগ যেন বন্দি করে রেখেছিল শ্যাম্পেনের বোতলে
ওরা ওটা খুলে দেয়।
মস্কো, ম্যানহাটান, সিডনি, নিউইয়র্কের আতশবাজিতে
জন্মলাভ করে নতুন শতাব্দী।
আমার রুমাল সেই শতাব্দীর জন্ম ইতিহাস ধারণ করে রেখেছে।
এই ভাঁজটি হতভাগা অভিবাসী কুর্দি শিশু আয়লানের,
ভূমধ্যসাগরের বালুকাবেলায় তার মৃতদেহের উদ্দেশ্যে দেওয়া
কোটি মানুষের মানবিক উচ্চারণের ফুলগুলো তুলে রেখেছি এখানে।
আমার রুমালে খুব যত্নে লিখে রেখেছি ইউএনএইচসিআরে
এযাবৎ স্থান না পাওয়া সকল উদ্বাস্তুর নাম এবং দুই শতাব্দী ধরে
অস্তমিত সূর্যের ঠিকানা।
অনুগ্রহ করে কেউ কী আমাকে যোগাযোগ করে দিবেন ফ্রান্স সরকারের সাথে?
আমার মৃত্যুর পর প্রিয় রুমালটি ল্যুভর মিউজিয়ামে রেখে দিতে চাই।