পোষের কুয়াশাচ্ছন্ন হিম শীতল রাতে
শরত কিংবা গ্রীষ্মের প্রখর সূর্যালোকে
বেহারাদের কাঁধে আর দোলে না পালকি,
বাংলার প্রান্তিক-দরিদ্র পল্লীতে
কিষাণ-কিষাণী কিংবা আতুরে ঘরে
দৃষ্টিতে পড়েনাকো মাটির শানকি ।।
নতুন বউয়েরা আর আসে না চড়ে
গৃহস্থ্যের ফসল তোলা হয় না আর
বলদের ঘাড়ে টানা গরুর গাড়ী,
পল্লী বঁধুরা আর পড়ে না বালা
গলায় জড়ায় নাতো জড়ির মালা
উনানে চাপে না আর মাটির হাড়ি ।।
ফোনের বদলে আর ডাকহরকরা
সাঁঝের বেলায় কিংবা প্রভাত বেলায়
ডাক নিয়ে ছুটোছুটি করেনাকো তাড়া,
পল্লী ঝিয়ারী আর কাঁকে চেপে কলস
শেষ বিকেলে কভূ আনে না বারি
যায় নাকো নদী কিংবা পুকুরে তারা ।।
ভওয়াইয়া, ভাটিয়ালি আর পালাগান
শোনে নাতো কেউ আর বসে দহলীজে
কেচ্ছা-কাহিনী শোনার নাই ফুসরৎ,
পল্লী মেয়েরা কারো শাদী পর্বে
কোরাস তালে আর গায় নাতো গীত
গীতের তালে দেখি না নাচের কসরত ।।
শুনি নাতো দুরশ্রুত রাখালের বাঁশি
গরুপাল লয়ে কোথা ক’জন রাখাল
নদীপাড়ে, তৃণভূমে করে বিচরণ,
ফিতায় বাঁধা বেণী দেখি নাতো আর
দেখি না অলকে চাপা বন কোন ফুল
আলতার রঙয়ে রাঙ্গা নুপুর চরণ ।।
শেষ বিকেলের মাঠে বালকের দল
খেলে নাতো গোল্লাছুট আর কাবাডি
খেলে তারা ফেসবুক, ক্রিকেট, ফুটবল,
কানামাছি-ভোঁ ভোঁ আর ছি-ছি কুতকুত
এসব খেলা কবে হয়েছে বিলীন
খেলে নাতো পল্লীর বালিকার দল ।।
পল্লীর মায়েরা আর শিকোয় চড়ে
রাখে নাতো পিঠে পায়েস দুধের হাড়ি
ধান নাহি বানে আর সাধের ঢেঁকি,
পান্তা-ভাতের রেওয়াজ দেখি না আর
কাগজে তামাক পুড়ে খায়না কিষাণ
ডানহিল আর সিগারেটের গন্ধ শুকি ।।
যৌথ পরিবার এখন দেখি না কোথাও
বহু ঘর, এক উঠান নেইতো তেমন
শৈশব কেঁটেছে যেথা হয়ে এক প্রাণ,
কেউ তো বাসে না ভালো মায়ার টানে
নিটৌল সে ভালবাসায় পড়েছে ভাটা
হারিয়েছে খাঁটি প্রেম হারিয়েছে মান ।
শহুরে মেয়েরা এখন আঁটশাঁট পড়ে
দেখিনা না বক্ষে তাদের ওড়নার শোভা
ওড়না কখনো তারা গলায় প্যাচায়,
ক্লামছি পোশাকে কেউ চলে অহরহ
ভিনদেশী ফ্যাশনের আহা কি বাহার
বঙ্গ নারীরা বন্দী বিশ্বায়নের খাঁচায় ।
যুবকেরাও পড়ে এখন বিদেশী পোষাক
বাঙালী পনায় তাদের কমেছে রুচি
ছেলেদের পোষাক এখন মেয়েরাও পড়ে
মেয়ে হয়ে ছেলে সাজার চলেছে হিড়িক ।
আছে সে বঙ্গ-বদ্বীপ নাই সেই সাজ!
পাল্টেছে সব তার দিনকে দিনে
ইতিহাস ঐতিহ্যের বাঙ্গালী সমাজ
কালের প্রবাহে, ইতিহাসের ক্যারাভানে ।।