আসো তবে উল্লাস করি শিস দেই!
না, দোয়েলের শিস নয়। এমন শিস নয়
যেটি ধীর লয়ে হবে দীর্ঘতর, যার রেশ
তোমাকে-আমাকে ডুবাবে বিষণ্ণতায়,
কিছুটা কাঁদাবেও হয়তো, ভাবাবেও খানিক,
এমন শিস নয়। আমরা ঠোঁট গোল করে
মধ্যমা আর বুড়ো আঙুল মুখে পুরে দেবো
অশ্লীলতম শিস!

আমরা হাসবো। বিষন্ন নয়; বীভৎ হাসি!
হাসবো কেন?
আরে বোকারাম এখন ফেব্রুয়ারি
এসে গেছে। ফেব্রুয়ারি আমাদের
উৎসবের মাস।
আসো আমরা মেলায় যাই।
ঐ নধর মেয়েটার গা গেঁষে  দাঁড়াও;
যদি সাহস থাকে তবে হাতখানি বাড়াতে পারো
আর যদি না পারো তবে হাত রাখো ঐ বিদেশী
বিলাসে। ওসব আমার দেশেও হয়, হলে হোক।
তবুও আমি আর তুমি বা সমবেত আমরা মিলে
ঐ বিদেশী ফেরিওয়ালার কাছ থেকেই কিনবো।
আলো ঝলমল, আলো লাল নীল,
পতাকা-ফেস্টুন-বেলুন,
নাহ!
ওকে অশ্লীল বলো না- ও হচ্ছে বাণিজ্য মেলা
আমাদের ফেব্রুয়ারির অনির্বায উৎসব।

থাক না ওসব-
আসো এবার ধাঁধাঁ ধাঁধাঁ খেলি, বলতে পারো?
এ ফেব্রুয়ারিতে কি হয়েছিলো?
আরে সাবাশ, সাবাশ, ঠিক বলেছো-
এ মাসে ভ্যালেন্টাইন বাবাজি মারা গেছেন।
তোমার তো  ভীষণ স্মরনশক্তি। জাতিস্মর নাকি?
১৮০০ বছর আগের ইতিহাস জানো!
আর কিছু স্মরণে পড়ে? পড়ে না?
বড়ো জোর ৬৫ বছর কিংবা ৭০ বছর হবে,
আমিও ঠিক জানি না, জানবো কিভাবে,
আমিও কি কম বাঙালী নাকি?
কোন ছাত্র না শ্রমিক মারা গিয়েছিলো।
তাতে তোমার আমার কি?
আমরা ঐ ফেব্রুয়ারি মনে রাখি না
আমাদের ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন-ডে
ভালোবাসা দিবস!

স্কুল-ক‌লেজ পড়ুয়া মেয়েটির সঙ্গে আমরা
’কহো না পেয়ার হে’ নিয়ে গল্প করবো।
ফেব্রুয়ারি! অনির্বায ডেটিং। চাই কি, ঐ সব
লোকগুলোর লাশ যেখানে পড়েছিল, সেখানেই
ডেটিং হতে পারে, কিছুটা উষ্ণতা-গাঢ় চুম্বন।
ভালোবাসা, ভালোবাসা!

কবিতা লেখার কি দরকার কি?
আর্চিস গ্যালারিতে রেডিমেড কবিতা
কিনতে পাওয়া যায়, কীভাবে প্রেম করবে
শিখে নাও। ভালোবাসার কোচিং!
ফেব্রুয়ারিতে কাপড়-চোপড় কেনোনি?
আরে গর্দভ, উৎসবে নতুন পোষাক কিনতে
হয়, ২১ ফেব্রুয়ারিতে সাদা পাঞ্জাবী কেনো।
সাদা শাড়ী কা‌লো পাড়ে যে বিবি সাহেবানরা-
গলা ফাটিয়ে ’আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো’
গাচ্ছেন, গানটি মন দিয়ে শোন। দেখো চারপাশটা
কেমন একটা উৎসব উৎসব আমেজ,
ফেব্রুয়ারি! ফেব্রুয়ারি, অবধারিত উৎসব।
আহ!
আমাদের শহীদ দিবস!

---২১.০২.২০২১---