রহমতের মিনি
রহমতের আমিনা
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প অবলম্বনে)
মনোতোষ কুমার মজুমদার
ছোট্ট মেয়ে মিনি আর কাবুলদেশের রহমত।
বয়স তাদের দেয়না বাঁধা গড়তে মায়ার ইমারৎ।
দুইজনেতে বন্ধু যেন আহা! কীযে সুখ।
মিনির মুখেই দেখছে তাহার আমিনারই মুখ।
পেটের টানে রহমতের দূরদেশেতে পাড়ি।
আমিনা তার নিজের মেয়ে আজকে ছাড়াছাড়ি।
বাবা-মেয়ের অসীম বাঁধন যায়কি তাকে ছেঁড়া।
যে ভগবান সেইতো খোদা মানবতায় মোড়া।
কাবুলিওয়ালা রহমত যে ব্যবসা করে ফেরে।
প্রাণের টানেই মিনির বাঁধন ছিঁড়তে না সে পারে।
মিনির সাথে করে খেলা মেয়ের স্পর্শ পেতে।
মিনিও পায় সঙ্গী যে এক বন্ধু রহমতে।
এমনি করেই যাচ্ছিল দিন কাটছিল যে রাত।
আমিনা আর মিনির বাঁধন রহমতের সাথ।
হিন্দুর মেয়ে মিনি আর আমিনার বাপ মুসলমান।
কী হল তায় , মানবতায় আল্লা যে সেই ভগবান।
এমনি যখন যাচ্ছিল দিন দারুণ হেসেখেলে।
শয়তানের কারসাজিতে রহমত গেল জেলে।
বছর সাতেক থাকল জেলে ভাঙা বুকটি নিয়ে।
সময় নদী যায় এগিয়ে অতীত স্মৃতি নিয়ে।
মিনি এখন ছোট্টটি নয় বয়স তাহার বারো।
বকম বকম কয়না কথা একটু জড়সড়।
সময়ধারা মেনে মিনির বিয়ের দিনটি এলো।
কাটল সাজা রহমতের সেও ছাড়া পেল।
এদেশ ছেড়ে যাবে চলে নিজের মেয়ের কাছে।
মিনিও যে তার একটি মেয়ে এই দেশেতে আছে।
ধর্ম দিয়ে যায়না মাপা বাপের হৃদয়খানি।
বাপের কাছে আমিনা যে সেইতো আবার মিনি।
এসে দেখে মিনির বাড়ি সাজোসাজো রব।
ছোট্ট মিনির আজকে বিয়ে ব্যস্ত আছে সব।
মিনির সাথে কইবে কথা একটি বারের জন্যে।
একটি নয় তারতো আছে দুইটি হীরক কন্যে।
খোকির সাথে বলবে কথা এই তাহারই আশা।
কাবুল দেশের পেস্তা-বাদাম ঝুলির মধ্যে ঠাসা।
ছোট্ট মিনি বলত কেবল কী আছে ঐ ঝুলিতে।
আহা! কী সুখ ছিল ঐ আধো আধো বুলিতে।
হাতী আছে এই ঝুলিতে বলত রহমত।
মিনির সবকথাতেই রহমতের ছিল সহমত।
আজকে মিনি কত্ত বড়ো লাজুক একটি মেয়ে।
কয়নি কথা একটিও সে রহমতকে পেয়ে।
স্মৃতি তাহার ভুলে গেছে রহমতের নামই।
এই স্মৃতি টুকুই রহমতের হীরের চেয়ে দামী।
মিনির জন্যে আজও সে যে আনল পেস্ত-বাদাম।
হয়ত মিনি বুঝবে না এই উপহারের দাম।
নয়তো কেবল পেস্তা-বাদাম এতো ভালোবাসা।
দেশ কাল আর ধর্ম ভেদে একই তাহার ভাষা।
মিনির মুখে তার আমিন উঠল যেন ভেসে।
তার আমিনাও এমনি বড়ো হয়েছে কাবুলদেশে।
বুক পকেটের জীর্ন কাগজ ছোট্ট হাতের ছাপ।
আমিনা তায় আছে মিশে রহমত তার বাপ।
চোখের জলে ভরলো কাগজ ছাপ গেল যে মুছে।
আমিনার বাপ কাঁদছে যে আজ মিনির পিতার পিছে।