বর্ষায় টইটম্বুর মাঠ-ঘাট, নদী ও পুকুর ।
না’য়ে চড়ে গাঁ’য়ে যায় ‘সোহাগী বধূয়া’ নূপুর ।
হাতে-তে সোনার কাঁকন, কাজল টানা বাঁকা,
খোঁপায় রুপোর কাঁটা, কেশভারে গাঁথা ।
কানেতে ঝুম্কো লতা, হীরক বসানো সিতাহার গলে ।
না’য়েতে বসে যেন ‘পটে আঁকা বিবি’ টা চলে ।
হাঁটুতে চিবুক রেখে স্বপ্নে বিভোর থাকে - স্বপ্নিল চোখে ।
নাকছাবিটা থেকে থেকে চম্কে ওঠে মেঘ ভাঙা রোদে।
নৌকা জল কেটে, ভিন গাঁ পিছে ফেলে, বহে ছলাৎ ছলাৎ ।
স্নিগ্ধ বাতাসে, দু’গোছা চুল এসে, গালে পড়ে হঠাৎ হঠাৎ ।
তালপাতার বাঁশিতে পল্লী সুর তোলে, মাঝির ছেলে ।
আঁখি দু’টি মুদে, গানে-সুরে-তালে বধুয়ার হৃদয় দোলে ।
নৌকা অবশেষে দুলে দুলে ভেড়ে - এসে গাঁ’য়ের ঘাটে।
পটের বিবিটা, আল্তা রাঙানো পা, আলতো মাটিতে রাখে।
মা-বাবার বুকের ধন ক’মাস পরে আজ নায়রে এসেছে
ভাই-বোন-মা-বাবা-পরশিও কিছু তাই ঘাটেতে জুটেছে ।
মা ত্বরা চিনি মধু শরবত যতনে মুখেতে ধরে ।
বাবা দ্রুত ঝোলা হাতে ছোটে গাঁ’য়ের বড় বাজারে ।
ছোটবোন টাপুরটা বাস্ত রয়েছে খুব পাকের ঘরে
ভাল মন্দ সব কিছু থাকা চাই রাতের খাবারে ।
খাওয়া-দাওয়া শেষে, আঙ্গিনাতে বসে-সব গল্পে মশগুল ,
গল্পে গল্পে বোঝে, নূপুরটা ভাল আছে, ভাল শ্বশুরকূল ।
সুখে আছে বেশ সে, শহরেতে স্বামী তার বড় চাকুরে ।
বরের সোহাগী বটে, বড় স্নেহ করে তাকে শাশুড়ি শ্বশুরে।
মা বোঝে অনুমানে - মেয়েটার রয়েছে খাবারে অরুচি
কাছে টেনে আড়ালে, চুমু দিয়ে কপালে, বলে - ‘তুই কি পোয়াতি?’
প্রভাতে উঠিয়া মা শিন্নি পাঠায় ত্বরা পীরের মাজারে
সুখে সদা রেখো খোদা - আমার প্রাণের এই বাছাধনেরে ।
তিন দিন কেটে গেল, ফিরতে হবে কাল শ্বশুরালয়ে ।
‘সোহাগী বধূয়ার’ তরে শহরে রয়েছে বর পথপানে চেয়ে ।
নৌকা তৈরী ঘাটে, পাটাতনে শীতল পাটিটা বিছানো ।
নূপুর ও তৈরী, সাথে নিয়ে পিঠা-পানি মায়ের পাকানো।
নৌকাতে এসে বসে চোখ ছল ছল নিয়ে, কদম্বুচি শেষে।
বিদায় জানাতে এসে সখি-সখা-পরশির চোখে জল আসে।
মাঝি ভাই দু’হাতে বৈঠা মারে - বয়ে বয়ে নৌকা যায় অদূরে।
মা-বাপের গাঁ ছেড়ে ‘সোহাগী বধুয়া’ - চলেছে আজ বরের ঘরে।
সোনার এই দেশ জুড়ে রয়েছে কত শত সোনার মেয়ে -
কোথাও সে কন্যা, কখনও জায়া বা মায়ের রূপে ।
সুখে থাক সকলেই - ত্রীরূপে নারীরা যেখানে যেমন সদা,
দেশ জুড়ে ফুটে থাক অজস্র সুবাসিত শিমুল, গাঁদা ।