এক প্রাচীন প্রসিদ্ধ মহানগরীর
অভিজাত এক মহল্লা।
ভবঘুরে বেকার যুবকের স্বপ্নমহলটি
ছিল হল্দে দোতলা।
মহলের অন্দরে বেড়ে ওঠা
অতী আদুরী কন্যা,
উনিশে পা রাখা যুবতি
রূপবতী, মৃগনয়না।
প্রাচীন সে মহলের অস্তরচটা
পরিচর্যাহীন চিলেকোঠা।
উম্মুক্ত ছাদের দরজা, ভাঙ্গাঁ ছিট্কানি
রাখেনা ধরে জানালাটা।
টিপ টিপ জ্বলে ঝোলানো ছোট্ট বাতি
আলো ছায়ার চিলেকোঠা।
দেওয়াল ঘেঁসে জানালা পাশে পাতা
ঠাঁসাঠাঁসি চারপায়াটা।
ভবঘুরে বেকার যুবকের জুটেছিল আশ্রয়
সে চিলেকোঠায়।
জীবকিার তরে দিনভর ঘুরে ফুটো পকেটে
ফেরে সন্ধ্যাবেলায়।
আরও একটি বিফল দিনের অবসানে
বিষন্ন বদনে
চার আনার বিড়িতে আগুন ধরিয়ে ভাসে
আগামীর স্বপ্ন সোপানে।
আড়ি করে ছাড়াছাড়ি ছেড়েছুড়ে ঘরবাড়ি
বিবাগী কোন অভিমানে!
খেয়াল করে রূপবতী আড়ি নেই
শুধু তার অশ্রু আর নয়নে।
কাছে গিয়ে তার বোঝা কি জানার
নেই কোন উপায়।
মনের মমতা তাড়িয়ে ফেরায়
কেমনে মমতার হাতটি বাড়ায়।
সময় কিছু পেরিয়ে কিছু দ্বিধা সরিয়ে
বিনীত শুধায়।
শুনে কিছু কিছু ঢেলে মমতাটুকু
বাঁচার সাহস যোগায়।
যুবকের ডুবু ডুবু স্বপ্নভেলায় যেন
আবার লাগল হাওয়া,
ঝড়া পালকের পিয়াসী পঙ্খিরাজের
আবার উড়তে চাওয়া।
শুধু মমতা নিয়ে হিতসাধনায়
যে অঙ্গঁনা কাছে এসেছিল,
যুবকের যাদু মেশা প্রগাড় প্রেম
একদা তাকে গ্রাস করেছিল।
ভাবেনি রূপবতী এহেন অসম প্রেমে
হারবে কিছুতেই।
তবু যুবককে বাচাঁতেই কেঁদেছিল,
হেরেছিল অসম প্রেমেই।
মায়া মমতা মাখা যে করপল্লব
শুধু সেবিকা হয়েছিল।
পরিশেষে সে হাতেরই অনামিকায়
বাগ্দানের অঙ্গুঁরী পড়েছিল।
অসম ভালোবাসাকেই বরমাল্য পড়িয়ে
রমণী হল বরবর্ণিনী ।
ত্রিশ বছর রইলো সংসার জীবনে
অতুল্য সংসিদ্ধ গৃহিণী।
অবদান শত রেখে প্রতিদান কিছু না নিয়ে
মুকুলধারা গৃহকোনে বিছায়ে,
পাড়ী দিল এক বসনে ধবল পঙ্খিরাজে
আমাকে আর জগৎ কাঁদায়ে।
আজ নিশিথে একেলা বসে সিক্ত চোখে
খুঁজি আকাশের সপ্তঋষী।
তারাদের মিটিমিটি মিলিয়ে দিয়ে যায়
কৃষ্ণপক্ষের শশী।
নিজ গৃহের এ নবীন চিলেকোঠায় নির্ভিতে
দেখি চন্দ্রকরের শোভা।
হিয়ার বীণাটা সুর তাল ভুলেছে,
বিরহ বেদনায় বোবা।
স্মৃতির পটে ভেসে আসে সে চিলেকোঠা
যেথায় এসেছিল প্রথম ফাগুন।
স্বপ্ন ভেঙ্গে শিউরে উঠে দেখি এ চিলেকোঠায়
আজ জ্বলিছে আগুন।
সে ফাগুনের চিলেকোঠা স্মৃতিতে ধরে,
এ আগুনের চিলেকোঠা গায়ে জড়িয়ে
মুকুলবিহীন কাননে আমার
আজ কাটিছে বৃক্ষাদনী সম জীবন ।