নিশিথে তোমার দেউরিতে
এসে দাঁড়ালাম।
প্রতীক্ষমাণ।
ফটক খুলে ডাকবে তুমি
দেউরিতে দাঁড়িয়ে আমি।
ক্ষণেক পরে
নষ্টা তুমি এসে দাঁড়ালে
প্রধান ফটকের খিল খুলে।
এক নষ্ট আমি
তোমাকে অনুসরনে চলিলাম অন্দরে।
একই পূত জ্যোৎস্না স্নাত রজনী
হবে বুঝি আজ নষ্টা যামিনী!
ধোপদুরস্ত কুর্তার পকেট থেকে
বেলি ফুলের মালাটি বের করে
তোমাকে দিলাম।
বললাম,
তোমার বেণীতে জড়ালে বেশ মানাবে।
আরাম কেদারায় বসে
তুমি বললে,
চা, কফি, না-কি ঠান্ডা,
বলো কি খাবে?
কফি হাতে তুমি আমি
খোলা বাতায়নে এসে বসলাম।
কফির কাপেতে চুমুকে চুমুকে
ক্ষণেক অপলক নয়নে
তোমার মৃগনয়নে বন্দী থাকলাম।
ততক্ষণে বাতায়ন আর
তোমার প্রসন্না মুখচন্দ্র
চাঁদের আভায় দীপ্তিমান।
তুমি বললে,
আজ কি পূর্ণিমা?
বললাম,
লোকে বলে নষ্টা পূর্ণিমা।
বাতায়নে বসে
বেণীর বিনুনি খুলে
তুমি চুল এলালে।
রাত জাগা কোন পাখির
কুহুকেকা শোনা গেল দূরে।
বললে তুমি,
রাত কত হলো ?
বললাম,
বুঝিবা ত্রিপ্রহর।
খানিক পরে ফুটবে প্রভাতের আলো।
ঘুমগুলো সোপান বেয়ে
এক-পা এক-পা করে
নেমে এলো দু’চোখ ভরে ।
রাতের শেষে জ্যোৎস্না ঢেকে
নেমে এলো ঘন কুয়াশা।
এলো চুলে মোর মুখ পানে চেয়ে
তুমি রইলে ঠাঁই বসা।
বললাম আমি,
কুয়াশায় খোলা কেশ ভিজে হয়েছে সারা
মাথাটি আঁচল দিয়ে ঢেকে নাও প্রিয়া
চন্দ্রানন খানি নহে ঢেকে ।
প্রভাতে জাগিয়াই যেন
চোখ পরে তোমার চোখে।
কাক ডাকা ভোরে
তুমিই জাগালে।
দেখি তেমনই বসে তুমি
ঘুমে ঢুলু ঢুলু মৃগনয়নে
চেয়ে আমার প্রসুপ্ত মুখপানে ।
প্রভাত আসিল ।
প্রত্যাবর্তনে পা বাড়ালাম ।
দেউরি খুলে বিদায় জানাতে দাঁড়িয়ে
আনত নয়নে অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠে
বললে,
জনাব । আদাব।
চোখের দুপাটি এক না করে
ঠাঁই জেগে কাটালাম রজনী ।
জানা গেল না, কে আপনি?
এই আনর্ত কুঠি বাড়িতে
আগমনের হেতু ছিল কি?
বললাম,
আমি এক নিন্দিত আনখা লেখক ।
নাম ধাম নেই ।
লিখি কখনো কখনো
কোন কোন নিন্দিত মানুষের জীবন কাহিনী ।
তুমি তেমনই ।
বিদায় জানিয়ে,
ফেরার পথে পা বাড়ালাম।
দেউড়ীতে খিল আঁটার গোঙ্গানির শব্দ পেলাম।
পুনর্বার।
দু’কদম পিছু হাটলাম।
একখানা চিরকুট
ফটকের দোপাল্লার মধ্যখানে আঁটিয়া দিলাম।
লিখিলাম,
তোমার কুঠিতে কাটিয়ে
কুয়াশা জ্যোৎস্না ভেজা এক রজনী
জেনেছি তোমার বীতশ্রদ্ধ জীবন কাহিনী।
কোন এক বহুপত্নীক লম্পট সওদাগরের
তুমি হতভাগিনী দুয়ো রানী।
ওগো অভাগিনী,
কে কোন মুখে বলে --
নষ্টা তুমি, নষ্ট আমি আর নষ্টা যামিনী ?