★মুক্তক ছন্দ নিয়ে বিভ্রান্তির সমাধান:-
-----------------------
অনেকেই মনে করেন যে চরণের পর্বগুলো বিভিন্ন মাত্রার হলে তা অক্ষরবৃত্তে মুক্তক! আসলে তেমন ভাবনা ভুল!
প্রতি দুই চরণে পর্বসংখ্যা কম-বেশি হলে এবং অন্ত্যমিল থাকলে সমিল মুক্তক ও অন্ত্যমিল না থাকলে অমিল মুক্তক হবে!
যে মুক্তক কবিতায় কোন ছন্দের নির্দিষ্ট মূলপর্ব মেনে চলা হয়, তাকে সেই ছন্দের মুক্তক কবিতা বলা হয়! যদি অন্ত্যমিল থাকে তবে তা সেই ছন্দের সমিল মুক্তক এবং অন্ত্যমিল না থাকলে তা অমিল মুক্তক কবিতা!
★★★বিঃদ্রষ্টব্য:-
গদ্য ছোট বা ক্ষুদ্র হলে তাকে "গদ্যিকা" বলা যায়; অর্থাৎ তা গদ্যাংশ বা গদ্যিকা!!
তবে গদ্যকবিতাকে "গদ্যিকা" বলার কোন বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই! কারণ অমিল মুক্তক বা নঞ'ছন্দ মুক্তকে লেখা কবিতা বা গদ্যকবিতা'-কে "গদ্যিকা" বলে আখ্যা দেয়া উদ্ভট চিন্তাধারা বা পাগলামি!*****
★মুক্তক ছন্দঃ
-------------------
অসমচরণের ছন্দোবদ্ধ পদ্যকেই বলা হয় মুক্তকছন্দের পদ্য । এ ছন্দের প্রথম প্রয়োগ ও ব্যাপক প্রসার ঘটান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । নজরুলও মুক্তকছন্দের একজন দক্ষকবি ছিলেন। মাইকেল মধুসূদনের অমিত্রাক্ষরসহ নানাছন্দের মতন মুক্তকছন্দেও কিন্তু গতিময়তা বিদ্যমান। আর মুক্তকছন্দে অক্ষরসংখ্যা অসমান অর্থাৎ পয়ার ও অমিত্রাক্ষরছন্দের মতো পঙক্তির মাত্রা ও পর্বসংখ্যা নির্দিষ্ট নয় । এ ছন্দের পর্বগঠন, স্বর, মাত্রা যেকোনো ছন্দের চালেই হতে পারে আবার নাও হতে পারে। এ ছন্দ প্রধানত ০২ প্রকার!
যথাঃ [০১]ছন্দোবদ্ধ মুক্তক(অমিল বা সমিল)
[০২] 'নঞ'ছন্দ মুক্তক(অমিল বা সমিল)
★ [০১]ছন্দোবদ্ধ মুক্তকঃ
যে কবিতা অক্ষরবৃত্ত বা স্বরবৃত্ত বা মাত্রাবৃত্তের নির্দিষ্ট পর্ববিভাজনে লেখা তা সেই ছন্দের মুক্তক কবিতা! বুঝার সুবিধার্থে নিচে উদাহরণ দিচ্ছিঃ
*স্বরবৃত্তে মুক্তকঃস্বরবৃত্তে প্রধান পর্ব হয় ৪ মাত্রার! তাহলে স্বরবৃত্তে মুক্তক কবিতার কাঠামো হতে পারে নিম্নরূপঃ
৪
৪
৪+১
৪+৪+৪+১
৪+৪+২
৪+২
৪+৪+৪+৪+৪+১
৪+১
৪+৪+৩
৪+৩
৪+৪+৪+৪+৩
৪+৩
৪+১
৪+৪+৪+১
*মাত্রাবৃত্তে মুক্তকঃ-মাত্রাবৃত্তে পর্ব হয় ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ মাত্রার, সেক্ষেত্রে মাত্রাবৃত্তে মুক্তকের চরণকাঠামো নিম্নরূপঃ
৫+১
৫+৫+৫+১
৫
৫
৫+৩
৫+৫+৫+৩
৫+৪
৫+৫+৪
৫+২
৫+৫+৫+৫+২
৫+৫+৩
৫+৫+৫+৩
*অক্ষরবৃত্তে মুক্তকঃ-অক্ষরবৃত্তে মূলপর্ব ৬, ৭, ৮, ১০, করা যায়! আর যে মুক্তকে অক্ষরবৃত্তের নির্দিষ্ট পর্ববিভাজন মেনে পর্বসংখ্যা কম-বেশি করে কবিতা লেখা হয় তা অক্ষরবৃত্তে মুক্তক! অক্ষরবৃত্তে মুক্তকের কাঠামো মূলপর্ব ঠিক রেখে নিম্নরূপে করা যায়ঃ
৮+২
৮+৮+২
৮
৮
৮+৮+৮+৪
৮+৪
৮+৮
৮
৮+৮+৫
৮+৫
৮+৬
৮+৮+৬
৮+২
৮+২
৮+৮+৩
৮+৩
৮+৮+৮+৬
৮+৬
৮+৭
৮+৮+৮+৭
*অক্ষরবৃত্তে নঞ ছন্দঃ
---------------------
বাংলা কবিতার ত্রিশের দশকের গুরুত্বপূর্ণ কবিরা অক্ষরবৃত্তের উপর প্রচুর কাজ করেছেন এবং একে একটা মুক্ত রূপ দিয়েছেন; যা অক্ষরবৃত্ত ছন্দের মাত্রা গণনার নিয়মকে ঠিক রেখে পর্বে মাত্রা বাড়িয়ে কমিয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। উঁকি দিয়েছে অক্ষরবৃত্তের নতুন ধারা। অক্ষরবৃত্তের এই নতুন রূপ হলো “অক্ষরবৃত্তে নঞ ছন্দ"! নাই অর্থে নঞ। অর্থাৎ সাধারণভাবে দেখলে কবিতায় ছন্দ নেই, কিন্তু বিশেষভাবে বিশ্লেষণ করলে ছন্দের দৃঢ় বন্ধন দৃষ্টিগোচর হয়।
অক্ষরবৃত্তে 'নঞ' ছন্দে কবিতা লেখার উপায়ঃ
এ ছন্দে লেখা কবিতাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যবেক্ষণ করলে যা ধরা পড়বে তা হলো:
(১) অক্ষরবৃত্ত ছন্দের মাত্রা গণনার নিয়ম ঠিক থাকবে।
(২) প্রতিটি পর্বে জোড় বা বিজোড়সংখ্যক মাত্রা থাকতে হবে।
(৩) পর্বে মাত্রাসংখ্যা ২ থেকে শুরু করে ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, যে-কোনো সংখ্যক রাখা যেতে পারে।
অক্ষরবৃত্তে নঞ'ছন্দে কবিতা লেখার সময় যদি একটা বিশেষ নীতি মেনে চলা হয় তবে উপরের ৩টি শর্তই একসঙ্গে পূরণ করা সম্ভব। নীতিটি হলো:
জোড়ে জোড়, বিজোড়ে বিজোড়।
তার মানে জোড় মাত্রার শব্দের পাশাপাশি জোড় মাত্রার শব্দ এবং বিজোড় মাত্রার শব্দের পাশাপাশি বিজোড় মাত্রার শব্দ বসানো। এরপর ইচ্ছেমতো পঙ্ক্তি তৈরি করা হলেও ছন্দের কোনো বিচ্যুতি ঘটে না।” (হাসান আল আব্দুল্লাহ)
★কাঠামোঃ
অক্ষরবৃত্তে নঞ'ছন্দের কবিতা উল্টাপাল্টা পর্বের চালে হতে পারে! এখানে পর্বের মাত্রা ও সংখ্যা কম-বেশি থাকলেও পর্বের মাত্রা জোড়ে জোড় বা বিজোড়ে বিজোড় থাকে! যেমনঃ
৪
৪+৬
৭+৭+৩
৯+৭
৮+৬+৬
৮+৮+৪
৪+৮
১০+৬
৮+৮+৪
৬+৮+৪
এমন উল্টাপাল্টা পর্বের চাল থাকলে তা অক্ষরবৃত্তে 'নঞ' মুক্তক কবিতা!
★উদাহরণঃ
অক্ষরবৃত্তে 'নঞ' মুক্তক ছন্দের কয়েকটি উদাহরণ দিইঃ
মুক্তকছন্দের প্রবর্তক রবীন্দ্রনাথ এর বলাকা কাব্যগ্রন্থের একটি অক্ষরবৃত্তে সমিল 'নঞ' মুক্তক ছন্দের কবিতার উদাহরণ দিচ্ছি–
(বাকিটা পরবর্তি পর্বে থাকছে)