তাকে আমি দেখেছিলাম
এক পশলা চাহনি ফেলে
রাতের গা ঘেষা জ্যোৎস্নার আলোয় যেমন দেখি তোমায়
তেমনি দেখেছি কাল-ও ।
কানের পাশ দিয়ে নেমে গেছে চুলের স্রোত
আঁচলের ঝাপটায় ক্রমাগত ভেঙে ভেঙে মেদুর হাওয়ার ঢেউ
আমাকে আঘাত করে গেছে ।
কী গভীর চোখ তার
কী নিবিড় মায়ার যোগ
আমি ঘর ছেড়ে যখন গিয়েছিলাম নূপূরের টানে
সমস্ত পারাপার ভুলে তার কাছে
ইতস্তত আমাকে বলেছিল 'এসেছেন আবার ' ?
আমি নির্বাক তাকিয়ে ছিলাম
ভাবছিলাম এতদিন কোথায় ছিলে তুমি
বুকের ভিতর যে অনিবার দহন ছিল জমে
যে বিষন্ন জ্বালা বহন করেগেছি শতাব্দীকাল
তার অবসান কী এখানেই ;
নির্বাপিত প্রদীপের মতন যখন দাঁড়িয়ে ছিলাম শিয়রে
আলতো স্পর্শে আমাকে সুধেছিল ' কি ভাবছেন আবার'?
আবেগের চরম শিখরে ছিলাম তখন
অদ্ভুত শান্তির ঢেউ ;
চোখ থেকে অনর্গল বর্ষার ধারা নেমে এলে
অভিমানি কান্নায় সিক্ত হয়েছিল সে।
সমস্ত প্রনয় আমার জেগেছিল আবার
সমস্ত গানের সুর আমাদের জড়িয়েছিল
জড়িয়েছিল লতার সবুজ বাহু
উন্মুক্ত শিশিরের ফোঁটা বসেছিল আমাদের গায়ে ।
নীরবে নিভৃতিতে সমস্ত পৃথিবী আমাদের হয়ে গেলে
হঠাৎ এক শব্দ আসে ভেসে
অদ্ভুত শব্দ এক ।
শুকনো পাতার ভেঙে যাওয়া বুক
গুটি কয়েক হিংস্র হায়েনার চোখ আর ভাঁজ পড়া কপাল
বুটের আঘাতে কচলে যাওয়া ঘাসফড়িঙের গান
এগিয়ে এল......
এগিয়ে এল.....
আরও কাছে এগিয়ে এলে ভয় পেয়েছিল সে
ভয় পেয়েছিলাম আমি ;
আমি আগলে রাখার চেষ্টা করি
দু'হাত বাড়িয়ে আগলে রাখার চেষ্টা করেছিল সে
তারপর চিৎকার
ক্রমশ চিৎ্কার বাড়তে লাগল ।
আলে আলে, ধানের ক্ষেতে, জলাশয়ে
পাহাড় পর্বতে, দিঘী আর পাড়াগাঁয়ে
ছড়িয়ে পড়ল.........
ছড়িয়ে পড়ল দুজনার আর্তনাদ ।
আমি রয়ে গেলাম
চলে গেল সে...
তারপর সব থেমে গেল
থেমে গেল নদীর ঢেউ
মাঝি গেল-- মাঝি এলো
বসন্ত এলো ফিরে ।
এখন আমার মনে পড়ে
বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিয়ে বলেছিল---
এমন এক পৃথিবীর ঘুমে দেখা হবে আবার
তোমার আমার নীল নক্ষত্রের ভিড়ে ।।