কবিতা এবং দর্শন একসাথে যায় না, কেউ-কেউ বলেন; আবার দুটো একসাথে যায়, এও দাবী করেন অনেকে। প্রথম দলের কবি এবং পাঠকদের কথাঃ কবিতা লিখছি, পড়ছি, এর জন্যে দর্শন-সচেতনতার প্রয়োজন পড়ে না;- এরা হয় অজ্ঞ-অসচেতন না হয় দর্শনের মতোন জটিল বিষয়ে ঘুরপাক খেতে অনিচ্ছুক। দ্বিতীয় দলের কবি এবং পাঠকরা- দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি মজবুত রেখে কবিতা রচনা এবং পাঠে প্রয়াসী; এরা বোধের সরলরেখা মাথায় এঁকে কাব্যাভিযানে/কবিতাতালাশে নামার পক্ষপাতী। দ্বিতীয় দলের সাথে সহমত পোষণ করে বলছিঃ দর্শন-সচেতন কবি এবং পাঠকই কাম্য। এ-ক্ষেত্রে কবিকে অবশ্যই দর্শন-সচেতন হবে; তবে দর্শন-সচেতনতা কাউকে কবি হবার নিশ্চয়তা দিতে পারে না একথাও মাথায় রাখা প্রয়োজন। কবি— ক্রান্তদর্শী, কারণ বস্তুর শেষ পরিস্থিতি/অবস্থা/আচরণ অনুভবের/আবিষ্কারের ক্ষমতা তার রয়েছে। কবি যদি শুধু কবি হন, কিন্তু দর্শন-সচেতন না হন- তবে তার কাব্যাচরণে জীবন এবং বাহ্যজগতের কতিপয় বিবরণ পাওয়া যায় মাত্র। অথচ কবি যদি দর্শন-সচেতন হন- তার কবিতায় জীবন এবং বাহ্যজগতের কাব্যিক বিবরণ এর পাশাপাশি পাওয়া যাবে ছন্দ-যুক্তির সমন্বয়ে হাজিরকৃত চমৎকার যৌক্তিক বোধ-ব্যাখ্যা। কবিতা এবং দর্শনের সম্বন্ধ নিকটতম এবং নিগূঢ়। আদিকালের রচনায়ও ‘সাহিত্য ও দর্শন’ (Literature and Philosophy) যুগপৎ ছিলো। পাশ্চাত্যের দান্‌তে (Dante Alighieri), গ্যোতে (Johann Wolfgang von Goethe), ওয়ার্ডস্‌ওয়ার্থ (William Wordsworths)- এদের কাব্যে দার্শনিক বোধের বুনন ছিলো বলেই এরা কালোত্তীর্ণ। আমাদের পঞ্চপাণ্ডবরাও দার্শনিক জায়গায় গাধা ছিলেন না এবং তাদের থেকেই এ-প্রতিভাত হয়— দেশ-দুনিয়া না-জানা, দর্শন-অজ্ঞ কেউ ভবিষ্যতে শক্তিমান কবির মর্যাদা পাবেন না, বোধ করি। তারা বৌদ্ধবাদ (Buddhism), মার্কস্‌বাদ (Marxism), পাশ্চাত্যের সাহিত্য এবং দর্শন ঘনিষ্ট আন্দোলনগুলোর ফসল গিলেছেন শরবতের মতোন। আর তাদের পূর্বেইবা বাঙলার কোন্‌ প্রভাবশালী কবি দার্শনিক জায়গায় অচোস্ত ছিলেন? ছেঁউড়িয়ার অই লালন-ও তো ‘কাণ্ডজ্ঞান’হীন ছিলেন না, সম্ভবত তার গীতিকবিতাই বাউলবাদ’র (Baulism) একটা সুবিন্যস্ত রূপরেখা এঁকেছে। আর জোড়াসাঁকোর রবীন্দ্রনাথ’র অই গীতাঞ্জলি-তে (১৯১৩) কোন্‌ কাব্য-বোদ্ধা আলোচক খুঁজে পাবেন না অধিবিদ্যা (Metaphysics) এবং ভাববাদ’র (Idealism) প্রচ্ছন্নতা-প্রশ্রয়। লালন-রবীন্দ্র তো পরের মামলা, বাঙলাসাহিত্যের আদি-দৃষ্টান্ত চর্যাপদ (Charyapada)-এ সাঁতরিয়েও চর্যাপদীদের দর্শন-সচেতনতার সন্ধান পাই। এ-পদগুলোতে মহাযান (Mahāyāna) বৌদ্ধদর্শনের (The Bauddha Philosophy) বিভিন্ন সম্প্রদায়ের (Schools) মতগুলোর সহযোগ লক্ষণীয় আর প্রধানরূপে পরিলক্ষিত হয় নাগার্জুনপাদ (Acharya Nāgārjuna) প্রবর্তিত শূন্যবাদ (Sunyavada) (একে মাধ্যমিকবাদ [Mādhyamaka] বা আপেক্ষিকবাদও [Theory of Relativity] বলা হয়।[১]) এবং মৈত্রেয়নাথ (Maitreya-nātha)-অসঙ্গ (Asanga)-বসুবন্ধু (Vasubandhu)-দিগ্‌নাগ (Dignaga) প্রবর্তিত বিজ্ঞানবাদ বা যোগাচারবাদ (Yogācāravada)।[১] এভাবে বলতে গেলে ‘বাঙলা কবিতায় দার্শনিকতা’ নামক একটি গদ্য দাঁড়িয়ে যেতে পারে; আমার লক্ষ্য সেদিকে নয়। দৃষ্টান্তবাদী (Drishtantoist) মানস দ্বারাও যে কবিতা পরখ করা বা কবিতার স্বাদ নেয়া যেতে পারে এবং কবিতা রচিত হতে পারে— এ-বক্তব্যের সমর্থন দিতেই ভনিতাটুকু রাখতে হলো। এর অর্থ এ-নয়, আমি এ-মতাদর্শের সমালোচনা করবো না।

     শুরুতেই ‘কবিতার অবস্থান’ বিষয়ে দৃষ্টান্তবাদীদের বক্তব্য হাজির করা প্রয়োজন। স্বাভাবিকভাবে কতকগুলো শব্দের শৃঙ্খলিত ব্যবহার তথা কতকগুলো পঙ্‌ক্তির সংগতিপূর্ণ সমাবেশকে কবিতা বলে, অনেকে;- এ-বলার প্রতি দৃষ্টান্তবাদ (Drishtantoism)- এর সায় নেই। কবিতা— মেধা-মন-মননের, শৈল্পিক-ভাষিক উৎসারণ, উৎকৃষ্টতম শব্দের প্রকৃষ্টতম যৌক্তিক বিন্যাস—,[২] আগেই বলেছি অন্য লেখায়। দৃষ্টান্তবাদ অনুসারে, ‘পঙ্‌ক্তি’  (verse) কবিতা নয়— কবিতার শরীর বা দেহ (Structure) মাত্র; এমন দেহ, যার ওপর ভিত্তি করে পৌঁছনো যায় কবিতার বাড়ি— পাওয়া যায় কবিতার তালাশ। অর্থাৎ, পঙ্‌ক্তি ছাড়া কবিতার অনুসন্ধান ব্যর্থ। (এখানে বলা প্রয়োজন, দৃষ্টান্তবাদ পঙ্‌ক্তি-কে কবিতার দেহ বললেও এক্ষেত্রে আত্মার অস্তিত্ব আশা করা বাহুল্য। যেহেতু এ-দর্শন, আত্মার নয় মনের অস্তিত্বে আস্থাশীল।[৩]) শব্দ বা পঙ্‌ক্তির আশপাশে বিচরণশীল এ-কবিতার প্রকৃত বাড়ি বা অবস্থান পাঠকের অভ্যন্তরে, দৃষ্টান্তবাদ অনুসারে। সবুজ তাপস বলেনঃ “একটা লেখা বা কতকগুলো পঙ্‌ক্তি তারা(পাঠক) যখন পড়েন, তা যদি তাদের অনুভূতির সংলগ্ন হয়, তা যদি তাদের বোধ্য অথবা জ্ঞাতব্য একটা বার্তা সরবরাহ করে, তা যদি তাদের মধ্যে একটা বোধ জাগানোর পক্ষে হয়, তখনই তা তাদের কাছে কবিতাবাহী মনে হয়।”[৩] অর্থাৎ, কবিতা বিষয়টি প্রধানত আন্তরিক এবং মননির্ভর; দৃষ্টান্তবাদীরা দাবি করেন। দেকার্ত (René Descartes)-এর মতে, বোধের উপকরণ ভাষা হলে তার সাথে সুর মিলিয়ে বলা যায়- কবিতার উপকরণই পঙ্‌ক্তি।

     কবিতার অবস্থান পাঠকাভ্যন্তরেই- এটি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তাপস অগ্রজদের: ফার্দিনান্দ দ্য সস্যুর (Ferdinand de Saussure), নোয়াম চম্‌স্কি (Noam Chomsky), জোনাথন কুলার (Jonathan Culler), জ্যাক দেরিদা (Jacques Derrida) ও ইমানুএল কান্ত (Immanuel Kant)-দের পদাংক অনুসরণ করে হেঁটেছেন। তার মতে, ব্যবহৃত শব্দের ভিন্ন-ভিন্ন অর্থনির্দেশ, দ্বৈতার্থকতা এবং ব্যক্তিবোধের তারতম্যের কারণে নির্দিষ্ট কিছু পঙ্‌ক্তি একাধিক কবিতার ইঙ্গিত দিতে পারে;— ইঙ্গিত দিতেই পারে। কারণ, মানুষের ভাষাবোধ বৈচিত্র্যপূর্ণ। মানুষ তো মার্কস্‌ (Karl Marx) ও ফ্রয়েড-এর (Sigmund Freud) মতে কেবল অর্থনীতি এবং যৌনতার জালেই বন্দী নয়, ভাষাজালেও তো। যে-ভাষার কোনো দৃশ্যমান-বাস্তব অস্তিত্ব না থাকলেও, সে-ভাষার কাছেই আবদ্ধ মানুষের সমস্ত সম্পর্কচর্চা। ভাষাদার্শনিক ম্যুর (George Edward Moore), রাসেল (Bertrand Russell), ভিতগেনস্তাইন (Ludwig Wittgenstein), কারনাপ (Rudolf Carnap)- এরা তাই বলতে চেয়েছেন: মানব-অস্তিত্বের মূলেই রয়েছে ভাষা। ডারউইন (Charles Darwin) হয়তো এ-ক্ষেত্রে একমত নন। ভাষার বিচিত্র কিসিমের ব্যঞ্জনা মানুষের ভেতরে সক্রিয় থাকে এবং এ-বৈচিত্র্যের কারণেই বিভিন্ন বোধের উদ্গার। এ-ব্যঞ্জনা তথা বোধের পেছনে কী নিহিত? তাপস এ-প্রশ্নের সমাধানকল্পে ব্যক্তির অবস্থান, সময় ও যৌক্তিক আত্মোপলব্ধিকে হাজির করেছেন। অবশ্যি, প্রথম দু’টির কথা উল্লেখিত দার্শনিকদের কেউ-কেউ বলেছেন; আর তাপস এখানে ‘যৌক্তিক আত্মোপলব্ধি’ (Logical self-realization)-এর বিষয়টি নতুন যোগ করেছেন। তবে এতে প্লেতো’র (Plato) বিখণ্ডিত সরলরেখার যৌক্তিক অনুধাবন বা বুদ্ধি’র ছায়া আছে বলে আমার ধারণা।[৪] প্রতিটি মানুষ ভিন্ন সামাজিক-পারিবেশিক অবস্থানে বর্তমান। চম্‌স্কি বলেন— প্রত্যেক মানুষের রয়েছে নিজস্ব ভাষা-গ্রহণ ক্ষমতা বা পদ্ধতি। এবং এ গ্রহণ প্রক্রিয়াকে তুলনা করেছেন language acquisition device-এর সঙ্গে। ফলে একজনের ভাষাবোধ, মানস-অবস্থা, অভিজ্ঞতা, দর্শন.. আরেকজনের থেকে ভিন্ন কিসিমের অর্থাৎ, একজনের বোধে একটি শব্দ বা পঙ্‌ক্তি যে ব্যঞ্জনা তথা বোধের উপকরণবাহী, আরেকজনের মধ্যে তা নাও হতে পারে। এটা তিনি চম্‌স্কি’র ‘Competence’ ও ‘Performance’ মাথায় রেখেই বলেছেন। ব্যক্তি এক নির্দিষ্ট কালের মধ্যে অবস্থান করেন। অবশ্যি, এতে রাসেল’র আস্থা নেই; আমার রয়েছে, না-হলে মানবৈতিহাসের পারম্পর্য ঠিক থাকে না। ব্যক্তি এক নির্দিষ্ট কালের মধ্যে অবস্থান করায় শব্দের সাময়িক ব্যবহারও তার মধ্যে ক্রিয়াশীল থাকে,- থাকতে পারে। তাপস ‘রাজাকার’ ও ‘কালি’ এবং বাঙালি দার্শনিক যতীন সরকার’র সাহায্য নিয়ে ‘আস্তিক’ ও ‘নাস্তিক’ শব্দের অতীত ও বর্তমান ব্যবহার বক্তব্যের সমর্থনে হাজির করেছেন|[৩] কালের ব্যাপারটা তিনি সস্যুর’র ‘Paradigm’-এর মধ্য দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন— আসলে ব্যাপারটা তা-ই। একটা পঙ্‌ক্তি যে কালে রচিত হয়েছে, তখনকার পরিস্থিতি কেমন ছিলো, পঙ্‌ক্তিটির মৌলিক-চাবি শব্দের তখনকার অর্থপরিধি কী ছিলো এবং বর্তমানে কী বোঝানো হচ্ছে বা কী বুঝে নেয়া যেতে পারে— ব্যাপারগুলোও মাথায় রাখতে ইঙ্গিত করেছেন। “একটি কবিতার, প্রথম পাঠে যে বোধ পাই, পরবর্তিতে ভিন্ন বোধের উদ্ধার ঘটে; অর্থাৎ, এর স্বরূপ অনির্দিষ্ট। আবার, একেকজন একই সাথে একই কবিতায় একেক বোধ/ব্যাখ্যা পায়। একটি কবিতা একার্থবহ নয় সবার কাছে; কারণ, কবিতা থাকে পাঠকের বোধে/মনে।”[২] আমাদের লালন-ও ঝুঝেছিলেন- ‘এক দেশে যা পাপ গণ্য/ অন্য দেশে পুণ্যি তাই’। এখানে, পাঠক কোনো শব্দ বা পঙ্‌ক্তি যুক্তি প্রয়োগ করেও বোধ করতে পারেন;- কথাটা বহুলাংশে ঠিক। ভাষা বোধ করার কালে যুক্তি প্রয়োগের বিষয়টিও অস্বীকার করা যায় না। ‘আমার ইসলাম ধর্মের নাম দৃষ্টান্তবাদ’ কিংবা ‘ক্ষমার পুকুর ক্রমশ ছোট হ’য়ে যায়’[৫]- বাক্যদ্বয়কে কীভাবে যুক্তি প্রয়োগ করে বোধ করা যায়?  ‘ইসলাম’ শব্দের অর্থ যদি ‘শান্তি’ হয়, এখানে বক্তা শান্তির ধর্ম হিশেবে ‘দৃষ্টান্তবাদ’-কে জানছেন। দ্বিতীয় বাক্যে ‘ক্ষমা’ করার চিন্তা বাদ দিয়ে অপরাধের ন্যায়বিচারের দিকে ধাবিত হওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে; এটা আমার বোধ। আবার কেউ, বক্তা প্রথমটি দ্বারা ধর্মানুভূতিতে আঘাত হানছেন বলতে পারেন এবং দ্বিতীয়টি দ্বারা নির্দয় হয়ে যাওয়াকে বুঝতে পারেন। এভাবে একটা পঙ্‌ক্তিতে যা নেই, পাঠক তাও বলতে পারেন এবং বক্তব্যের সমর্থনে যুক্তিও টেনে-তুলে আনতে পারেন! ব্যাপারটা অনুবাদ-সাহিত্যে দেখা যায় হরহামেশা। এটা কবিতা পাঠকের অভ্যন্তরে থাকে বলেই। এই কারণে দৃষ্টান্তবাদ কবির চেয়ে পাঠককেই গুরুত্ব দিয়েছে বেশি- বার্থ (Roland Barthes), দেরিদা এবং কুলার’র বক্তব্য মাথায় রেখে। এ-মতবাদ অনুসারে পাঠকই কবি-সৃষ্ট টেক্সটকে কবিতা করতে পারে, কবিতা-রূপ দিয়ে থাকে। অর্থাৎ টেক্সটটির মূল্য টেক্সট্‌টির অন্তর্গত অর্থ বা তাৎপর্য নয়, পাঠকের পাঠের ওপর নির্ভরশীল। কবিতার ক্ষেত্রে পাঠকের রুচি, বোধ, দর্শন, জ্ঞান, অধ্যয়ন, দৃষ্টিপরিধি, পারিবেশিক অবস্থান এইসব প্রধানরূপে বিবেচনা করে এ-মতবাদ জোর দিয়ে বলে: কবি-সৃষ্ট টেক্সট-এর উদ্ধৃত পাঠই কবিতা।

     বোধের/মনের বাইরে কবিতা থাকে না, পঙ্‌ক্তি থাকে। বোধ/মন পঙ্‌ক্তি চুষে-চুষে কবিতা নির্মাণ করে। অর্থাৎ পঙ্‌ক্তি কবিতা নয়, বাহ্যজগতের বস্তুসংলগ্ন কতকগুলো দৃশ্যমান প্রতীকসমাবেশ। পাঠকের ভেতর থেকে কবিতা বের করে আনার মতোন সক্ষম বাক্যবাণ। কবিতা মননির্ভর এবং মন-উৎপাদিত বিষয়- তাপস এটা প্রতিষ্ঠা করার জন্যে ব্যবহার করেছেন কান্ত’র ‘জ্ঞানতাত্ত্বিক বিচারবাদ’ (Epistemological Criticism)। অবশ্যি, তিনি এটাও বলেছেন: কবিতা জ্ঞানীয় স্তরের কিছু নয়, বোধপ্রধান একটা ঘোর, যা হৃদয়ে সৌন্দর্যের প্রলেপ সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখে।[৩] এবং কেবলমাত্র জ্ঞানেন্দ্রিয় ও অন্তরিন্দ্রিয়ের সক্রিয়তার মাধ্যমেই কবিতার এই সৌন্দর্যোপভোগ সম্ভব।[৬] জ্ঞান এবং সৌন্দর্য শব্দদ্বয়ের মধ্যেকার পার্থক্য এবং সম্পর্কের ব্যাপারটি তিনি ‘বুকে বাঁধা বিজ্ঞাপন পতনোন্মুখ ফোঁটাজল পর্বত’ এবং ‘ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী’- বাক্যদ্বয় দ্বারা ব্যাখ্যা করেছেন।[৩] কান্ত’র স্কেল ব্যবহার করে বলেছেন: ‘কবিতার পেছনে দু’ধরণের ব্যাপার- মানসিক এবং বাহ্যিক, সক্রিয় থাকে। বাহ্যিক উপাদান (পরিস্থিতির নির্দেশক পঙ্‌ক্তি অথবা পঙ্‌ক্তিবেশী বিভিন্ন পরিস্থিতি) ইন্দ্রিয়পথে মনে প্রবেশ করে। মনের কল্পনাশক্তি ও স্মৃতিধর্মিতা/গুণ এ-উপাদানের ওপর সক্রিয় হয়ে এক বিশেষ অবস্থা, যা সৌন্দর্যানুগ এবং অনুভব্য, হাজির করতে পারলেই আমরা কবিতা পাচ্ছি/পাই।”[৩] কথাটি অতিমাত্রায় যৌক্তিক, আমার বোধে।

     “চারদিক নুয়ে প’ড়ে ফলেছে ফসল,
     তাদের স্তনের থেকে ফোঁটা ফোঁটা পড়িতেছে শিশিরের জল !
     প্রচুর শস্যের গন্ধ থেকে থেকে অসিতেছে ভেসে
     পেঁচা আর ইঁদুরের ঘ্রাণে ভরা আমাদের ভাঁড়ারের দেশে !
     শরীর এলায়ে আসে এইখানে ফলন্ত ধানের মতো ক’রে,
     যেই রোদ একবার এসে শুধু চ’লে যায় তাহার ঠোঁটের চুমো ধ’রে
     আহ্লাদের অবসাদে ভ’রে আসে আমার শরীর,
     চারিদিকে ছায়া-রোদ-ক্ষুদ-কুঁড়া-কার্তিকের ভিড় ;
     চোখের সকল ক্ষুধা মিটে যায় এইখানে, এখানে হতেছে স্নিগ্ধ কান,
     পাড়াগাঁর গায় আজ লেগে আছে রূপশালি-ধানভানা রূপসীর শরীরের ঘ্রাণ !”

     (জীবনানন্দ দাস। অবসরের গান। ধূসর পান্ডুলিপি ; ১৯৩৬)

     “তোমার শয্যার পাশে এসে দাঁড়ালাম নিশ্চুপ। বালিশে
     ছড়ানো তোমার চুলের ঝর্ণা। বধির রাত্রি তোমার গ্রীবা, বাহু,
     ঠোঁট, স্তন, নাভিমূল আর আশ্চর্য বদ্বীপ
     কামুকের মতো ক্রমাগত লেহন করছে। আমি
     ঈষৎ ঝুঁকলাম তোমার উপর। তোমার
     কবোষ্ণ, সুগন্ধি নিশ্বাস নিরিবিলি ছুঁয়ে যায় আমাকে।”

     (শামসুর রাহমান। নতুন নৈশ টেস্টামেন্ট। এসো কোকিল এসো স্বর্ণচাপা ; ১৯৯৫)

     “মাতাল কবিতা তোমার ওষ্ঠে ত্বকে ছড়ানো চুলে
     তীক্ষ্ণ স্তনে বসায় দাঁত,
     কেঁপে ওঠে দূর গোপন বস্তুরাশি, মাংসে নাচে
     অক্টোবরের তৃতীয় রাত,”

     (হুমায়ুন আজাদ। সবুজ সাবমেরিন। জ্বলো চিতাবাগ ; ১৯৮০)

     “রাতের এলোমেলো চুল,
     কালো জর্জেট বাতাস,
     মোমের নর্তকী যোনি,
     মাকড়সার জাল,
     কবিতার ছায়াহীন শরীর।”

     (ময়ুখ চৌধুরী। কবিতার উপাখ্যান। প্যারিসের নীলরুটি ; ২০০১)

     “নদীতে মাদুর পাতো, সে মাদুর ছন্দে ভেসে যাবে। বাতাসে বিছাও কান, পাখিরাও
     সুরে কথা বলে। মাঠে-মাঠে যত বৃষ্টি, সবই তারা জলের ঘুঙুর। এখন বেসুরো দিন,
     কথা কম, তর্ক হরে-দরে। রসময় ছন্দগুলো বেরসিকে বিরাগভাজন। তবু সুরে-সুরে
     আমি গেয়ে যাই প্রান্তরের গান। ছন্দে লেপে-মুছে রাখি কবিতার বাড়ির উঠান।”

     (আবু হাসান শাহরিয়ার। ছন্দে লেপে-মুছে রাখি কবিতার বাড়ির উঠান।)

     “প্লাস্টিক চেয়ারে বসা আমার পাশের আমারই আরেক
                   সত্তা শুনতে পেলো—
            ধর্ম আর জাতি ভাষা ও সংস্কৃতি আর
     লিঙ্গনিরপেক্ষতার রাষ্ট্রে আমার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হোক”

     (হাফিজ রশিদ খান। রাঙামাটিতে একুশে ফেব্রুয়ারি ২০১৩। রোদের পোস্টার ; ২০১৪)

     “শরীরে মেখেছি ধুলো, মহাজাগতিক কার স্বর
     ফুঁ দিয়ে নিবিয়ে দিল সব দুঃখ সুখের শহর
     তিনশ’ ঘোড়ার জিনে বাঁধা থাকে সওয়ারের ঘর
     তিনশ’ শিশুর লাশ ঘিরে থাকে তোমাকে আমাকে।”

     (খোন্দকার আশরাফ হোসেন। পাথর। তোমার নামে বৃষ্টি নামে ; ২০০৭)

     “মোরগেরা হাঁটছে, সিমগাছেরা লতাচ্ছে,
     চড়ুই ডাকছে পোঁতা বাঁশের মাথায়..

     মাছেদের ঘাইশব্দ- টুপটাপ, ঢোঁড়াসাপ
     সাঁতার কাটছে, ব্যস্ত পানিব্যাঙ...”

     (সবুজ তাপস। সচল ইমেজ। সবুজ তাপস ; ২০১৫)

     “চারণ দেখেছে এই ছবিখানি তাই
     হৃদয়ে জেনেছে শুন্যতা উড়ুমেঘ
     চারণ ভোলোনা এই ছবিখানি তাই
     বড় মায়া লাগে বড় তার উদ্বেগ

     আকাশে তখন ঝড় এসে যাবে বলে
     থমকিয়ে আছে মেঘ”

     (রঞ্জন ঘোষাল। সংবিগ্ন পাখিকূল। সংবিগ্ন পাখিকূল ও কলকাতা বিষয়ক; ১৯৭৭)[৭]

     ‘ফসল’, ‘শিশিরের জল’, ‘শস্যের গন্ধ’, ‘পেঁচা আর ইঁদুরের ঘ্রাণ’, ‘ভাঁড়ারের দেশে’, ‘ফলন্ত ধান’, ‘রোদ’, ‘ঠোঁটের চুমো’, ‘আহ্লাদ’, ‘অবসাদ’, ‘ছায়া’, ‘ক্ষুদ’, ‘কুঁড়া’, ‘কার্তিকের ভিড়’, ‘চোখের সকল ক্ষুধা’, ‘স্নিগ্ধ কান’, ‘পাড়াগাঁর গা’, ‘রূপশালি-ধানভানা রূপসী’, ‘শরীরের ঘ্রাণ’, ‘শয্যা’, ‘বালিশ’, ‘চুলের ঝর্ণা’, ‘বধির রাত্রি’, ‘গ্রীবা’, ‘বাহু’, ‘স্তন’, ‘নাভিমূল’, ‘আশ্চর্য বদ্বীপ’, ‘কামুক’, ‘লেহন’, ‘কবোষ্ণ’, ‘সুগন্ধি নিশ্বাস’, ‘মাতাল’, ‘ওষ্ঠ’, ‘ত্বক’, ‘তীক্ষ্ণ স্তন’, ‘দাঁত’, ‘গোপন বস্তুরাশি’, ‘মাংস’, ‘রাতের এলোমেলো চুল’, ‘জর্জেট বাতাস’, ‘মোমের নর্তকী যোনি’, ‘মাকড়সার জাল’, কবিতার ছায়াহীন শরীর’, ‘নদী’, ‘মাদুর’, ‘বাতাসে বিছাও কান’, ‘পাখি’, ‘সুর’, ‘মাঠ’, ‘বৃষ্টি’, ‘জলের ঘুঙুর’, ‘বেসুরো দিন’, ‘কথা’, ‘রসময় ছন্দ’, ‘বেরসিকে বিরাগভাজন’, ‘প্রান্তরের গান’, ‘কবিতার বাড়ির উঠান’, ‘প্লাস্টিক চেয়ার’, ‘সত্তা’, ‘ধর্ম’, ‘জাতি’, ‘ভাষা’, ‘সংস্কৃতি’, ‘লিঙ্গনিরপেক্ষতা’, ‘রাষ্ট্র’, ‘অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া’, ‘ধুলো, ‘মহাজাগতিক কার স্বর’, ‘দুঃখ সুখের শহর’, ‘ঘোড়ার জিন’, ‘সওয়ারের ঘর’, ‘শিশুর লাশ’, ‘মোরগ’, ‘সিমগাছ’, ‘চড়ুই’, ‘পোঁতা বাঁশের মাথা’, ‘মাছেদের ঘাইশব্দ-টুপটাপ’, ‘ঢোঁড়াসাপ’, ‘সাঁতার’, ‘ব্যস্ত পানিব্যাঙ’, ‘চারণ’, ‘ছবি’, ‘হৃদয়, ‘শুন্যতা’, ‘উড়ুমেঘ’, ‘মায়া’, ‘উদ্বেগ’, ‘আকাশ’, ‘ঝড়’— এই-যে শব্দের রেলগাড়ি বা শব্দস্রোত- প্রতিটি বাহ্য-জগতের দৃশ্যমান বা অনুধাব্য বস্তু, কাল, অবস্থা বা পরিস্থিতি এসবের নামপ্রতীক বা উপমা। ক্ষমতাবান মন বাহ্যজগতের এইসব নামপ্রতীককে কার্যকারণ সম্পর্কের ভিত্তিতে শৃঙ্খলিত করে যৌক্তিক আত্মোপলব্ধি হাজির করতে পারে। এ-উপলব্ধিটাই ক্ষমতাবান মনের অধিকারী ব্যক্তির কাছে কবিতা হিশেবে ফুটে ওঠে। তাপস এ-উপলব্ধিকে মনের ‘তরজমা’ তথা ‘কবিতা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

     কবিতার অবস্থান বিষয়ে দৃষ্টান্তবাদীদের বক্তব্য কবিতাবোদ্ধাদের কাছে বিভ্রান্তিকর মনে হতে পারে। তাদের বক্তব্য এরকম— কতকগুলো পঙ্‌ক্তি তখনই কবিতার হবে, যখন এগুলো পাঠকের বোধ-অনুকূল হবে। অর্থাৎ, যদি এগুলো পাঠকের বোধ-অনুকূল না হয়- নিছক পঙক্তিই থেকে যাচ্ছে। তারা আবার এটাও বলেন, একজন পাঠকের বোধ, মানসিক অবস্থা, অভিজ্ঞতা ও দর্শন আরেকজন পাঠকের থেকে ভিন্ন কিসিমের। এই হলে, একজনের কাছে যা নিছক পঙ্‌ক্তিসমাবেশ, আরেকজনের কাছে তা কবিতাসৃষ্টিকারী মনে হতে পারে। এ-ক্ষেত্রে পৃথিবীতে ‘অকবিতা’ ও ‘অপকবিতা’ বলতে কিছুই থাকে না। যদি না থাকে, তবে তারা কেউ-কেউ ‘অকবিতা’ ও ‘অপকবিতা’ লিখছেন বলে যে দাবি করছেন, তার যৌক্তিকতা থাকছে না। অর্থাৎ যে-সব পঙ্‌ক্তিকে ‘অকবিতা’ ও ‘অপকবিতা’র নির্দেশক বলছেন, সেগুলো কোনো-কোনো বর্গের কাছে প্রকৃত কবিতার নিদের্শক মনে হতে পারে।

     তাপস বলেন, কতকগুলো পঙ্‌ক্তি পাঠক যখন পড়েন, তা যদি তাদের অনুভূতি স্পর্শ করে- তা যদি তাদের বোধ্য অথবা জ্ঞাতব্য একটা নান্দনিক বার্তার চালান করে, তখনই তা তাদের কাছে কবিতাবাহী মনে হবে;- একথাটিও সমালোচ্য। তাদের কথামতো যা অবোধ্য বা অনানুভব্য তা কবিতাসৃষ্টিকারী নয়। কিন্তু এমনও তো হতে পারে, আজকের অবোধ্য পঙ্‌ক্তিগুলো আগামীতে সুখপাঠ্য বোধের বিষয় হ’য়ে যেতে পারে- এরকম হয়েছেও। আমরা লালন’র—

     “তোরা কেউ যাস্‌নে ও পাগলের কাছে
     তিন পাগলে হইলো মেলা
     নইদে এসে।”[৮]

     “দেহের মাঝে বাড়ি আছে,
     সেই বাড়িতে চোর লেগেছে।
     ছয়জনাতে সিঁদ কাটিছে,
     চুরি করে একজনা”[৯]

আবার ময়ুখ চৌধুরী’র—

     “এক বেনীতে শিউলী তলা দুই বেনীতে ফুল
     তিন বেনীতে কানামাছি রুমাল বাধা ভুল”

সবুজ তাপসে’র—

     “কিছু সুপ্ত মাথা ঝিলিক দেবে অন্ধকারে,
     কিছু জাগ্রত মাথা ঝিলিক দিচ্ছে অন্ধকারে, কিছু মরা মাথা
     ঝিলিক দিলো অন্ধকারে। মাটি মাথা গুনে নেয়, ঝিলিক পারে
     না।”

     (সবুজ তাপস। জুনিপণ্ডিত । সবুজ তাপস ; ২০১৫)

     পঙ্‌ক্তিগুলো প্রথমদিকে বুঝি নি, পরে বুঝেছি। আবার, “আগুনকে ছুরি দিয়ে উস্কাবে না” অথবা “দাঁড়িপাল্লার তুলাদণ্ড অতিক্রম করো না”- এইসব নীতিসূত্রসমূহ সাধারণত অক্ষরিক অর্থে বুঝা কষ্টসাধ্য।[১০] গভীর বোধের ব্যায় করলে বাক্যদু’টির গূঢ়ার্থ এসে দাঁড়ায়- মহৎ ব্যক্তিদের গর্ববোধ করা অনুচিত এবং দ্বিতীয়টির অর্থ- ন্যায় ও সমতার ভারসাম্য অমান্য করা অনুচিত। অথচ, দৃষ্টান্তবাদ অনুসারে পঙ্‌ক্তিগুলো প্রথমদিকেই বাতিল হয়ে যায়।

তথ্যসূত্রঃ
[১] মাধ্যমিক সমপ্রদায়ের শূন্যবাদ (পৃ. ১০৪)। যোগাচার সমপ্রদায়ের বিজ্ঞানবাদ (পৃ. ১০৬)। ভারতীয় দর্শন। অর্জুনবিকাশ চৌধুরী। ১৯৬৯। মর্ডান বুক এজেন্সি।

[২] বাঙলা কবিতা এবং দৃষ্টান্তবাদ— প্রথম পর্ব: অস্পৃশ্য-অদৃশ্য অতীন্দ্রিয় উপাদান। মহীন রীয়াদ। শঙ্খবাস। দ্বিতীয় বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা, আগস্ট ২০১০। সম্পাদকঃ মহীন রীয়াদ।

[৩] দৃষ্টান্তবাদী দৃষ্টিতে কবিতার সৌন্দর্যোপভোগযাত্রা— দ্বিতীয় পর্ব: ...পঙ্‌ক্তি, সুন্দর পঙ্‌ক্তি, কবিতার অবস্থান ও কাজ। সবুজ তাপস। শঙ্খবাস। দ্বিতীয় বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা, আগস্ট ২০১০। সম্পাদকঃ মহীন রীয়াদ।

[৪] বিখণ্ডিত সরলরেখা— যৌক্তিক অনুধাবন বা বুদ্ধি। প্লেটো: দর্শন ও রাষ্টচিন্তা। গোলাম ফারুক। আগস্ট ১৯৯৬। বাংলা একাডেমি।

[৫] ক্ষমার পুকুর ক্রমশ ছেটো হয়ে যায়। জাহানারা পারভীন। ঢেউ। অষ্টম সংখ্যা, মে ২০০৯। সম্পাদক: সবুজ তাপস।

[৬] দৃষ্টান্তবাদী দৃষ্টিতে কবিতার সৌন্দর্যোপভোগযাত্রা—দ্বিতীয় পর্ব: সৌন্দর্য, শব্দ, ছন্দ ...। সবুজ তাপস। শঙ্খবাস। প্রথম বর্ষ, প্রথম সংখ্যা, অগাস্ট ২০০৯। সম্পাদক : মহীন রীয়াদ।

[৭] সংবিগ্ন পাখিকুল। (গীত)। সংবিগ্ন পাখিকুল ও কলকাতা বিষয়ক (অ্যালবাম)। ১৯৭৭। মহীনের ঘোড়াগুলি।

[৮] লালন-গীতি চয়ন (১ম খণ্ড)। এস. এম. লুৎফুর রহ্‌মান।
ডিসেম্বর ১৯৮৫। ধারণী সাহিত্য সংঘ।

[৯] লালন শাহ ও লালন-গীতিকা (১ম খণ্ড)। গীত সংখ্যা: ২৬৮। মুহাম্মদ আবূতালিব। মে ১৯৬৮। বাংলা একাডেমি।

[১০] বাংলা সাহিত্যে দর্শন। বাঙালীর দর্শন-প্রাচীন থেকে সমকাল। ড. আমিনুল ইসলাম। ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪। মাওলা ব্রাদার্স।

ছবিঃ তিলোত্তমা তিতলী, ২০১৪।

দ্রষ্টব্যঃ পরবর্তিতে গদ্যটি গ্রন্থভুক্তির পূর্বে সম্পাদিত হতে পারে।

পূর্বপ্রকাশঃ এপ্রিল ২৫, ২০১৪। ১২:৫২ অপরাহ্ণ । সিটিজিনিউজডটকম (ctgnews.com)।