ঢাকার টিনসেডে সংসার পেতেছিল
গ্রামথেকে আসা মানিক আর জোছনা
কালা মানিক রিক্সা চালিয়ে ঘরে ফেরে
হাতে বিস্কিটের পেকেট নিয়ে
হয়তো রাস্তায় দাড়িয়ে আছে তার দুলালি আর আকবর
দুরথেকে দেখলেই দৌড়ে এসে বলবে ‘’বাবা কি আনছো’’
জোছনা ঘরে কমই থাকে
ঘুরে ঘুরে কাজ করে এ ফ্লাটে ও ফ্লাটে
চাল নুনের অভাবের ঝগড়া নিত্য দিনের
টানাটানির সংসার চলে যাচ্ছিল জোড়াতালি দিয়ে
হঠাৎ মানিক অসুস্হ হলে
সরকারি হাসপাতালে অনেক ধাক্কা ধাক্কির পর জানাগেল
দির্ঘ দিনের অনিয়মে তার পরিপাকতন্ত্রের অপারেশন লাগবে
ধারদেনা করে অপারেশন হল
কিন্তু অনেকদিন আর রিক্সা চালাতে পারবে না সে
অভাব জীবনে আসে আমাবশ্যা হয়ে
জোছনার মনভাঙ্গে, পা বাড়ায় অজানার পথে
হতাশ জোছনা প্রেমে পড়ে রসিক অটো চালকের
ভাত কাপড়ের লোভে দুদিনেই ঘরছাড়ে রসিকের হাতধরে
সে একাই সুখে থাকবে বলে
আদরের দুলালি আর আকবর পালায় নানির বাড়িতে
মানিকের কাছে খবর আসে জোছনা পালিয়েছে
অসহায় ক্ষুদার্ত মানিক স্বজনের দাড়ে দাড়ে খোজে জোছনারে
সে কাদে আর চিৎকার করে বলে ‘আনি দেও হামার জোছনারে’
এ যেন বেচে থেকেও সর্বহারার শোকে মৃতের আর্তনাদ
শহরের মানুষ এতো জোরে চিৎকারে খুব বিরক্ত হয়
অনেকক্ষন দাড়ীয়ে দেখেছি সে আর্তনাদ পাথর দৃষ্টিতে
অসহায় আমি কিছুই করতে পারিনি
প্রশ্ন জেগেছে এর দায় কার ?
শহরের ডায়েরীতে আছে এমন হাজার কোটি ঘটনা
সময়ের আবর্তে হারিয়ে যায় ধুলোর অতলে
এতো মানুষের ভীড়ে এর হিসাব কেউ রাখেনা
যেন জীবনের স্রোতে চলে সর্ম্পকের ভাঙ্গাগড়ার খেলা
মানুষ হয়ে জন্মেছি এটাই বোধহয় জীবনের নির্মম বাস্তবতা
মানিকের জোছনা হারিয়ে যাওয়া ।