আমি কে—
আমি মানুষ—সর্বশ্রেষ্ঠ জীব, আমি দুপায়ী,
সর্বশ্রেষ্ঠ মস্তিষ্কের অধিকারী,আমি জ্ঞানী,
বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন বিবেচনাকারী।
আমি মায়া আমি বন্ধন আমি ভালোবাসা
আমি সুখ-দুঃখ আমি চিন্তা আমি চেতনা।
আমি কে—
আমি বাঙালি—সর্বাঙ্গ কৃষ্ণ বর্ণ, আমি
গাঙ্গেয়তীর বাসী,ভাত খেকো বাংলা
ভাষী, আমি শান্ত-শিষ্ঠ-মধ্যম
আমি দামাল ছেলে আমি বাংলার সন্তান।
আমি কে—
আমি কবিতা-উপন্যাস-সাহিত্য,
রবীন্দ্র-বঙ্কিম-আদিত্য।
আমি লিখি জীবন ও জীবনভর,
পড়ি মানুষ ও মানুষের তর।
আমি গীতাঞ্জলি-অগ্নিবীনা-দূর্গেশনন্দিনী,
রাজলক্ষ্মী-সূর্যমুখী-বিনোদিনী।
আমি কে—
আমি বঙ্গ-বাঙলা-বাঙালি,
ব্রাহ্মন-ক্ষত্রিয়-কাঙালি।
আমি পুন্ড্র-গৌড়-বরেন্দ্রী,
সমতট-তাম্র-মুর্শেদী।
আমি ব্রহ্মপুত্র-গঙ্গা-যমুনা,
বৈশাখী-বটমূল-রমনা।
আমি কে—
আমি মুসলিম-হিন্দু-খ্রিষ্টান,
মসজিদ-মন্দির-গুরুদুয়ার।
আমি মারাঠি-গুজরাটি-কাশ্মীরি,
পাঞ্জাবী-সিন্ধি-মারওয়াড়ি।
আমি সাদা-কালো,বড়-ছোটো,
উঁচু-নিচু, ধর্ম-বর্ণ।
আমি কে—
আমি হিমালয়-আন্দিস-অলিম্পাস,
আরিস্ততল-প্লেটো-কনফুসিয়াস।
আমি সিন্ধু-হোয়াংহো-নীলনদ,
অ্যাসিরীয়-মিশরীয় জনপদ।
আমি আর্য-অনার্য জাতপাত
নায়াগ্রা-এঞ্জেল জলপ্রপাত।
আমি কে—
আমি মহাকাশ-মহাকাল-মহাসমুদ্র,
অ্যামিবা-শৈবাল-মহাক্ষুদ্র।
আমি জন্ম-মৃত্য, ভাঙ্গা-গড়া খেলা,
বাংলার ঐতিহ্যবাহী আড়ঙ মেলা।
আমি ধুমকেতু-ঘুমকেতু-রামসেতু,
বাংলার চিরচেনা ষড়ঋতু।
আমি কে—
আমি অর্থো-রোমান-রাস্তা-মরমান,
নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রমাণ।
আমি বিদ্রোহী-দেশদ্রোহী-রাজাকার,
দেব-দেবী,নিরীশ্বর-নিরাকার।
আমি সৃষ্টি স্রষ্টার, দৃষ্টি ভ্রষ্টার
বাঁশের বাঁশি ওই কালো কেষ্টার।
আমি কে—
আমি ফ্রস্টের কবিতার শব্দ,
গ্রেগীয় পঞ্জিকার অব্দ।
আমি আর্যভট্টের বিখ্যাত শূন্য,
আস্তিকের পাপ নাস্তিকের পূন্য।
আমি মসেসের ঐশ্বরিক লাঠি,
চিরসত্যের জলন্ত কাঠি।
আমি কে—
আমি সাইবেরিয়ার তুষারে ঢাকা গ্রাম,
কলকাতার রাজপথে চলা ট্রাম।
আমি ক্যারিবীয়র হিংস্র জলদস্যুর দল,
আলেক্সজান্ডার-চেঙ্গিসের গায়ের বল।
আমি বারমুডার কুখ্যাত ত্রি-কোণ,
বিখ্যাত অ্যামাজন-সুন্দরবন।
আমি কে—
আমি নববধূর কান্না, প্রেমিকার ছলনা,
স্বামীর সান্তনা, প্রেমিকের বেদনা।
আমি মায়ের স্নেহমাখা আদর,পিতার শাসন,
বোনের আবেগী কান্দন, ভাইয়ের বারন।
আমি লাটিমের ঘূর্ণি, কাটা ঘুড়ি,
ঈশপের কাকের ছোট ছোট নুড়ি।
আমি কে—
আমি নন্দিত নরকে-দরজার ওপাশে-শঙ্খনীল কারাগার,
জীবনানন্দের মতো ফিরে আসি বাংলায় বারবার।
আমি তক্ষশিলা-অজন্তা-আদমচূড়া,
কদম-কামিনী-কৃষ্ণচূড়া।
আমি সিন্ধুর গরুর গাড়ির চাকা,
সিরিয়ায় বিখ্যাত পালমিরা-রাকা।
আমি কে—
আমি স্ক্যান্ডিনেভিয়ার ভাইকিংস, নিপ্পোনের সামুরাই,
মিশে থাকা রক্ত আলী-উমরের ছোরায়।
আমি শঙ্খচূড়ের দুটি বিষদাঁত,
বেহুলা-লক্ষ্মীন্দরের বাসর রাত।
আমি রণবীরের তরবারি,
ভলগাতীরের ঘরবাড়ি।
আমি কে—
আমি হারিয়ে যাওয়া পথিক,
বিচার করি কোনটা ভূল কোনটা সঠিক।
আমি হাওয়ায় দোল খাওয়া ধানের শীষ,
মাঝদুপুরে ফিঙে-দোয়েলের চঞ্চুর শিস।
আমি পত্রঝরা বৃক্ষের পাতা,
কঠোর রোদে মাথার ছাতা।
আমি কে—
আমি ব্রাহ্ম-আর্য সমাজ,
ভাঙ্গি কুসংস্কার ভাঙ্গি লাজ।
আমি খসে পড়া তারা--ধ্রুবতারা,
বয়ে চলা নদীর স্রোতধারা।
আমি তোরা-বাইবেল-কোরান,
জেন্দাবেস্তা-ত্রিপিটক-পুরাণ।
আমি কে—
আমি গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের পলি,
পানাম নগরের জরাজীর্ণ গলি।
আমি ছুটে চলা রেলগাড়ি,
সন্ন্যাসীর ছেড়ে দেওয়া বাড়ি।
আমি পূর্ণিমা রাতে নদীর জোয়ার,
প্রবাসী মায়ের অপেক্ষারত দুয়ার।
আমি কে—
আমি আকাশে উড়ে চলা সাদা-সাদা মেঘ,
তরুণীর ফর্সা চিবুকে আছড়ে পড়া কালো কেশ।
আমি অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ,
করে দেয় বিলীন করি ধূলিসাৎ।
আমি হঠাৎ বৃষ্টির পর পূব আকাশে রংধনু,
রাবণের দশমাথা ধ্বংসের রামধনু।
আমি কে—
আমি কৃষকের হাতের সোনার ফসল,
বিদেশী শত্রুর রাজ্য দখল।
আমি পঙ্খীরাজ ঘোড়া ফিনিক্স পাখি,
ভাই বোনের বন্ধন রাখী।
আমি তুলসীদাসের শ্লোক,
পীথাগোরাসের পৃথিবী গোলক।
আমি কে—
আমি বাংলা মায়ের দামাল ছেলে,
ভাষার জন্য দেয় প্রাণ হেসে খেলে।
আমি মুজিবের ঐতিহাসিক ভাষণ,
পাকিস্তানের নিপীড়ন-শোষণ।
আমি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাওয়া বাংলাদেশ,
কোটি বাঙালির স্বপ্ন হব না নিঃশেষ।
আমি কে—
আমি ঘাসফুলের পরাগরেণু,
অদৃশ্য অণু-পরমাণু।
আমি সঙ্গীতের সপ্তসুর,
মহাভারতের অসুর।
আমি মহাপ্রলয়ের দৌহিত্র,
মুখান্নাস-বৃহন্নলার মিত্র।
আমি কে—
আমি প্লেটোনিক ভালোবাসা,
খুঁজে বেড়াই স্বার্থ হরহামেশা।
আমি সময়ের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার অন্তর্জাল,
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নামক জঞ্জাল।
আমি এটম বোমার শিকার হিরোশিমা-নাগাসাকি.
প্রকৃতির রহস্য, হাজার গীতকাব্যের শব্দ জোনাকি।
আমি কে—
আমি চিৎকার করে আকাশ গর্জে ওঠায়,
চিৎকার করে সাগর উত্তাল করাই।
আমি চিৎকার করে বলি আমি মানুষ,
চিৎকার করে বলি আমি মানুষ।
০৩-০৩-২০২১
আলাদাৎপুর,নড়াইল।