প্রত্যেকটি সৃষ্টির পেছনেই একটি কারণ থাকে; একটি ইতিহাস থাকে। হয় আনন্দের, নয় বেদনার। এবারের সৃষ্টির আনন্দময় স্মৃতিটুকু শেয়ার করছি।

কবি অজিত কুমার কর। পশ্চিমবঙ্গ ভারতের পাঁশকুড়ার অধিবাসী। একজন আপাদমস্তক কবি। ঘর-গেরস্তে কবি। কবি পত্নীও কবি। তাঁর সাথে কবিতার রসায়ন আমার নিউক্লিয়ার ফিউশনের মতো বাইনারি ফিউশন। এক থেকে দুই। দুই থেকে চার। বয়সে আমার বয়স থেকে অর্ধেক বেশি। বন্ধুত্বের ভালোবাসা অতিক্রম করে শ্রদ্ধার আসনে আসীন। কিন্তু শব্দ চাষের মাঠে সমান্তরাল। আমার লেখায় ঋদ্ধ মন্তব্যের উপহারে ধন্য করছেন প্রতিনিয়ত। আমিও চেষ্টা করি তাঁর এই অকৃপণ দানের ঋণ শোধের।
এদিকে বাংলাদেশের প্রিয় এবং প্রবুদ্ধ কবি সামসুন নাহার ফারুক; অনুপ্রাস জাতীয় কবি সংগঠনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, তিনিও যুক্ত হয়েছেন আমাদের এই কবিতা কোলাজের নন্দিপাঠে। তিনিও পঁচাত্তরোর্ধ্ব বয়সী। কিন্তু মনের দিক থেকে তন্বী তরুণী। যাকে এক বছর আগে শিরোনাম করেছিলাম চুয়াত্তরে চতুর্দশী। আমার সৌভাগ্য যে, তাঁর স্নেহধন্য হতে পেরেছি। বহুদিন পর এই মহান কবিদ্বয়ের সাথে আরেকটি কবিতা কোলাজ, যার সৃষ্টি আমার ১৯ জুলাই ২০২২ তারিখের একটি কবিতার পোস্ট ও তার সাথে সংযুক্ত ছবি থেকে। তারপর চলছে। এই কবিতায় তাঁদের মন্তব্য ও প্রতিমন্তব্য থেকেই আজকের কবিতা কোলাজ। অবাক হওয়ার মতো ঘটনা যে, একটি ছবি থেকে মাত্র ২ দিনে তিন জনের মাথা থেকে এতগুলো রুবাই বের হয়েছে। মহামহিম স্রষ্টার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। কবিদ্বয়ের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সংক্ষিপ্ততার জন্য কোলাজটিতে তিন জনের নামই সাংতেকি; মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান-মম এবং অজিত কুমার কর-অকক এবং সামসুন নাহার ফারুক-সানাফ ব্যবহার করা হয়েছে।

মম
চায়ের কাপে চুমুর খরা
..........................................
আকাশ জুড়ে মেঘ করেছে, মনসেতারে লাগছে টান
হৃদ গহিনে ওঠলো বেজে জলের বীজের মোহন গান।
ইচ্ছে করে চায়ের কাপে কড়া লিকার আদর হই
কিংবা বুকে পৃষ্ঠা খোলা হুমায়ূনের গল্পবই।
চুলের খোঁপায় কদম গেঁথে ওষ্ঠ ছোঁয়ার ইচ্ছে খুব
কিংবা ফুলের রেণু মাখা প্রজাপতি আর মধুপ।
বৃষ্টিবিহীন শ্রাবণ মাসে ইচ্ছে পুড়ে হলো ছাই
দৃষ্টি জুড়ে জলের ফোঁটা মেঘগুলো আর কোথাও নাই।
ব্যথার ঘুঙুর মাথার ভেতর রিনিঝিনি তুলছে সুর
চায়ের কাপের আদর ভুলে হলাম দুঃখের সমুদ্দুর।
লোডশেডিংয়ের মতো এখন মনোদ্যানেও বটের জট
জটিল জালে ইচ্ছে বন্দী, ভাসান চর এই মনের তট।
সাদা-কালো জীবন এখন, হয়ে গেছে রোদ চুরি
চায়ের কাপে চুমুর খরা, ভাবছি বেগার ধুত্তোরি!
১৯-০৭-২০২২

অকক
টেবিল-পরে শূন্য গেলাস তাইতো মেজাজ ফুরফুরে
মন বিহঙ্গ ওখানে নেই কোথায় গেছে আজ উড়ে?
হয়তো কোনও সাগরতটে নয়তো নিবিড় ঝাউবনে
চোখের দৃষ্টি উদাস উদাস কে রয়েছে মনজুড়ে?

সানাফ
গেলাস ভরে দাওগো সাকি মেজাজটা হোক ফুরফুরে
একাকীত্ব থাকবে না আর ভাববো আছ মন জুড়ে
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মিটবে না তো মনের সাধ
ইচ্ছেমতীর মহুল নেশায় হবো মাতাল চুরচুরে ।

মম
ডানাভাঙা মনবিহঙ্গ নেইকো উড়ার সাধ্য আর
একে একে ছিঁড়ে গেছে মনোবীণার চিকন তার
পানপেয়ালাও শূন্য এখন তৃষ্ণা কেবল বুক ভরা
দাও সাকি দাও খুলে তোমার নেয়ামতের রুদ্ধদ্বার।
২০-০৭-২০২২

অকক
বিশল্যকরণী আছে উড়তে পারবে পুনর্বার
যত ক্ষত উধাও হবে সুর তুলবে বীণার তার।
পূর্ণ করে দেবে গেলাস ভাবনা কীসের তৃষাতুর
সাকির হাতে দোরের চাবি খুলে যাবে রুদ্ধদ্বার।

মম
নাই কিছু নাই দেবার মতো তুষ্ট হবে সাকির মন
রুষ্ট হলে নাই গতি নাই ভয়ে কাঁপি সারাক্ষণ
সুরার গেলাস উল্টে গেলে ফেটে যাবে তৃষায় বুক
ভরসা তাই সাকিই কেবল করবে সবুজ মনকানন।
২০-০৭-২০২২

সানাফ
সাকী যদি তুষ্ট থাকেন তিষায় পাবে পানের জল
পানপেয়ালা টইটুম্বুর রইবে জেনো অনর্গল
বাতলে দেবেন ঘোর আঁধারে তিনিই পথের দিশা
এদিক সেদিক হলে কিন্তু ভুগতে হবে কর্মফল।

অকক
তুষ্ট করার সহজ উপায় বাতলে তো দেন রোজ সাকি
হৃদয়ঙ্গম করত হবেই সাকির সাথে চালাকি!
ভালোবাসেন রাগও দেখান ত্রুটি হলেই জোর ধমক
সাকির আজ্ঞা পালন করে রসেবশেই বেশ থাকি।

মম
সাকির কৃপা আছে বলেই পাচ্ছি তৃষায় পানের জল
কড়িবিহীন অক্সিজেনও টানছি শ্বাসে অনর্গল
তার হুকুমের খেলাপ কত করেছি তার নাই শুমার
পার পাবো না যদি সাকি হিসাব করে কর্মফল।
২০-০৭-২০২২

অকক
তাঁর চরণে সঁপেছি মন যা দেন তা নয় অপ্রতুল
যেমন চালান তেমনি চলি করে ফেলি তবুও ভুল।
অনুতাপে দগ্ধ দেখে সাথেসাথেই করেন মাফ
জীবজগতের কল্যাণার্থে সাকিত্ত যে হন ব্যাকুল।

সানাফ
কে আছে আর দয়ার সাগর সাকি তুমি ছাড়া
তুমি বিনে কোন কাবা আর এমন হৃদয়কাড়া
নিদান কালে তুমি ছাড়া কে আর সহায় আছে
মন পাখিটা ঝাপটে মরে না দাও   যদি সাড়া।

মম
ভুলে ভুলে জীবন গেলো, ভুলের হিসাব করছি কই
ভজন ভুলে ভোজন সুখে জিন্দেগিভর মত্ত রই
তবু সাকি যায় না ভুলে ভরে দিতে সুরার গ্লাস
ক্ষমার দুয়ার রাখে খুলে সবাই যেন শুদ্ধ হই।
২০-০৭-২০২২

অকক
ভুল করা তো প্রাণীর ধর্ম সাবধানে তাই চলতে হয়
মাঝেমধ্যে তবুও ঘটে চলার পথে বিপর্যয়।
ভুলভ্রান্তির হিসাব কষা চলছে সাকির নিরন্তর
পাপক্ষালন আনুগামীর, পরিতাপেই দগ্ধ হয়।

সানাফ
তোমার দেওয়া শরাব পিয়ে উড়ু উড়ু লাগছে বেশ
গেলাস ভরে দাওনা সাকি বাড়ুক আরো ফূর্তি রেশ
হৃদানলে যাচ্ছি পুড়ে জানতে তোমার নেই বাকি
শেষ বিচারে করো ক্ষমা সেই আকুতি কোরছি পেশ।

মম
শুদ্ধ করো জীবন সাকি সদ্য ফোটা ফুল
যদিও না পাই থাকতে আমি তোমাতে মশগুল
তুমি ছাড়া কে আছে আর দেবে পথের দিশা
পরিতাপের পাবক দিয়ে পোড়াও সকল ভুল।
২১-০৭-২০২২

সানাফ
চাকচিক্যের লেবাস পরেই জিন্দেগিটা করিস পার
সাধন ভজন করলেরে মন পেয়ে যাবি সুবিচার
সঠিক পথে চলিস যদি ভাবনা কোনো নাইরে তোর
সাকি যদি তুষ্ট থাকেন বাজবে সুরে বীণার তার ।
২২-০৭--২২

মম
মনযমুনায় ঢেউ ওঠেছে তোমার নামে ধরছি হাল
পার করো পার করো সাকি বেদন ভরা নিদান কাল
ছেঁড়া পালের শরীর সাম্পান ডুবুডুবু করছে আজ
রাহুর সাগর পার করো আর দূর করে দাও সব জঞ্জাল।
২২-০৭-২০২২

অনেকদিন পর প্রবুদ্ধ দুই কবির সাথে রুবাই কোলাজ। অসাধারণ ও অনন্য পাওয়া।
অনেক অনেক শুভ কামনা শ্রদ্ধেয় দুই কবির জন্য। কাব্য জগতে একসাথে পথ হাঁটা দীর্ঘতর হোক। সৃষ্টির আনন্দে বেঁচে থাকি শব্দ ও রঙিন বর্ণমালায়। এই আশায় সৃষ্টির মিষ্টি ফুলগুলো স্মৃতির শোকেসে সাজিয়ে রাখলাম।

মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান
২১ জুলাই ২০২২