আধুনিক কালের কিছু কবি কবিতায় ‘মোর’ ‘মম’ ‘তব’ এ জাতীয় শব্দ ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন। কিন্তু কবিতায় এ জাতীয় শব্দের ছন্দঘন ব্যবহার অপ্রতুল নয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে নজরুল, জসিম উদ্দিন, বুদ্ধদেব বসুসহ আরও অনেক বিখ্যাত কবি তাঁদের কবিতায় এ জাতীয় শব্দের কী চমৎকার প্রয়োগ করেছেন নিচের উদাহরণগুলো না দেখলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে। তাই কবিতায় এসব শব্দ বর্জনের উপদেশ মানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে নজরুল, জসিম উদ্দিন, বুদ্ধদেব বসুসহ আরও অনেক বিখ্যাত কবি ও তাদের কবিতা বর্জনের উপদেশ বলে আমি মনে করি। যাদের হাত ধরে বাংলা কবিতা সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে তাদের বর্জন করে কতিপয় আধুনিক(?) কবি কবিতা সাহিত্যের কী মঙ্গল চান তা আমার বোধগম্য নয়। কেন তারা বর্জন করতে চান সে ব্যখ্যাও আমার কাছে পরিষ্কার নয়। বিষয়টি নিয়ে যারা ভাবেন, যাদের ভালো জানা আছে তাদের সহায়তা ও মতামত কামনা করছি।
মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে
তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ।
তারি সঙ্গে কী মৃদঙ্গে সদা বাজে
তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ॥
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বিপদে মোরে রক্ষা করো
এ নহে মোর প্রার্থনা,
বিপদে আমি না যেন করি ভয়।
দুঃখতাপে ব্যথিত চিতে
নাই বা দিলে সান্ত্বনা,
দুঃখে যেন করিতে পারি জয়।
প্রার্থনা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমার এ ঘর ভাঙ্গিয়াছে যেবা, আমি বাধি তার ঘর,
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।
যে মোরে করিল পথের বিবাগী;
পথে পথে আমি ফিরি তার লাগি;
দীঘল রজনী তার তরে জাগি ঘুম যে হয়েছে মোর;
আমার এ ঘর ভাঙ্গিয়াছে যেবা, আমি বাধি তার ঘর ।
প্রতিদান
জসিম উদ্দিন
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে–
মোর মুখ হাসে মোর চোখ হাসে মোর টগবগিয়ে খুন হাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে।
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে
- কাজী নজরুল ইসলাম
প্রবৃত্তির অবিচ্ছেদ্য কারাগারে চিরন্তন বন্দী করি’ রচেছো আমায়-
নির্মম নির্মাতা মম! এ কেবল অকারণ আনন্দ তোমার!
মনে করি, মুক্ত হবো; মনে ভাবি, রহিতে দিবো না
মোর তরে এ-নিখিলে বন্ধনের চিহ্নমাত্র আর।
বন্দীর বন্দনা
বুদ্ধদেব বসু