কবি তার হৃদয় মাঠে ভাবনার চাষ করে বুনে সুশৃঙ্খল শব্দবীজ। কবিহৃদয়ে রোপিত শব্দবীজ থেকে ফোটে শত বর্ণের, শত সুবাসের বিচিত্র কাব্যফুল। বাংলা কবিতা ডট কম এমন একটি অবারিত বিস্তৃত প্রান্তর ভাবনার মাঠ। যে মাঠে গড়ে প্রতিদিন ফোটে দুই শতাধিক নতুন নতুন কাব্যফুল। এখন পর‌যন্ত বাংলা কবিতা ডট কম-এর পাতায় সৃষ্টি হয়েছে শত নয়, সহস্র নয়, দুই লক্ষেরও বেশি কবিতার সংগ্রহশালা; যা এক ক্লিকেই পাঠকের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ন্যাশনাল আর্কাইভেও হয়তো এক সাথে এত কবিতা দেখার সুযোগ নেই। আর প্রতিদিন ২০০ নতুন কবিতা সৃষ্টির নজির অন্য কোনো মাধ্যমে আছে কিনা আমার জানা নেই। ৯ সহস্রাধিক কাব্যচাষীর সফল উদ্যোক্তা হলেন আমেরিকা প্রবাসী বাঙালি এক সুদর্শন যুবক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, কবি আশফাকুর রহমান পল্লব। যার চোখে থাকার কথা আমেরিকার চাকচিক্যময় শহরের রঙিন আলোর ঝলক। তার চোখে ভাসতে দেখি রক্তমাখা দুঃখী বর্ণমালা। বাংলাদেশ, বাঙালি আর বাংলা কবিতা তার দিবারাত্রির স্বপ্ন। কবি ও কবিতার মেলবন্ধনে নিরলস স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি করেছেন কাব্য চর্চার এক সুবিশাল প্লাটফর্ম। একান্ত নিজের গাঁটের টাকা খরচ করে আয়োজন করলেন “কবি সম্মিলন ২০১৮”।

২০ ফেব্রুয়ারি পুষ্পিত ফাল্গুনের রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে দেশের বরেণ্য কবি সাহিত্যিকসহ আসরের শতাধিক কবির পদভারে মুখরিত হলো জাতীয় যাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তন। এমন একটি প্রাণবন্ত আয়োজনে শরীক হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। এমন এক অভাবনীয় সুন্দর অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য কৃতজ্ঞতা, ধন্যবাদ, অভিন্দন জানাচ্ছি সেই মহান কবিতা ও সাহিত্য প্রেমিক বাঙালি কবি, বাংলা কবিতার প্রিয় এডমিন আশফাকুর রহমান পল্লবকে। অফুন্ত ধন্যবাদ তার সহএডমিন ও আসরের সদস্য কবিদের, যারা সশরীরে উপস্থিত হয়ে কবি সম্মিলন ২০১৮ সফল ও সার্থক করে তুলেছেন।

বরেণ্য কবি ও গীত কবি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের উপস্থিতি অনুষ্ঠানকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। তাঁর কণ্ঠ নিসৃত শব্দের যাদুতে হয়েছি মুগ্ধ, বিমোহিত। পুরোটা সময় তিনি প্রধান অতিথির আসন ছেড়ে আমাদের মাঝে বসে নবীন কবিদের কবিতা ও কথা শ্রবণ করে শিখিয়ে দিয়ে গেলেন কবি হওয়ার আগে ভালো মানুষ হতে হয়, মিশে যেতে হয় মানুষের মাঝে। তার প্রেরণায় উজ্জীবিত, অনুপ্রাণিত। আমি তাঁকে জানাই সশ্রদ্ধ সালাম ও অপার কৃতজ্ঞতা।

যে মানুষটির কথা না বললেই নয়, তিনি হলেন প্রিয় এডমিন আশফাকুর রহমানের গর্বিত পিতা জনাব মুহঃ সিদ্দিকুর রহমান। অনুষ্ঠানের সভাপতির আসন অলঙ্কৃত করে আমাদেরকে ঋণী করেছেন। তাঁর প্রতিও জানাই সশ্রদ্ধ সালাম ও অপার কৃতজ্ঞতা।

ধন্যবাদ সুকণ্ঠের সুশীল সঞ্চালক কবি পি কে বিক্রম ও নাজমা আক্তারকে। বিশেষ করে কবি পি কে বিক্রমকে কৃতজ্ঞতা জানাতেই হয়, যিনি আমাকে স্বরচিত কবিতা পাঠের সুযোগ করে দেন। যে কবিতাটি আমি শুধু এই অনুষ্ঠানকে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলাম। আসরের ১৯ জন কবির ফোটানো ২১টি কাব্যফুল থেকে ৫২ পাঁপড়ির একটা কাব্যমাল্য তৈরি করে সবাইকে বরণ করাই ছিলো অন্যতম লক্ষ্য। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রাক্কালে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহিদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে নিবেদন করেছি আমার কাব্যমাল্য সকল কবিসদস্যদের।

কবিতার শিরোনাম-

একটিমাত্র গোলাপ ফোটানোর প্রত্যাশায়

“তুমি আসলে না” “মধ্যবিত্ত” জীবনের জোড়াতালি সংসারে।
দারিদ্র্যতার শৃঙ্খলে বন্দি হতে ভয় পেয়েছো নারী। পাবেইতো।
হাড়হাভাতে সংসারে অভাব যখন দরজা দিয়ে প্রবেশ করে
ভালোবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়। জেনেশুনে
কে আসে এমন উত্তাল তরঙ্গের মহাসমুদ্রে। আশাহীন
ভেলা দুঃখতরঙ্গের খেলা কারো ভালো লাগার কথা নয়।
সৈকতে নোঙ্গর ফেলা সাম্পান মাঝির রঙিলা সাম্পানে
ওঠে গেছো আলতা পায়ে; সংসার সাগর পাড়ি দিতে।
আমার দৃষ্টি পড়ে থাকে গাঙচিলের শুভ্র ডানায়।
আমি চেয়ে থাকি আহত হৃদয়ে নীল জল দিগন্তের পানে
দরিদ্রতার শৃঙ্খল মুক্তির গভীর প্রত্যাশায়।

ভাগ্যের কী নির্মম পরহিাস! পরাধীনতা, দরিদ্রতা
কূপমণ্ডুকতার দেয়াল ভেঙে ধ্রুপদি স্বাধীনতা আর
অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য যে সংগ্রামে জীবন দিলো
আমার পূর্বপুরুষ, তার সাক্ষ্য আজো বহন করে
“আসাদের রক্ত” সবুজ পতাকার বৃত্তে। কিন্তু সেই
দরিদ্রতার বৃত্ত আজো ভাঙতে পারিনি দুহাতে ঠেলে।
অভাবের তাড়নায় কালের পরিক্রমায় “কেউ কেউ ভুলে যায়”
“নন্দিত সবুজের ভেতর” “চেনা পথের দূরত্ব।”
ভুলে যায় আপন “ঠিকানা”। ভুলে যায় প্রেম, ভুলে যায়
নিভৃত হৃদয়ে “গহীনের কথা।”

তুমিও ভুলে গেছো তোমার প্রেম পিয়াসী যৌবনের দুঃসহ স্মৃতি।
ভুলে গেছো চাঁদের বাটিতে জোছনা পানের গল্প। ভুলে গেছো
মৌটুসী পাখির মতো ঠোঁটের কার্ণিশে চুমুক দিয়ে মধু পানের
রোমাঞ্চিত সময়। একদিন আমার কথা ভাবতেই
শ্রাণের বৃষ্টির দুষ্টু ছোঁয়ায় ভিজে যেত লাজের বসন। এখন
আমার কথায় আর তোমার মন ভিজে না। গলে না পাথর হৃদয়।
কপর্দকহীন পুরুষের “কথা অমৃত” মনে হয় তেতো। যেন
চিরতার জলে গোলা চিনিহীন শরবত। যা নাক চেপে
পুরে দিতে হয় শিশুর উদরে কৃমিনাশক জোলাপের রঙে।

“দস্যি মেয়ে”, তুমি কি জানো, “আমি কেন নতজানু তোমার কাছে”;
কেন আজো “অদেখা ভালোবাসা”র দেখা পেতে হৃদয় থেকে
হৃদয়ে খেলি অন্তহীন “ডুব সাঁতার”; কেন “জলরঙে আঁকা পথ”
পাড়ি দিয়ে বারবার ছুটে আসি তোমার কাছে? কেন পণ করি
“বাইনারি সুখের পিদিম” জ্বেলে “তোমাকে খুঁজে আনবই আনবো”
সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপার হতে, আমার প্রয়োজনে।
আমি “অধরা স্বাধীনতা” ধরতে চাই। তোমার কম্পিত করতলে
বন্ধক রাখতে চাই “অবহেলার বেদনায়” ক্ষত বিক্ষত
ধ্বংসপ্রায় একটি শুষ্ক হৃদয়। একটিমাত্র গোলাপ ফোটানোর প্রত্যাশায়।
বিরহের নীল বেদনায় মৃতপ্রায় হৃদয়ে যেন অন্তত ফোটে একটি সুগন্ধি
গোলাপ। ভালোবাসার লাল গোলাপ। আমি চাই
তোমার আদরে “প্রেমের একটি ফুল ফুটুক শুষ্ক হৃদয়েই”।

আমার কোনো আক্ষেপ নেই। তবে মাঝে মাঝে
“বিষাদের রাত” আমাকে তুমুল তাড়া করে। অধরা
সুখের পিছে দৌড়াতে দৌড়াতে আমি বড়ই ক্লান্ত।
সংসারে সঙ সেজে অভিনয়ের শেষাঙ্কে পৌঁছে গেছি আমি।
পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চ থেকে আমার প্রস্থানের সময় ঘনিয়ে এসেছে।
আমাকে তো একদিন নিতেই হবে বিদায় পৃথিবীর মায়া ছেড়ে।
আমি “প্রলয়ের প্রস্থান চাই না”। বিষাদের সাগরে ভাসতে চাই না।
ধ্বংসের তাণ্ডব নয়, বিষাদের অশ্রুপাত নয়, সৃষ্টির আনন্দে
তোমার আদরে ফুটা সুবাসিত গোলাপের পাঁপড়ি ছড়ানো পথে,
প্রমোদের উল্লাসে যেন হয় আমার সেই মহাপ্রস্থান।
২০-২-২০১৮

সময়ের স্বল্পতা অনেকের মনে কষ্ট দিলেও আগামীতে আরও বেশি সময় নিয়ে সকলের সহযোগিতায়  সুন্দর অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রত্যাশা রেখে এবং সকলের সুস্বাস্থ্য ও সুখী জীবন কামনা করে শেষ করছি।

সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ।