পিঠ চাপড়ানো বাহবা দক্ষতা অর্জনের অন্তরায়
কারো কবিতার আলোচনা বা সমালোচনা করার কোনো যোগ্যতা আমার আছে বলে মনে করি না। এজন্য এ পর্যন্ত কারো কোনো কবিতা নিয়ে আলোচনা করার সাহস পাইনি। আসরে অনেক প্রবুদ্ধ আলোচক আছেন যাদের আলোচনা কবিতার ভাব বুঝতে সহায়তা করে এবং এভাবেই অনেক কিছু শিখছি এখনো। যাকে বলে নবিশ। অনেকটা সাহস সঞ্চয় করে আজ একটি কবিতার আলোচনা করছি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করছি। সাহসটা পেয়েছি গত ৭-৯-২০১৮ তারিখে কবি চাঁছাছোলা কর্তৃক প্রকাশিত “নিষ্প্রাণ নগরে” কবিতায় করা আমার মন্তব্যে কবির করা প্রতিমন্তব্য থেকে।
কবিতাটিতে কবি বলতে চেয়েছেন নগর সভ্যতার নির্দয় নিষ্প্রাণ নগরে বৃক্ষের বড় আকাল। যেখানেই একটু ছায়া সেখানেই প্রকৃতির অপার মায়া যেন স্বর্গের সুখ ঝরে পড়ে। প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষকে আরামদায়ক জীবন যাপনে সহায়তা করলেও এতে প্রকৃত সুখ পাওয়া যায় না বরং নানাবিধ অসুখের জন্ম দেয়। বদ্ধ ঘরে এসির বাতাস অপেক্ষা গাছের শান্তিময় শীতল ছায়া বেশি আরামদায়ক এবং এতে প্রাণ-মন জুড়িয়ে যায়।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব প্রকটভাবে লক্ষণীয়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছের বিকল্প নেই। তাই তিনি নাগরিক সমাজের কাছে করজোড়ে মিনতি করেছেন তারা যেন বিশাল জায়গা নিয়ে সুরম্য প্রাসাদ গড়ার পাশাপাশি অন্তত দুটি বৃক্ষ রোপন করেন।
অত্যন্ত সুন্দর মানবিক বোধের একটি কবিতা “নিষ্প্রাণ নগরে” এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে কবির বোধ এবং বোধ প্রকাশের সমন্বয়হীনতার কারণে আমার দৃষ্টিতে বিষয়বস্তু ভালো হওয়ার পরেও এটি যথার্থ কবিতা হয়ে ওঠতে পারেনি। এর প্রথম কারণ, বানান প্রমাদ ও ভুল শব্দ প্রয়োগ; দ্বিতীয় কারণ, প্রকাশের দুর্বলতা। এ পর্যন্ত আমিসহ ১৫ জন পাঠক কবিতাটিতে মন্তব্য দিয়েছেন। সবাই দারুণ, অসাধারণ, সুন্দর ইত্যাদি প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। কবিতার যে অনুসঙ্গের দুর্বলতার কারণে কবিতাটি যথার্থ কবিতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তা হয়ে ওঠতে পারেনি সেটা কেউ বলেননি। ফলে আমার মতো নবিশ লেখিয়েদের ভুলটা ভুলই থেকে যাচ্ছে। এরূপ পিঠ চাপড়ানো বাহবা পেয়ে মনে করছি সত্যিই আমি কবি হয়ে ওঠেছি। ফলে এরূপ প্রশংসা নতুন লেখিয়েদের দক্ষতা অর্জনের অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে।
আলোচ্য কবিতাটির যেসব দুর্বলতা আমার চোখে পড়েছে তার একটু ব্যাখ্যা দিতে চাই।
১। মোবাইলে টাইপ করার সময় এমনিতেই অনেক বানান ভুল হতে পারে। পরে তা সম্পাদনারও সুযোগ থাকে। তবে এ কথা সত্য যে ভুল বানান কবিতার মানকে যাথেষ্ট ম্লান করে দেয় যদি বানান ভুলের কারণে কবিতার ভাব ও অর্থের পরিবর্তন হয়ে যায়। আমি মন্তব্যে প্রিয় কবিকে বানান প্রমাদ বিষয়ে মনোযোগী হওয়ার অনুরোধের প্রেক্ষিতে তিনি প্রতিমন্তব্যে বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে বলার অনুরোধ করেছেন। মূলত এই কারণেই আলোচনার সূত্রপাত। কবিতাটিতে যেসকল বানান প্রমাদ আমার চোখে পড়েছে সেগুলো হলো-আপ্রান>আপ্রাণ, ঝরে পরে>ঝরে পড়ে, পাইনা>পাই না, জোর হাত>জোড় হাত, সভ্যগনকে>সভ্যগণকে, সৌরম্য>সুরম্য। এর মধ্যে পরে=পরবর্তীতে, পড়ে=পতিত হয়, জোর=শক্তি প্রয়োগ, জোড়= জোড়া শব্দগুলো অর্থের পরিবর্তন করে দিয়েছে।
২। কবিতায় কবির ভাবের প্রকাশ করেছেন এভাবে –
“শহরের সভ্যগনকে বলি, জোর হাত মিনতি করে
তোমাদের একটুও যদিগো থাকে হায়া ।
অতটা জায়গা জুড়ে যখন গড়েছ সৌরম্য প্রাসাদ
তবে পাশে দুটো গাছ লাগিয়েদেনা ভায়া ।”
জোড় হাতে মিনতি করে কাউকে গালি দিলে সে কি আপনার কথা শুনবে; নাকি ধমক দিয়ে ভাগিয়ে দিবে? কবি জোড় (জোর) হাতে মিনতি করে সভ্যগণকে (সভ্যগনকে) বলছেন তোমাদের যদি লজ্জা (হায়া) থাকে তবে দুটো গাছ লাগাও। এটা কি মিনতির ভাষা?
যদি কোনো নারীকে বলেন -
এই মেয়ে তুই ভালোবাসা দিবি কিনা বল
না যদি দিস, কিলিয়ে তোর হাড় করবো জল।
ভালোবাসা দেয়া তো দূরের কথা ওই নারী সাহসী হলে বলবে “তোর ভালোবাসার গোষ্ঠি কিলাই।” ভীতু হলে বলবে “ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি।”
একই কথা যদি এভাবে বলা হয় -
এই মেয়ে তুই আর করিসনে ছল
দোহাই লাগে একবার তুই ‘ভালোবাসি’ বল।
এই নারী ‘ভালোবাসি’ না বললেও অন্তত ভালোবাসার গোষ্ঠি কিলাবে না।
অতএব যেখানে যেভাবে বলা দরকার সেখানে সেভাবেই বলতে হবে। এজন্য অন্তরের ভাব ও ভাবের প্রকাশের মধ্যে সমন্বয় সাধন কবিতার গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ।
আমার আলোচনা আর দীর্ঘ না করে শুধু বলবো, আসরে অনেক গুণী ও প্রবুদ্ধ কবি আছেন। তাঁরা যদি উৎসাহদানের পাশাপাশি কবিতার দুর্বল দিকগুলোর প্রতি আলোকপাত করেন তবে আমার মতো অনেক নবিশ কবির ক্রমোন্নতি হবে। বাড়বে কবিতার উৎকর্ষতা। বাংলা কবিতার আসর হবে আরো সমৃদ্ধ।
সবাইকে অশেষ ধন্যবাদ।