খাবার গুলো গুছিয়ে , খাবারের নির্দেশগুলো বুঝিয়ে , বেলা এগারটা বেজে গেলো ,জয়ার বেরোতে বেরোতে ;
বাপের বাড়িতে আজ গেট টু গেদার , আমার যাওয়া হোল না – পরেছি যে জ্বরে ;
তবে আজ দেদার স্বাধিনতা -
মনের মত খাবার না পেলেও , সময় মেনে খাওয়ার হুকুম্ নামা নেই,
ইচ্ছেমত টি ভি দেখা যাবে ; সান্ধ্যা অবধি আজ আমি একেবারে একা ।
বাসার ঘরের বারান্দাতে এসে বসি ।
সামনের পার্ক টায় বাচ্ছা ছেলেগুলো খেলছে ফুটবল ;
আরেকটু দূরে কতক গুলো বাস্তির ছেলে মেয়ে কি যেন খেলছে –লুকোচুরি ,এক্বা- দোক্বা , নাকি অন্যকিছু ।
অনেকটা দূরে হঠাৎ চোখ পরে গেলো – চুপ্ টি করে একলা বসে আছে সে,
ছেঁড়া হাতকাটা গেঞ্জি ,আর কালো রঙের হাফ প্যান্ট ।
নামটা কি যেন – বীল্লা, ঝিলকু, রঘু, বাবলা নাকি রাজা ; ভূলে গেছি একেবারে ।
ছেলে বেলা থেকেই মা বেপাত্তা , বাপ-টাও টেঁসেছে গত বছর –
মদ খেয়ে , লিভার টা পচিয়ে ।
বড়ো রাসতার মুখেই এপাড়ার বাজার , সেখানেই শিবুর চায়ের দোকান ,
দোকানে কাজ করতো ছেলেটা ,
চা -বানানো , বাসন- মাজা, আরও অনেক ফাঁই –ফরমাস ।
খেতে পেত সেখানেই ।
খাবারের সাথে চড় ,গাঁট্টা –ও জুটত রীতিমতো ।
চোখ দুটো বেশ মায়াবী , তার সাথে আছে বুদধীর ছোঁয়া ।
লেখাপড়া হয়ত হত , যদি সুযোগ পেত ।
শুনে শুনে দু চারটে ইঙরাজী বলে ফেলত মাঝে মাঝে ।
দোকানের হিসাবটাও শিখছিল চটপট করে ।
এপাড়া র কিছু সমাজ সেবীদের চোখে পড়ে গেল ,
মিটিং হয়ে গেল – চাইল্ড লেবার, প্রলেতারিয়েটে র হাহাকার – কিছুই বাদ গেল না ।
মিছিল হল ওসি র কাছে গেল আনদোলনের হুঙ্কার ।
শিবুর দোকানটা ভেঙ্গে দিল পুলিশ – এইতো তিন দিন আগে ।
শিবু অবশ্য আরেক টু দূরে খুলে ফেলল নতুন চায়ের ঝাঁপি ।
এসে গেল নতুন দুটো ছেলে ।
এবারের দোকানটা থানার কোল ঘেঁষে - সমাজ সেবীদের চোখ পড়ার কথা নয় ।
শুধু থানাতে চা দিতে হবে ডিস কাঊণ্টে ।
ছেলেটাকে আর শিবুর দোকানে বেগার খাটতে হবে না ।
আনদোলনের জয়ে উল্লসিত সমাজ সেবীদের দল - হয়ে গেল বিজয় মিছিল ।
দুদিন ধরে সামনের পার্কে বসে আছে ছেলেটা –পেটে খিদে নিয়ে ।
আর নেই কোন চড় ও গাঁট্টা
এখন শুধু অবাধ স্বাধিনতা ।