ছেলেবেলায় একটি সাইকেল কিনতে চেয়েছিলাম,
দুর্ঘটনায় পা ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে বাবা কিনে দেননি।
সাঁতার শেখার জন্য পুকুরে নামতে গেলেই-
ডুবে যাওয়ার ভয়ে বাবা নিয়ে আসতেন।
ছোটবেলায় আমি ডাক্তার হতে চেয়েছিলাম,
মর্গে যাওয়ার ভয়ে সে ইচ্ছে ভুলে গিয়েছি।
চেয়েছিলাম পুলিশ, সৈনিক বা বৈমানিক হবো,
কর্তব্যের চাপ বেশী বলে ক্ষান্ত দিয়েছি।
তারপর, ঠিক করলাম ইঞ্জিনিয়ার হবো,
বুয়েট থেকে বেরিয়েই এমআইটিতে চলে যাবো!
কত্তবড় সাহস আমার, ভাগ্যদেবতার অভিশাপে-
উচ্চমাধ্যমিকে পদার্থবিজ্ঞানে ফল বিপর্যয়-
আমার প্রকৌশলী হবার আশা ও স্পৃহা হারালাম।
দেশের রাজনৈতিক তীর্থস্থান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে-
ভর্তি হয়েই রাজনীতিবিদ হতে চাইলাম।
আমি হতে চাইলাম কলমযোদ্ধা-সাংবাদিক,
সমাজের কল্যাণে সংস্কারক- একজন তরুণ কর্মী,
নেতার আকাশচুম্বী চাহিদা পূরণ করার সাধ্য নেই তাই-
এখানেও আমার জন্মদাতা, আমার সমাজ-
সকলের কড়া আপত্তি! আর, নিন্দুকের মুখ নিঃসৃত-
অমৃত-বাণী-সম্ভার আমাকে পিছু হটতে বাধ্য করলো!
আমি চাইলাম কিছু ছোটভাইকে শিখিয়ে-পড়িয়ে-
আমার মতো করে গুছিয়ে সমাজটাকে বদলে দেবো!
কর্মীর অবুঝ মনের ভালবাসা পাওয়ার যোগ্যতা-
আমার ছিলো না বলেই হয়তো ওরা পালিয়ে গেলো!
আমি চেয়েছিলাম ভাল বন্ধু হতে,
প্রেমিকার চোখে চোখ রেখে-
জ্যোছনা বিলাস আমার বড্ড শখ ছিলো!
পৃথিবী'র ভোগ-বিলাস আমার জন্য নিষিদ্ধ,
তাই, আমি বসে বসে আকাশের তারা গুণি!
আমি লেখক হতে চাইলাম,
কবি হয়ে মানবাত্মার ক্রন্দনধ্বনি-
কালির আঁচড়ে প্রকাশ করতে চাইলাম-
উচ্চমার্গের সাহিত্যিক সমাজে আমার মতো-
ছাপোষা মূর্খের ঠাঁই হলো না!
আমি এখন পৃথিবী'র রাজপথে-
চিরবিদায়ের যাত্রারম্ভ করা এক রিক্তহস্ত ভিখিরী-
যে জীবনের শেষবেলায় তোমাদের ভদ্দরপাড়ায়-
একজন ভাল মানুষ হতে চেয়েছিলাম!
এবারও হলো না, আমার চাওয়ার সাথে পাওয়ার-
এই চিরস্থায়ী দ্বন্দ্বের অবসান আর হলো না!
চাওয়া-পাওয়া'র এই জটিল হিসেব মেলাতে ব্যর্থ-
আমি অ-'মানুষ' এক!
---বর্ধমান/১৪ মে, সতেরো।