হে কবি
হৃদয় ক্যানভাসে এঁকেছিলে কার ছবি?
বিরহ বেদনা যম যাতনা ডানাভাঙা পাখির মতো কাতরাচ্ছো
চারিদিকে হৈ-হল্লা, আনন্দে দিশাহারা
তুমি কবি নীড় হারা, মশগুল কিসে?
হৃদয় ভরা বিষে, বিষ দাও পিষে,উড়িয়ে দাও শিষে
এসো উল্লাসীদের ভীড়ে,একাকার হ'য়ে যাও মিশে।
তুমি কবি সমাজ বুঝনা, আনন্দ খোঁজনা
আনকালচারার, গেঁয়ো, উদ্ভট, আনস্মাট তুমি।
আকাশের দিকে তাকিয়ে তুমি কি খোঁজ?
কি আছে আকাশে?
দিনের বেলা দিবাকর, রাতের বেলা চাঁদ-তাঁরা
এইগুলো তো প্রতিদিন ঘুরেফিরে আসে
হার হামেশা অবাক দৃষ্টিতে দ্যাখতে হয়?
হে কবি
চোখ নামিয়ে ডানে-বামে তাকিয়ে দ্যাখো
যৌবনবতী কিশোরীর রাঙা পা
তোমার পছন্দের নীল শাড়ীতে মুড়ানো গা
নুপুরের ছমছম, চুড়ির রিনিঝিনি শব্দে বিমোহিত পবন
ক্যানো তুমি পারছো না করতে শ্রবণ?
দ্যাখো কবি মাতাল হাওয়া যখন শাড়ীর আঁচল ক্ষানিকটা সরিয়ে দেয়
তোমার কল্পনার নীলাম্বরীর নাভি থেকে প্রেমের স্লোগ্লান ভেসে আসে
নাসিকা থেকে আসা দীর্ঘশ্বাসের গরম নিঃশ্বাসে আমি মোমের মতো গলতে থাকি।
কি ভাবছো কবি?
কোন মোহে মোহগ্রস্ত তুমি?
হেমন্তের এই পড়ন্ত বিকেলে তুমি এতোটা উদাসীন ক্যানো?
হে কবি
তুমি ছিঁড়ে ফেলো তোমার হৃদয় ক্যানভাসে আঁকা ছবি
ফিরে এসো তুমি আনন্দের এই স্লোগানে।
মনের মলিনতা, মরীচিকা, ধুসরতা ধুয়ে পুলকিতের পুলক ছড়িয়ে দাও হৃদয়ের ভাঁজে
ঠেলে জরাজীর্ণতা সেজে নাও নব উদ্দামতা সাজে।
সানিত কণ্ঠে আনিত গান ধরো
উপযুক্ত আবাস গড়ো প্রজন্মের তরে
নিপুণ সৃষ্টি করো নিখুঁত হাতে।
তুমি তো কবি, ভাবনার গভীরতা অসীম
হীনমন্যতায় গ্রহণ করোনা কিচ্ছু, বিস্তৃত হৃদয়
অতীত পর্যালোচনা করে বর্তমানের 'পর দাঁড়িয়ে ভবিষ্যতের ভিত্তিপ্রস্তর করো।
হে কবি
দাঁড়াও, বেড়িয়ে এসো ভাবনার গভীরতা থেকে
উর্মি জলে স্নান করে সমুদ্র সফেনে সাঁতার কেটে আসি।
সিনাই নদীর তীরে হিজলতলে বসে শার্টের বুতাম খোলে ফুরফুরে বাতাসে একটু বুক ভরি
হেমন্তের ফসল কাটা মাঠে গরুর বিচরণ, গাঁয়ের বঁধুর ধান থুবড়ানোর নিরলস প্রতিযোগিতা দ্যাখে তোমার আকাশে বেদনার এক টুকরো মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরে যাবে।
কবি, ক্যানো নিজেকে নিঃশেষ করে দিচ্ছো?
আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের মতো ক্যানো পোড়াচ্ছ নিজেকে বিরহের অনলে?
তুমি দ্যাখোনি কবি?
স্নিগ্ধ ভোরে কুয়াশা ভেজা দূর্বাঘাস গুলো কতোটা সজীব, নির্মল- পায়ে পিষে দেয়ার পরও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চেষ্টা করে
আর কতোটা দীপ্তি নিয়ে জেগে উঠে দিবাকর।
এসো কবি, কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে গান ধরি মানবতার,
সত্যের, নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের মুক্তির
অত্যাচারী নিপাতের, অধিকার আদায়ের গান।
হে কবি
নীড় হারা কবি,ছন্নছাড়া ভবঘুরে কবি,উদাসী কবি
বিবর্ণমুখে খুঁচা-খুঁচা দাড়ি, উষ্কখুষ্ক এলোমেলো চুল
বাঁশের কঞ্চির মতো দেহ, পুরনো ময়লা পাঞ্জাবি গায়
দাদার আমলের একজোড়া স্যান্ডেল পা'য়।
কি পাও কবি এমনটি করে?
তোমার আবডালে কতো সমালোচনা হয় জান?
এই খোলস থেকে বেড়িয়ে এসে দ্যাখো কবি
এই পৃথিবীর অনেক উন্নতি হ'য়েছে
আধুনিকতার স্পর্শ লেগেছে পৃথিবীর মস্তিষ্কে
চোখের পলকে মিসাইল, রণতরী, বোমারু জাহাজ বানাতে পারে
কেবল অবনতি হ'য়েছে পৃথিবীর মানুষের চরিত্রে।
কবি,এই দাঁড়ি,গোঁফ,চুল কাটিয়ে একটু আধুনিক হও
গিরগিটির মতো রং বদলাতে শিখো,
খ্যাতি, বাহবা, অর্থ, প্রাচুর্য্য সব পাবে সব।
হে কবি
আমার সাধজাগে নীল শাড়ী পড়ে নীলাম্বরী হতে
একদম তোমার কল্পনার নীলাম্বরী
খড়কুটো দিয়ে বাবুইপাখির মতো একটি কুঁড়েঘর বাঁধতে।
আমার সাধজাগে তোমার স্পর্শ পেতে
ভালোবাসা পেতে, বুকের 'পর মাথা ঠেকিয়ে একটু ঘুমাতে।
তুমি তো কবি, নিপীড়িত মানুষের কথা বলো,
মানবতার কথা বলো, অধিকারের কথা বলো
আমার কথা একটু বলো না তোমার হৃদয়কে
কিঞ্চিৎ আশ্রয় দিতে মোরে।
০৩/০৫/২০২২- সৌদি আরব