এখনো তোমার কথা মনে আছে-
এখনো কানে বাজে গম গমে সেই শব্দ
চিন্তা করোনা দাদা, যুদ্ধে আমাদেরই জয় নিশ্চিত।
তেজস্বী সেনাপতি র মতো বাতাসে সাঁতার কেটেছ।
হাতে আঁকড়ে ধরেছ ধাতব রাইফেল।
গামছায় কপাল বেঁধে
সমস্ত বেদনার ঘাম চুষে নেবার ব্যবস্থা করেছিলে।
লক্ষিপুরহাটে তোমায় দেখেছিলাম শেষবার।
হাটের পাশেই তোমরা ক’জন অবস্থান নিয়েছিলে
ছদ্মবেশে তোমাদের লোক চলে যেত
তালতলা, কামারজানী মিলিটারি ক্যাম্পে।
কখনো সবজি বা মাছ নিয়ে ক্যাম্পে যেত
আর সকল নকশা তার মাথায় ঢুকিয়ে
নিরাপদে চলে আসতো।
এই গল্প তুমি
লক্ষিপুরের হাটে দেখা হতে
একান্তে বলেছিলে।
রমেশের চায়ের দোকান ছিল
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের মতো।
ট্রানজিস্টারে দেশের সব সংবাদ পৌঁছে যেত প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
দু দিনেই এখানেও প্রবল যুদ্ধ বেঁধে গেল
গ্রাম ছেড়ে একে একে সবাই পালাচ্ছে
মা আর ছোট বোনটাকে নিরাপদে রাখার জন্য
আমিও চললুম।
আল পথে কিছু দূর যেতে
ধান ক্ষেতে
অনেক কাকের মেলা বসতে দেখলাম।
কাকা-শকুনের দল দেখলেই বুঝতাম
কোন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা কিংবা
বীরাঙ্গনা লাশ পড়ে আছে সেথায়
কচি ধানের গাছগুলো ফাঁক করে
এগিয়ে গেলাম
একবার দেখার জন্য কোন
সাহসী যোদ্ধার শরীর মাটিকে চুমু খেল,
কাঁপা কাঁপা পায়ে উঁকি দিলাম
আল পথের শেষ মাথায়,
হঠাৎ বুকের ভিতর কম্পিত হলো
তোমার নিথর শরীর দেখে।
কপালে মায়ের দেয়া গামছাটি বাঁধা আছে এখনো
এক হাতে মুঠো ভর্তি মাটি
কিছুটা দূরেই তোমার বানানো লাল সবুজের পতাকা
ধান খেতের মধ্যেই যেন পত পত করে উড়ছে।
মনে হলো, তুমি সেই বীর
তুমি মুক্তির পতাকাবাহী সৈন্য
শরীরের সব ক্ষত  শুকিয়ে গেলেও
তোমার চোখ দুটো যেন এখনো জ্বল জ্বলে উজ্জ্বল।
আজ যেন তুমিও শঙ্খ চিল হয়ে
উড়ে যাও নীল আকাশের বুকে,
আজ যেন তোমার শরীর পরাধীনতা পেছনে ফেলে
ভেসে যায়,
উড়ে যায় শঙ্খ চিল হয়ে
মুক্ত মনে
আজ বাতাসে ভাসে তোমার শরীর।