বৃষ্টিরানীর কাজল মেয়ে
======
কাজল,
খুব ইচ্ছে করে একবার তোর মা হই।
কাজলকালো শরীরটাকে শক্ত করে বেঁধে রাখি বুকে,
তোর নিঃশ্বাস আসা যাওয়া করুক
আমার নিশ্বাসে সাথে মিশে।
আমি নিশ্চিত-তুই ঠিক মা মা গন্ধ পাবি
আমার শরীরের ওম থেকে !!
সেই যে কবে-যেদিন প্রথম তোর মুখটি দেখেছিলাম,
পথের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ফ্যালফ্যাল করে আমায় দেখছিলি,
আমি বুঝতেই পারিনি কী যাদু ছিল ঐ ছোট্ট চোখ দুটোতে।
তোর ধূলোমাখা তুলতুলে শরীর থেকে
আমি চোখ ফেরাতে পারিনি,
খুটিয়ে খুটিয়ে দেখেছি, একদম আমার চোখ,
আমার নাক, আমার হাসি,
আমার মত চওড়া কপাল, কোকড়া মাথার চুল-
একদম অবিকল আমি,
যেভাবে আয়নায় নিজেকে দেখেছি,
এমন কি গায়ের রঙটিও আমারই মত।
চারিদিকে খুঁজেছি-
কোথাও তোর কেউ দাঁড়িয়ে আছে কিনা।
না, কেউ নেই। তুই একা।
সেই থেকে তোর একলা জীবনে
কেমন করে যেনো আমিই তোর সব হয়ে গেলাম ।।
আমাদের দুজনের এখানেও কত মিল;
তুই একা, আমিও একা ।
ঈশ্বরই বুঝি এভাবে দুজনকে টেনে এনে
একই পথে দাঁড় করিয়েছে আর
তোর সাথেই আমায় বেঁধে দিয়েছে এক মায়ার বন্ধনে।
আর আমরা একা নই-
আয় হাতটি ধর, বুকে আয়,
একবার মা বলে ডাক, একবার আমার চোখ ছুঁয়ে দেখ
তোর জন্য কত জল ছলছল করে দুই চোখে।
তোকে কাছে পাবার ব্যকুলতায়
মধ্যরাতেও আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়,
ছটফট করি তোর গায়ের গন্ধ পেতে,
তোর ছোট্ট হাত দুটি হাতে নিয়ে খেলা করতে।
কখনো কখনো স্বপ্নেও তোকে দেখতে পাই,
আর যেই তোকে ছুঁতে যাই ছুটে পালিয়ে যাস্,
লুকিয়ে থাকিস অনেক মানুষের ভীড়ে।
তারপরও আমার দুইচোখ ঠিক তোকে খুঁজে বের করে আনে।
লক্ষ্মীসোনা, আর অমন করে পালিয়ে যাস না,
ভয় হয়- যদি আর তোকে খুঁজে না পাই!
যদি তোর গায়ের গন্ধ বাতাসে
অনেক দূর পর্যন্ত মিলিয়ে যায় !
কাজল, এবার কাছে আয়-
দুজন একসাথে সুর মিলিয়ে গান ধরি,
হাজার শব্দের বাতি জ¦লে উঠুক
আমাদের চারপাশে।
তারপর তোকে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ি,
স্বপ্ন দেখি তারা ঝলমল আকাশের,
স্বপ্ন দেখি আলোয় ভরা সুন্দর একটি সকালের !!
আয়-তুই হয়ে উঠবি বৃষ্টিরানীর স্বপ্নের মেঘকন্যা,
দুজন মিলে রাজত্ব করবো আলোর আকাশে।
আমি লজ্জিত না হই!
কেবলই শব্দ ছূড়ে দিই আকাশে, শুরু হয় গল্প আর কবিতার আলাপন ;
নিজেরে উর্ধে তুলে লই!
কাজলেরা পড়ে থাকে পথের ধূলায়, ওরা কখনো না হয় কারো আপন!
২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮
ভোর ৪.১৫
ঢাকা, বাংলাদেশ।