শ্রাবণসিক্ত সন্ধ্যার কার্নিস ছঁুয়ে নেমেছে নিঝুম রাত
মেঘাচ্ছন্ন রাতের অন্তপুরে আগন্তুক অঁাধারের কোলাহল
সেখানে জোস্নার জলরঙে কারা যেন লেপ্টে দিয়েছে
কলঙ্কের কালিমা কিংবা বিকৃতি ইতিহাসের বিশ্রীগন্ধ
দূর্ভেদ্য অঁাধার বুকে পিঠে ঠেলে ঠেলে রক্তাক্ত সূর্যোদয়ের—
অপ্রতিবোধ্য প্রত্যাশায় ক্র্যাচে ভর করে হাঁটে দারুন দুঃসময়।
বধিবৃক্ষের ছায়াতলে ধ্যানমগ্ন বুদ্ধের মতো বসে আছে
হোচিমিং , মাও, মার্কস মাহথির লেনিনদের বিপ্লবী ভাবনা
অনিশ্চিত বাসযোগ্য পৃথিবীর ভাবনায় সুকান্তের গালে হাত
রবি ঠাকুরের সফেদ দাড়িতে জড়িয়ে গেছে মাকরশার জাল
অব্যক্ত কষ্টে ক্রমশ কঁুকড়ে যাচ্ছে নজরুলের কেঁাকড়া কেশ
শরৎ সমগ্র’র প্রতিপাতায় ছোপ ছোপ রক্তের দাগ থেকে
নিঃসৃত রক্তনদী পাঁজরে মানচিত্র ভেঙে দৃষ্টিহীন দূর দিগন্তে
বেদনায় মহাসমুদ্রে বয়ে যায়।
অবিশ্বাসী রৌদ্দুরে পুড়ে গেছে বিরাণ বাংলার বন—বনান্তর
অভয় অরণ্যে আকাশস্পর্শী সর্বগ্রাসী লেলিহান শিখা
দাউ দাউ জ্বলছে , পুড়ে যাচ্ছে পূর্ব পুরুষের শান্তিস্বর্গ
কুচক্রিদের নিধন যজ্ঞে বটবক্ষ শূণ্য সবুজ অরণ্য
আজ আর কোথাও নেই এতটুকু বিশ্বাসী ছায়া
দিগভ্রান্ত পথিক থমকে আছি পুরনো বিবর্ণ পথের বাঁকে
ইশারায় কেউ ডানে ডাকে কেউ বা আবার ডাকে বামে
গন্তব্যের টানে যেতে হয় যাবো কিন্তু কোন দিকে
দিক নির্দেশকের অকাল প্রস্থানে দশদিকে উঠছে বেজে
বিইগলের বেদনা বিধুর সুর, একতারায় ছিন্নতারে কাঁদে
আমাদের ঐতিহ্যবাহী আহত অতীত আর রক্তাক্ত মানচিত্র।
বৈরী বাতাসে নুজ্ব পতাকা লাজে লুকায় সোনমুখ
দীর্ঘদিন এখানে শুধু তপ্তমরু সাহারার হাহাকার
অন্তহীন জলতৃষ্ণায় অবলীলা ক্রমে জেগে উঠেছে ব্যথার বালুচর
দিকহারা দখিণার হাওয়া সুখের ফাগুনে হারিয়েছে পথ
শান্তির শ্বেত পায়রাগুলো ক্লান্ত ডানায় উড়ে গেছে বহুদুরে।
কার প্রস্থানের বেদনায় নীলাকাশ পড়েছে নুড়ে সবুজের মাঠে
সবুজ ঘাসের সাদা কষ্টে জেগে আছে বুলেট বিদ্ধ মধ্যরাত
রাতের সংসারে পরিত্রানের পথ খঁুজে ফেরে বধ্যভূমি
খোলা জানালার শার্শিতে উঁকি দিয়ে যায় জলপাইরঙা ভোর
অবধ শিশুর মতোই হামাগুড়ি দিয়ে অণ্য কোথাও হেঁটে যায় কাঙ্খিত রৌদ্দুর
করুণাশ্রিত কিছু রৌদ্দুরের অসহায় আর্তনাদে বিদীর্ণ করে
জাতিসত্তার স্বপ্নবিজাড়িত স্মৃতিময় শৈশব কৈশোর
ভগ্নমেরু দন্ডে উন্নতশিরে দাঁড়াতে আমার বড় কষ্ট হয়
সরিসৃপের মতোই এঁকে বেঁকে এ কেমন পথ চলা
আমাকে প্রশস্ত পথ দাও যে পথে এসেছিলো স্বাধীনতা
আমায় কন্ঠে অন্য কোনো উদ্দেশ্য প্রণীত সঙ্গীতের সুরবিদ্ধ করো না
আমি অভিন্ন আকাশের নক্ষত্রমানবকে দু’চোখ ভরে দেখেছি।
যাঁর ঐতিহাসিক অঙ্গুলি ইশারায় ভেঙে দিয়েছিলো—
বাঙালি জাতির হাজার বছরের সেই পরাধীনতার শৃঙ্খল
যে দীর্ঘদেহী স্বপ্নপুরুষ এ জাতিকে মানুষের মতো বেঁচে থাকার
স্বপ্ন দেখিয়েছিলো, শিখিয়েছিলো আপোষহীন সংগ্রামের আদর্শ
যাকে দেখে হিমালয় দেখার সাধ ভুলে গিয়েছিলেন ফিদেল কাস্ট
যার জন্য আজও কাঁদে স্বাধীন সার্বভৌম এই ভূখন্ড
বাংলার অসীম আকাশ, বাউল বাতাস, রেসকোর্স ময়দান।
যার নির্ভীক নিদের্শে বাংলার ঘরে ঘরে গড়ে উঠেছিলো দূর্গ
আমি সেই মহাকালের মহামানবের উদাত্ত আহ্বান এবং আর্দশে
অনুপ্রাণীত অনুজ, আমার মুক্তপথ অবরুদ্ধ কথার সাধ্য কার ?
দূর্ভেদ্য অঁাধার আমাকে যতই অক্টোপাসের আদলে ঘিরে রাখুক
সকল বাঁধার প্রাচীর ভেঙে আবার আমি আলোয় প্রভাত হবো
মগজের মধ্যকোষে মননের আগুন জ্বেলে শব্দযুদ্ধে
বারুদমূখি বাক্যের অনিয়ন্ত্রিত স্ফুলিঙ্গ হয়ে নিবো পিতৃহত্যার প্রতিশোধ
এখনও টুঙ্গিপাড়া থেকে পাই আগামীর পথ চলার প্রেরণা
ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর বাতিঘর থেকে পাই অনন্ত আলো।
বাহান্নর ভাষা—আন্দোলন থেকে পেয়েছি স্বদেশে প্রেমের পাঠ
একাত্তরের রক্তস্নাত পথ শিখিয়েছে রক্তমশাল হয়ে জ্বলতে
পায়ের তালু তেতে ওঠা তুমুল রৌদ্দুরের হাতে হাত রেখে—
শিখিছি পথ চলতে। ঘর—গৃহস্তালী অবজ্ঞা করে পথের টানে নেমেছি পথে
শত্রু নিধনের অগ্নি আগ্নেগিরি বাসনায় বিনিন্দ্র বাঙ্কারে জেগেছি কতো রাত
অমরাতকেকিছুতেই দিয়ো না প্রশ্নের প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ হয়ে জ্বলে উঠবোই।