প্রতিদিন প্রতিক্ষণ আমার মোহমুক্ত যাযাবর জীবন
খণ্ড—মৃত্যুর মৌন—সঙ্গীতে এ কেমন মুগ্ধ মুখর
ধোয়াটে কুয়াশার শূন্যতায় জ্বলে জ্বালাময়ী বহ্নিশিখা
এখানে জীবনের আভিধানিক অর্থ একটি দীর্ঘতম দুঃস্বপ্ন।

পৃথিবীর পান্থশালায় কেবলই বাড়ে স্তুপাকার ব্যস্ততা
জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখার কখনও মেলেনি অবসর
অনুসন্ধানী দৃষ্টি দিয়ে জীবনকে ছুঁয়ে দেখার বড় সাধ।

জীবন এবং আমি, আমার এবং জীবনের চিরকাল বৈরীতা
অথচ, মূমুর্ষ শয্যায় প্রতিরাতে আমরা ঘুমাই একসাথে
কাল সারারাত জীবনকেই দেখেছি দু’চোখ ভরে
কী এক মৌন দৃষ্টিতে জীবন তাকিয়ে ছিলো
দূর্ভেদ্য দুঃখ দেয়ালের আঁধারাছন্ন ফাটলের গভীরে
আমিও পাথর চোখে তাকিয়ে ছিলাম জীবনের দিকে।

মৌনব্রত পালনে মগ্ন জীবন একাগ্রচিত্তে হঠাৎ করে
উপহাসের স্বরে হো হো হো হেসে উঠেছিলো
ঘাঢ় বাঁকিয়ে জীবনের দিকে একটু ফিরে তাকাতেই
আমার ভেতর থেকে কে যেনো আমাকে ডেকে বললো।

বন্ধ দরজার খিল খুলে দাও অপেক্ষায় মৃত্যুদূত দাঁড়িয়ে
প্রবেশ করুক ঘরে এবং দেহঘরের গভীরতম গহীনে
মৌনতার শীতল স্পর্শে ঘোমট হাওয়ায় ঘেমে উঠেছিল ঘর।

ঠিক তখনই অদৃশ্য বক্তার উদ্দেশ্যে আমি শুধু বললাম
বরং মৃত্যুকে এ যাত্রায় না হয় ফিরে যেতে বলো-
ঈশ্বরের সাথে অত্যন্ত জরুরি কিছু কথা আছে
সম্মুখে আমার পাহাড় সমান কর্মকাণ্ড আজও অসমাপ্ত।

ততক্ষণে তদ্রাদেবীর কোলে একেবারে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম
কষ্ট পাহাড়ের নীলচূড়ায় একাকী নিশ্চুপ জেগেছিল জীবন
অস্পষ্ট স্বরে মিনতি করে জীবনকে বলেছিলাম শোনো-
বঞ্চিত মানুষের রিক্ত উদরে যারা জ্বালায় ক্ষুধার আগুন
সেই অত্যাচারিদের কালোহাত গুটিয়ে দিয়ে হবো ক্ষ্যান্ত
অতপর আমি স্বেচ্ছায় প্রস্থানের পথে বাড়াব এই দু’টি পা।

অনাবিল আনন্দে সুন্দরতম মৃত্যুকেই জানাবো সুস্বাগতম
জীবনের ক্লান্তিটুকু মুছে দিয়ে পান করবো মৃত্যুর অমৃত সুধা।