ঘন ঘন স্বপ্নে আসে জীবনযুদ্ধে হার মানা দিনমজুর বাবা
তাঁর পেছনে দাঁড়ায় উপোসে উপোসে হাডিডসার দুঃখিনী মা
অসময়ে চলে যাওয়া বড় ভাই, বিষক্রিয়ায় খুন হওয়া বড় বোন
ইতিহাস সাক্ষী রেখে আমাকে ডাকে ধীরে ধীরে মুখ খোলে  
ওঠে প্রশ্নের তুমুল ঝড় । ইনিয়েবিনিয়ে জানতে চায় অনেক কিছু
কেমন আছি আমি, কেমন আছে আমার পরিবার, ছেলে দুটো
এগোলো কতদূর, কেমন আছে বাংলাদেশ? তার বড় মেয়ে
সেনোরা বেগম খাবারে বিষ দিয়ে খুন করেছিলো তাকে
তার কুশলাদিও জানতে চায় ।  

মায়ের আগে বিদায় নেয়া বড় ভাই আমাকে টেনে নেয় লোমশ বুকে
জানতে চায় আমার ভারত যাওয়ার খবরাখবর অকেজো পায়ের  
হালহকিকত । কথা ছিলো মাকে বিদায় দিয়ে আমাকে নিয়ে ভারত যাবে  
পরিচিত ডাক্তার সারিয়ে দেবে আমার ব্যামো ।

আমার ভারত যাওয়া হয়নি । ভাইকে ছাড়া আমি একা একা
কি করে ভারত যাই? বিদেশের মাটি আমাকে যদি ফেরত না দেয়
সারাক্ষণ এই অজানা ভয় আমাকে তাড়া করে পাগলা কুত্তার মতো
আমি সারারাত দৌড়ে বেড়াই ঘুমের দেশে ।
  
ঘরে ফেরার সময় কি আমার ঘনিয়ে এলো? আমি জানি না
আমি শুধু জানি আমার প্রাণনাথ ময়ুরপঙ্খী নায়ে চড়ে
আসবে আমার মরুময় জীর্ণ কুটিরে । তাঁর রূপের ছটায় জ্ঞান হারিয়ে
আমি হয়ে যাবো এক অবোধ শিশু সদ্য জন্ম নেয়া এক নিষ্পাপ বালক ।  

তাঁর প্রেমে আমি দিশেহারা মরুভূমির মজনু  
নিশিদিন শুধু তাঁকেই খুঁজি । তবু দেয় না ধরা কেবল পালিয়ে বেড়ায় ।

দোহাই লাগে, তোমরা আমাকে আর ডেকো না, চুপচাপ ফিরে যাও
আপন দেশে । আমার প্রাণনাথ না এলে আমি ঘরে ফিরবো না ।