শরিফ কে আমরা তাড়াতাড়ি ঘরে টেনে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম। তখন বৃদ্ধা মহিলা টি প্রশ্ন করে। বাবারা কি হয়েছে তোমাদের সাথে এতো বিচলিত কেন তোমাদের মন। তখন এমন কারো মনে সাহস নেই যে কাস্তিওলার বর্ণনা দিবে। তখন আমি বললাম দাদিমা আমরা আজকে রাজবাড়ীর উদ্দেশ্যে এইখানে এসেছিলাম। কিন্তু রাস্তায় বড় গাছ পড়ে থাকার কারণে আর যেতে পারি না।ঠিক সে মুহূর্তে একজন দানব আকারের ব্যক্তি হাতে কাস্তি নিয়ে আমাদের দিকে আসতে থাকে। শরিফ তখন বলে উঠে সে ব্যক্তি টি কে হতে পারে? আমরা তখন বলতে গেলাম এই দানব দেখতে মানুষের মতো না। শরিফ হেঁসে তখন বলে আরে বোকার রাজ্যে বসবাস করা লোক রা হয়তোবা সে ডাকাত হতে পারে। এই বন জঙ্গলে তো ডাকাত থাকবেই। আমরা তখন তাকে বলি তুমি দেখতে পাও নি তাই ডাকাত বলছো। তখন বৃদ্ধা মহিলাটি বলে উঠে বাদ দাও বাচা এখন তো আর সে নেই এখানে। তোমরা কি কিছু খাওয়া দাওয়া করেছো। আমরা তখন বলি খেয়েছি কিন্তু সন্ধ্যার সময়। বৃদ্ধা বলে উঠে তাহলে বাচা বসো আমি ভাত নিয়ে আসছি। আমরা তখন অপেক্ষা করা শুরু করে দিলাম। কিছুক্ষণ পর বৃদ্ধা ভাত নিয়ে হাজির হলো। আমরা তখন তাড়াহুড়ো করে খেতে শুরু করলাম। কি মনে করেছে বৃদ্ধা, রাক্ষুসে দল বসে মানুষ চিবিয়ে খাচ্ছে। আমরা খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই যখন ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। এই অবস্থা দেখে বৃদ্ধা একখানা মাদুরা নিয়ে এলো। আর বিছিয়ে দিলো আমরা সবাই পিট ছড়িয়ে শুয়ে পড়লাম।
হঠাৎ আমার মধ্য রাতে কিছু একটি আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে যায়। শব্দ টি যেমন পাথরের সাথে লোহার ঘর্ষণের মতো পরিবেশ। আমি তখন হালকা হালকা পায়ে ভর দিয়ে দেখার জন্য সামনে যেতে লাগলাম আর উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করি। তখন দেখি বৃদ্ধা মহিলাটি হাতে মস্ত বড় দা কে পাথরের সাথে ঘসতে ঘসতে বলতে লাগে, " আজ ঘরে এতো লোক মজা হবে কত হত্যা হা হা হা" এই শুনে আমি শিহরিত অবস্থা তখন পাশে থাকা টেবিলের সাথে ধাক্কা খেয়ে বসি। এই শব্দ শুনে বৃদ্ধা মহিলাটি টের পেয়ে উঠে আর বলে, উঠে গেলি তোরা। এই বলে যখন আমার কাছে আসতে থাকে তখন আমি দৌড় দিয়ে বন্ধু দের ঘুমন্ত অবস্থা থেকে টানতে থাকি। সবাই এক লাফে উঠে বসে। বলে কি সমস্যা এতো রাতে কি হয়েছে। আমি শুধু বলি পড়ে বলবো। এখন শুধু পালা। কি হয়েছে তা তো বলবি। আরে এখন কিছু বলার সময় নেই। আর সে সময় রুমের দরজায় বুড়িটি দা দিয়ে কুপ দিতে লাগলো। তখন আমি তাড়াহুড়ো মধ্যে বলতে থাকি জানালা দিয়ে পালা। এক এক করে সবাই জানালা দিয়ে বের হতে লাগলাম। এমন সময় বুড়িটি দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করলো। তখন ও আমি ভেতরে আমি তাড়াতাড়ি জানালা দিয়ে বেড়িয়ে পরলাম। আর পালাতে লাগলাম। আমরা তখন দৌড়ানোর সময় পিছনে দিকে তাকিয়ে দেখি বৃদ্ধা মহিলাটি হাতে দা নিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে দরজার সামনে। আমরা কোনোভাবে সেখান থেকে পালিয়ে এসে রাস্তায় উঠেছি। আর বলতে থাকি একে অপরকে কেন সে এমন করলো এতো যত্ন করে খাওয়ালো আশ্রয় দিল তারপর এমন কেন করলো। তখন আমরা সবাই ভয়ে আতঙ্কে কাঁপতে লাগলাম। এখন ফজরের আজান দিতে ত্রিশ মিনিটের মতো আছে। এই বলে আমরা আশেপাশে রাস্তা চিনবার চেষ্টা করি। কিন্তু কোনোভাবেই রাস্তা মিল পাই না। কিন্তু সামনে সোজাসুজি একটা রাস্তা গিয়েছে। আমরা সবাই একে অপরের হাত ধরে সামনে হাঁটতে শুরু করলাম। হাঁটতে হাঁটতে একটি পুকুরের দেখা পেলাম তার বুকের উপরে চাঁদের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। ঠিক সামনে দেখতে পাই মস্ত বড় একখানা দালান। দালানের সামনে গিয়ে জোরে জোরে চিৎকার করতে শুরু করলাম। তখন কিছু সময় পর একজন লোক হাতে লাঠি আর হারিকেন নিয়ে বড় দরজা খুলে বলে কে আপনারা এই গভীর রাতে তাও রাজবাড়ীতে। আমরা যখন রাজবাড়ীর নাম শুনি তখন খুশিতে কেঁদে দেওয়ার মতো। আমি বলে উঠি আমরা তারা যারা আজকে এখানে আসার কথা ছিল। এই তো সে শরিফ এখানে আজকে এখানে আসবার কথা ছিল। তখন কেয়ারটেকার বলে উঠে আরে আপনারা এতো রাতে কেন সন্ধ্যায় আসার কথা ছিল। আপনারা না আসায় আমি বিচলিত হয়ে গিয়েছিলাম। আচ্ছা আপনারা প্রবেশ করুন। আমরা আর তাকে কিছু জানাই নি। আমাদের কামরা দেখিয়ে দিয়ে কেয়ারটেকার চলে গেলো।
সকাল হলো পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজে মুখরিত করছে সবদিক। কেয়ারটেকার এসে ডাক দিলো সাহেব রা দরজা খুলুন।এই বলে আমরা দরজা খুলে দেখি কেয়ারটেকার হাতে নাস্তার থালা। আমরা সবাই নাস্তা করে রাজবাড়ী ঘুরে দেখার সিদ্ধান্ত নিলাম। রুমের পর রুম সব রুমে তালা মারা। তখন কেয়ারটেকার ভাই কে প্রশ্ন করি এই সব রুমে তালা কেন। বলে এই সব রুমে মুল্যবান জিনিস রয়েছে আর এখানে তো কেউ থাকে না তাই একটি রুম খুলে রাখি। ওহ। আমরা রাজবাড়ীর আশেপাশে ঘুরতে শুরু করলাম। তখন আমরা দু জন দু জন করে আলাদা হয়ে ঘুরতে লাগি। এমন সময় একদিক থেকে আর্তনাদের আওয়াজ ভেসে আসে। আমরা তখন সে দিকে গিয়ে দেখি হামিদ রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে আর পাশে নাজিরা হাতে চুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর আতঙ্কর মতো হামিদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমরা তখন দৌড়ে গিয়ে হামিদের শিরা পরীক্ষা করে দেখি হামিদ আর নেই। তখন নাজিরা থেকে জিজ্ঞেস করে কি করলি এটা তুই। কোনো কথা সে বলছে না শুধু বড় বড় চোখ করে সামনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আর শুধু বলছে আমি কিছু করি নি ,আমি কিছু করি নি। এই বলে নাজিরা বেহুঁশ হয়ে পড়ে যায়। আমরা তখন অবাক হয়ে এই ঘটনার সাক্ষী হয়ে রয়েছি। আমরা সকলে চিন্তিত হামিদের পরিবার কে কি বলবো। শরিফ বলতে লাগে নাজিরা তুই খুনি। আমি তখন বলি ও কেন খুন করবে। কোনো কিছু একটি রহস্য রয়েছে। এই বলে জানালার পাশ থেকে লাফ দিয়ে একজন দৌড়ে চলে যায় আমরা তাকিয়ে থাকি। কে কে ওখানে কে।
(পর্ব ৫ আসবে....)