শরৎ বাবু'র মত নিষিদ্ধ পল্লিতে ঘুরে ঘুরে
পৃথিবীর বহুরুপ অবলোকন করেছি
যাদের কাছে পৃথিবীর পুরুষেরা সুখ খুঁজতে যায়
অথচ এরাও না খেয়ে থাকে অনেক রাত্রি
এরা নিজের বিষন্নতা লুকিয়ে রেখে
নিজেকে তিল তিল করে বিলিয়ে দেয়-
                    অন্যের সুখের আরাধনায়।

এরা প্রতিদিন সাঁজে-
তাদের সাঁজ দেখার নির্দিষ্ট কোন মানুষ নেই,
একটি লিপিষ্টিক আর টেলকল পাউডারে
প্রতিদিন সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে যৌবন,
এখানে প্রতিদিন ভোর হয় সন্ধ্যায়
নিশি যত গভীর হয়-
জলসা জমে ওঠে যেন ঠিক মৌ বন।

সংসার বৈরাগী পুরুষ'রাও এখানে আসে
অনেক মহা পুরুষ অতৃপ্ত আত্মা নিয়ে আসে
সব কষ্ট আর হতাশার বিসর্জন দিয়ে ওরা চলে যায়
এই পল্লিতে এদের জন্য কেউ অপেক্ষা করেনা
এদের কেউ বলেনা আজ নীল শাড়ি পড়ে থা'কো
অথচ ওরা প্রতিদিন বদলায় নানা'ন সাঁজ
এই সাঁজের ভাজে ভাজে-
কত কষ্ট, কত অভিমান লুকিয়ে আছে,
এই কষ্টের পান্ডুলিপি কোনদিন কেউ পড়ে দেখেনি।

এই পৃথিবীর মাঝেও ভিন্ন পৃথিবী আছে
একবার মদ্যপ হয়ে পৃথিবী'কে দেখেছি
দেখেছি কত নিখুঁতভাবে ধর্ষিত হচ্ছে আমাদের বিবেক,
চার দেয়ালে বন্দী পাখির গোঙানো চিৎকার শুনে বুঝেছি
মানুষ কিভাবে পয়সা উসুল করে।

কেউ বেঁচে থাকার জন্য-
নিজ দেহ মন্দিরকে ক্ষত-বিক্ষত করে,
কেউ আসে জলসায় সোনার পালঙ্কে চড়ে।
ছিনেমা শেষ হলে থিয়েটারের পর্দায়
কারো আর দৃষ্টি থাকেনা,
কী নির্মম ভাবে কেটে যাচ্ছে এখানকার সময়
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে।

পৃথিবী কতবার সংস্কার হয়েছে
পুনর্বাসিত হয়েছে কত অজানা প্রান্তর,
সতীদাহ বিধবা'রাও সংসার পেয়েছে।
আজন্ম পাপ নিয়ে যারা-
নিজেকে আজ তিলে তিলে নিঃশেষ করছে
অথচ ওরাও একদিন কারো কোলে, রাজ কন্যা হয়ে এসেছিল।

পৃথিবীর মমতা হতে বিচ্ছিন্ন এই কোলাহলে
এখানে আজ মানুষ থাকেনা,
এখানে নিষিদ্ধ প্রাণ গুলো বেঁচে থাকে
সভ্যতার অন্তরালে অসভ্যতাকে সেবা দানের জন্য।

নিতিশ বাবু,তালুকদার সাহেব,
জমিদার বংশের রাজ পুত্ররাও এখানে আসে,
ওরা নিষিদ্ধ হয়না
বরেণ্য সমাজ এদেরকে নিষিদ্ধ করার শক্তি রাখেনা।

এই নিষিদ্ধ নগরীতে
এদেরকে কেউ স্বপ্ন দেখায় না,
স্বপ্নহীন মানুষ কিভাবে বেঁচে থাকে, বেঁচে থাকতে হয়,
এই নির্মম গ্রহের মানুষ'রাই জানে
স্বজনহীন একাকিত্ম  কত হাহাকার আর আর্তনাদে-
                         ভরে থাকে জীবন পঞ্জিকা।

এ একটিই গ্রহ
এখানে এতো কষ্ট, এতো হাহাকার, এতো যুদ্ধ
শুধু জীবনকে মানুষ ভালবাসে বলেই বেঁচে থাকে।

অক্টোবর ২০২২ ইং