না না বসে পড়িস্ না , বসে পড়বি কেন ?
কত কাজ ; মিটিং ,মিছিল , ময়দান,
আর তাছাড়া ওসব তো আছেই,
বরং ঘুরতে থাক চৌমাথা এঁদো গলি,
অন্ততঃ যতক্ষণ পর্যন্ত না গণেশ উল্টাচ্ছি ,
জানিস্ না !
ছেচল্লিশের কোলকাতায় চিত্রশিল্পীদের ভীড় ছিলো,
আমরাও তো শিল্পী নাকি ;
পিকাসোর চেয়ে কত দামী দামী ছবি
এ মাথার তুলি দিয়ে এঁকেছি ; - দেখিস নি ?
না না বসে পড়িস না , বসে পড়বি কেন ?
আর যদি একান্ত বসতেই হয় ;
ফুটপাতে বস্ না ,
ভীড়ের মধ্যেই তোদের কার কি রং ,
ঠিক চিনে নেবো ,
এ শিল্পের চোখে ভরসা রাখ ;
যেতে আসতে দেখা হবে ;
কখনো সখনো ডাকবি, পাশে বসাবি, চা খাওয়াবি,
তবে দেখিস-
যখন তখন সবার মাঝে ডাকিস না যেন আবার;
সব সময় তো রং নিয়ে খেলা যায় না ;
প্রতিদিন তো হোলি হয় না ,
আর তাছাড়া- পোশাকটা সাদা রাখা চাই,
জানি- তোদের রঙে-ই রং পাল্টায় ব্যালট বক্স,
তোদের রঙে-ই ক্যানভাসে গড়ে উঠে ছবি ,
কিন্তু শুধু কি রঙে-ই ?
তার জন্য চোখ চাই - শিল্পীর চোখ ,
তুলি চাই - মাথার তুলি ,
তাছাড়া রঙের দাম তো পাচ্ছিস- পাচ্ছিস্ না ?
রকে বসে পাচ্ছিস্ না ?
তোলা তুলতে গিয়ে পাচ্ছিস না ?
জবর দখল নিতে গিয়ে ,
ক্লাব ঘর পাকা করতে গিয়ে ,
সিন্ডিকেট চালাতে গিয়ে পাচ্ছিস না ?
থানায় গিয়ে পাচ্ছিস না ?
মোড়ে দাঁড়িয়ে; পাচ্ছিস তো নাকি!
তবে ,
না না বসে পড়িস না, বসে পড়বি কেন ?
বরং ঘুরতে থাকে চৌমাথা থেকে এঁদো গলি,
আর তাছাড়া -
এ ভাবে বসে গেলেই রং হয়ে যাবে ফিকে ;
ফিকে রঙে ছবি হয় না স্পষ্ট , জানিস তো -
এ শিল্পের চোখে রং চেনে ; মানুষ নয় ।
পাড়ায় যাত্রার সখে রং মেখেছি মুখে ,
কিম্বা কলেজের নবীন বরণে
শিল্পী তুমিই যে রঙের ফোটা লাগিয়েছো কপালে ;
সেই রঙেই সঙ্ সেজেছি জিরাফের ;
সেই রঙেই রং পাল্টায় ব্যালট বক্স ;
সেই রঙেই গড়ে ওঠে শিল্পী তোমার ছবি ।
ঘর থেকে রক ,
রক থেকে মিটিং-মিছিল-ময়দান ,
জেনে গেছি এঁকে বেঁকে গেছে কত পথ ;
চৌমাথা থেকে এঁদো গলি বারুদের গন্ধে অন্ধকার,
এঁদো গলি পথে বারুদের গন্ধে মুর্চ্ছিত হ'লে ;
শিল্পী তোমার কাছে আমার রং হয়ে যায় বিবর্ণ ,
হসপিটাল যায় সরে ;
তবু এ জলন্ত জিরাফ আমি -
কোন ক্রমে হসপিটালে পৌঁছালে ;
মর্গ চলে আসে পাশে ,
রং লাল হলে নীল কিম্বা নীল হলে লাল-
প্রেসক্রিপশনের বুলেট অনায়াসে পৌঁছে দেয় মর্গে,
তারপর ,
তারপর মর্গে প'চে দুর্গন্ধ ছড়ালে ;
খরচ বাঁচাতে বেওয়ারিশ লাশ-
ডোম দিয়ে ফেলে দাও নদী কিংবা ভাগারে ,
এ জলন্ত জিরাফ আমি-
এ সব জেনে গেছি আজ বহুদিন,
জেনে গেছি-
ঘর থেকে রক,
রক থেকে মিটিং-মিছিল-ময়দান,
চৌমাথা থেকে এঁদো গলি,
হসপিটাল থেকে মর্গের দূরত্ব কত দূর,
তাই আজ ব'সে গেছি শেষ প্রার্থনায়;
হে অন্তর্যামী-
তোমার নরকের দ্বার খুলে দাও,
আমার বিশ্বাস - এই রং মেখে সঙ্ সেজে
ঘর থেকে মর্গের জীবনের চেয়ে
তোমার নরক হবে ঢের বেশি ভালো .......