বাড়ীর উপরে উঠিয়াছে বাড়ী

          ছোট-বড়, আঁকাবাঁকা,

ধূলিতে ধোঁয়াতে ঢাকা পড়ে গেছে

          সুবাহ্‌ বাংলার ঢাকা।

গলির ভেতরে তস্য গলি

          কোথা নাহি তার ফাঁকা,

ভরা বরষার এঁদো জলে তার

          অঙ্গ পড়েছে ঢাকা।

এরই মাঝে হায় হাঁকিছে শকট

          বিকট শব্দ তুলি,

তারও চেয়ে জোরে বাজিছে মাইক

          আহার-নিদ্রা ভুলি।

টুংটাং করি রিকসা ছুটিছে

          গতির ঝটিকা তুলি,

সরু পথ ধরি ধীরে ধীরে ধায়

          ঠেলা আর ভ্যানগুলি।

দোকানের পরে দোকান বসিছে

          কোথাও নেইকো খালি,

মানুষের মাথা খাইছে মানুষ

          আকাশে তারের জালি।

ভবনের গায়ে ভবন আসিয়া

          আকাশ করিছে ভাগ,

আল্লাহ্‌র দেওয়া আলো-হাওয়া-জল

          কিনিতে পকেট ফাঁক।

সকালে হঠাৎ ভাঙে নাকো ঘুম

          শুনিয়া পাখীর ডাক,

সরু গলি জুড়ি শোরগোল তোলে

          হকারের হাঁকডাক।

একটি পশলা বৃষ্টি হইলে

          চারিদিকে থইথই,

এমনও গহন শহরের বুকে

          নৌকা পাইবো কই!

ফলে ও ফসলে, মিঠা আর দুধে

          মিশিতেছে কেমিকেল,

অসুখ সারাতে ডাক্তার কবিরাজ

          সব করে আজ ফেল।

হাটে-মাঠে-ঘাটে সবখানে চলে

          চাঁদাবাজি বেশুমার,

নেতারা-নেতারা লুটিছে হালুয়া

          জনগণ খায় মার।

ঘুষ ছাড়া হায় কাজ করা দায়

          এমনও শহর আমার,

সোজা পথ ধরি হেঁটে যাবে ভাই

          সাধ্য আছে বা কার!

এদিকে-সেদিকে খোঁড়াখুঁড়ি চলে

          দেখেও দেখে না কেউ,

নগর পিতারা ঘুমিয়ে পড়েছে

          জাগিয়ে তোলে না কেউ।

যার যাহা খুশী করিছে সবাই

          জেনেও মানে না আইন,

মূত্রের স্রোতে ভেসেছে সড়ক

          কিছু ভুল নাই ফাইন।

বাইক হাঁকিয়া সজোরে ছুটিছে        

          ছোকড়া-ছেলের দল,

মরণে তাহারা নাহি পায় ভয়

          বক্ষে আজে যে বল।

ইচ্ছা করিলে দিনে কি রাতে

          সজোরে বাজায় মাইক,

তাতে কিছু ভাই হয় নাকো ভুল

          এ যেন চতুর্থ রাইখ।

ম্যানহোল থেকে ময়লা তুলিয়া

          আনিয়া করিছে স্তূপ,

পানের পিকেতে ঢাকা পড়ে গেছে

          সুবাহ্‌ বাংলার রূপ।

রাস্তা ধরিয়া হেঁটে যাওয়া দায়

          চারিদিক থুথুময়,

এখানে আসিয়া থাকিছে সকলে

          এ শহর কারো নয়।