শতবর্ষ প্রিয়তম পদ চিহ্ন দিয়ে,
নিমিষে অম্বর জ্যেতি গিয়েছে মিলিয়ে,
হৃদয়ের বাসভূমে।আজ তুমি ছাড়া,
সব বাধা ছিন্ন করে একা স্বর্গে ফেরা।
রাখালের বাঁশি শুনে চঞ্চল বালিকা,
গোপনে পালিয়ে আসে ঘর হতে একা।
রাখে পূজার অর্চনা নিজের হৃদয়,
মিলনের মোহ নিয়ে নিত্য পড়ে রয়।
সহসা দুচোখে দেখে শূন্য চারিধার,
সবকিছু রেখে গেছে দেবতা তাহার
হারিয়ে।বিরহ হলো সঙ্গী জীবনের,
দিনরাত ঝরে অশ্রু তার নয়নের।
সেদিন স্বর্গের দ্বারে তোমার প্রণতি,
রেখেছিল অশ্রুমালা দেবতার প্রতি।
সে মালা পরিয়ে করে দিলে স্বর্গহারা,
সেই ব্যথা নিয়ে আজ হলো স্বর্গে ফেরা।
হৃদয়ের অভিমান আজ মন্দীভূত,
দুখিনীর অভিযোগ নেই আর তত।
পরাজিত তবু জয়ী তুমি নৈকষেয়,
আজ শ্মশান এ বুকে অগ্নি জ্বালো প্রিয়।
জানি আমার বিদায়ে তুমি উদাসীন,
তোমার মুখটি তাই হয়নি মলিন।
এত ভালোবেসে শেষে এত অবহেলা,
কাছে ডেকে নিয়ে আজ অগ্নি মাঝে ফেলা।
কোথায় লুকিয়ে রেখে বহু বর্ষরাত,
কেবলই অন্ধকারে কামিছ প্রভাত।
দিবসে হিসেব শেষে যত হলো ঋণ,
আমাকে বিদায় দিয়ে শুধো চিরদিন।
অশ্রুসিক্ত বালুতটে ভাঙা-গড়া খেলা,
নিয়ত মূরতি গড়ে কেটে যেত বেলা।
সে মূরতি মনে এঁকে বন্ধ দ্বারাবতী,
স্বর্গে ফিরে যেতে আমি সাথে নিই স্মৃতি।
যতটা মাধুরী দিয়ে গড়েছ প্রতিমা,
তাঁর মাঝে খুঁজেছিলে জগতের সীমা।
দেবতার বীণা হাতে চিরকাল ধরে,
প্রাণ দিতে সুর তোলো আমার শিয়রে।
আজ পথে পথে নেই মন্দার মালিকা,
অশান্ত হৃদয়ে নেই প্রণয়ের শিখা।
সোনার শিকলে বাঁধা প্রণতির হাত,
নিমেষে নিমেষে করে তরঙ্গ আঘাত।
দীপ জ্বেলে দীপ নিভে আঁধার-আলোতে,
বিনিদ্র রজনী যত কেটেছে পূজাতে।
প্রভাতে সে দীপ শিখা জ্বলেনি আলোয়,
কেটেছে পূজায় শুধু হয়নি প্রণয়।
আজ স্বর্গ যত দূরে তুমি তত দূরে
মনে হয়,এত ব্যবধান টেনে করে
গেলে ধন্য।তবু যদি কিছু সাধ মেটে
তোমার মনের,তাই হোক সখা তবে।
নিয়ত বক্ষ বিদরে নিত্য মূর্তিমান,
আমারে করেছ গড়ে চিত্তের সমান।
সাজিয়েছ অলঙ্কারে করেছ মোহিনী,
পিনাকের বীণা করে বাজিয়েছ ধ্বনি।
কোন এক অভিসারে করে নিমন্ত্রণ,
দিয়েছিলে মুগ্ধ করা ললাট চুম্বন।
তারপর দুজনায় সুখ শিহরণে,
কাটিয়েছি নিদ্রাহীন অজানা পুলিনে।
হে পৃথিবীর দেবতা,স্বর্গের অতিথি
হয়ে আমার দুয়ারে এসো এ মিনতি
করে যাই।দেখা দেবে তোমার ঈশ্বর,
যাহার জন্য সাধনা জন্ম-জন্মান্তর।
ওই বেজে উঠে সুর ওই বহুদূরে,
দাও অনুমতি তুমি এই দুখিনীরে
চিরবিদায়ের।চলে যাই প্রাণমিতা,
নিজের আলয়ে ফেরে স্বর্গের দুহিতা।
৩১/০১/২০০৭