স্কুলের গাড়ি থামিয়ে দিল হঠাৎ নিজের পা;
আমি নামলাম, নামলাম
এই পুরু পৃথিবীর বুকে ---
কত মহাজাগতিক আশ্চর্যের মাঝে
লুকিয়ে ছিলাম আমি,
বুঝলাম আজ প্রথম !
আগে কেন ভাবিনি ?
পিরিয়ড শেষের বেল, তাগিদের তাগাদা ---
কি অন্ধ করেছিল আমায় ?
শুনতে দেয়নি পৃথিবীর চিৎকার,
মানুষের কান্না,
বুঝতে দেয়নি আলোকীর এত তাপ,
বাইরেটা এত গরম !
স্কুলের যত বেঞ্চ,
কাঠের খোঁড়া পা ---
খঞ্জ করেছিল আমায়,
বসিয়ে রেখেছিল দুপায়ের ফাঁকে,
হাঁটতে দেয়নি, চলতে দেয়নি ---
ফিরতে দেয়নি চুনাপাথরের পরে,
যেতে দেয়নি রংচটা ওই
কালো ফলকের পিছে !
সে তো বলেনি,
পৃথিবীটা এত পিছল, এত ধারালো ---
চারিদিকে শুধু কাঁটাতার আর মেঘ;
সে তো বলেনি,
আমার পৃথিবীর এত পৌরুষ !
বলেছিল, সুস্নিগ্ধা এক নারী
চারিদিকে ছড়িয়ে যার
অজস্র কেশদাম !
কই, সে সব তো নেই ---
পৃথিবী নাকি স্বর্গরাজ্য !
এ তো মূর্খের শ্মশান ---
মূর্তির উপন্যাস।
অলকানন্দা - অমরাবতী - নন্দন -পারিজাত,
কোথাও দেখি না ওদের,
শুনি না তো কোনো গান্ধর্বসংগীত
অপ্সরীনৃত্য;
স্কুলের বিদ্যে কি তবে মিথ্যে ?
কোথায় আঁতুড়ঘর, এ যে আতুরাশ্রম আমার ---
চারিদিকে শুধু দাহনের শব্দ,
কাতানের কারবালা;
সে বলেনি আমায় ---
পৃথিবী যে এত দুর্গন্ধী !
কাচকুপী খুলে দামি দামি যত Perfume
মাখতাম না তবে গায়ে ---
ঢালতাম না অত ঢলতা সুখের সাজ
এই পোড়া মেদিনীর মুখে;
সে বলেনি আমায়
আমার পৃথিবী উলঙ্গিনী ---
সভ্যতার লেশমাত্র নেই তার ত্বকে,
পরতাম না তবে
রামধনু রঙ যত Uniform ---
নিছক শ্লীলতায়
এই ছেঁড়া পৃথিবীর বুকে !
স্কুলের গাড়ি থামিয়ে দিল হঠাৎ নিজের পা;
আমি নামলাম, নামলাম একা
এই ঊর্বস্থিহীন পায়ে --- দেখলাম শুধু ধু ধু;
প্রয়োজন তাকে যখন সবথেকে বেশি
সে ছেড়ে দিল আমার হাত,
বুঝলাম অত আয়োজন ---
মোটা মোটা বইখাতা,
পেনসিল-ইরেজার ---
সব অব্যয় !
থিওফ্রেস্টাস, অ্যারিস্টটল, গ্যালিলিওর বাণী ---
মোটা মলাটের নির্বাক হিজিবিজি,
নিছক আলিম্পন ---
স্থূলতার স্তূপাকার !
পড়তাম না তবে মোটা মোটা অত বই,
করতাম না আয়োজন ---
ভাবতাম পুশিদা,
কেন অপ্রতিভ করল সে আমায়
বিশ্বের পরিখায়,
এত পরীক্ষার পরও
কেন বলল না ---
আমি ছাড়া সবাই নিরক্ষর !
--- ১০/০৬/২০২১
ক্যানিং
○
৹