ডাকপিয়নের ঘর ভরেছে,
হাজার চিঠির বোঝা,
নিত্য কত গল্প আসে—
কারো হাসি, কারো চোখের কোণে জল।

একদিন তার ভুল হলো,
একটা চিঠি হারিয়ে গেল—
চিঠির ভাঁজে ছিল কারো বুকের ক্ষত,
কারো আশা, কারো নীরব অপেক্ষার ছোঁয়া।

সেই চিঠির খামে লেখা ছিল—
“তোমার প্রতি, আমার শেষ নিবেদন,"
একজন মানুষ হয়তো রাত জাগে,
প্রতীক্ষায় চেয়ে থাকে, কখন আসবে সে দূত।

চিঠিটা হারিয়ে গেছে,
কিন্তু তার ভেতরে ছিল—
অনেক দিনের না বলা কথা,
এক বুক প্রেম, ভাঙা প্রতিশ্রুতি।

প্রিয়তমার কাঁপা হাতে লেখা,
“তোমায় শুধু শেষ বারের মতো দেখতে চাই।”
কিন্তু সে চিঠি পৌঁছালো না,
অপেক্ষমাণ জানলো না, কী ছিল তার প্রার্থনায়।

প্রতিদিন দরজার তক্তপোশে বসে থাকে,
দূরদৃষ্টে একটুখানি শব্দের প্রতীক্ষায়।
ডাকপিয়ন আসবে, একটা খাম নিয়ে,
যা বদলে দেবে তার পুরো পৃথিবী।

কিন্তু চিঠিটা হারিয়েছে—
খুঁজে পায়নি ডাকপিয়ন।
আর সেই মানুষটা জানে না,
কখনো আসবে কি তার প্রতীক্ষার চিহ্ন।

না পাওয়া চিঠির অভাবে,
কেউ হয়তো ভাবছে আজও,
“সে কি আমায় ভুলে গেছে?”
কেউ বুকের মধ্যে বেঁধেছে এক
বিশাল শূন্যতা, মাঝে একগুচ্ছ আশা।

একটা চিঠি,
যা পৌঁছাতে পারলে
দুটি জীবন হতো দীপ্তিময়—
এখন সেই চিঠির অভাবে,
নিঃশ্বাসে বাধা দেয় অদৃশ্য প্রাচীর।

ডাকপিয়নও জানে না,
তার একটুখানি ভুলের ফলে
থমকে গেছে না বলা অব্যক্ত অনুভূতি,
অন্যায়েই থেমে গেছে হৃদস্পন্দন।

চিঠিটা আর ফিরবে না,
প্রতীক্ষমাণের চোখ ভিজে উঠল।
হারানো চিঠির স্মৃতিতে
সে ডুবে থাকে একা, নির্বাক নিভৃতে।

এখনও প্রতিটি সন্ধ্যায়,
একটি চিঠির অপেক্ষায় জানালাটা খোলা,
তবে যে চিঠি হারিয়ে গেছে
তা ফিরবে না আর কোনোদিন—
হারিয়ে গেছে কিছু স্বপ্নের মুহূর্ত,
হারিয়ে গেছে দু’জনের মিলনের পথ।

একটি চিঠি এনে দিতে পারত,
এক নিদারুণ প্রেমের সুসমাপ্তি।
যেখানে শব্দেরা ভাঙত না আর,
বেদনার ভারে কাঁপত না হৃদয়।

চিঠির প্রতিটি শব্দে হয়তো জ্বলত,
ম্লান হয়ে আসা স্মৃতির শেষ প্রদীপ।
নিঃশব্দে মুছে যেত ব্যথার প্রতিধ্বনি,
সেই পথে ফেলে আসা সব ধুলো।

সেই চিঠি হয়ে উঠত নীরব চিহ্ন,
যেখানে ভালোবাসা আর কাঁদত না,
শেষের কালি আঁকত একটি গল্প,
কিন্তু চিঠিটা হারিয়ে গেছে।